পাইলস থেকে মুক্তি পেতে চান? কিছু নিয়ম মেনে চলুন!

মানুষের মলদ্বারের একটি তীব্র বেদনাদায়ক এবং জটিল রোগ পাইলস। রোগটির নাম হয়তোবা আমরা কমবেশি সবাই শুনে থাকবেন। সাধারণত মলদ্বারের বাইরে, ভেতরে অথবা চারপাশে এক বা একাধিক গোলাকার সূচালো গুটির মত কিছু দেখা গেলে পাইলস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এগুলোকে বলা হয় বলি বা গেজ। পায়খানা করার সময় এই বলি বা গেজ এর ভেতর থেকে কারো স্বল্প পরিমাণে অথবা কারো প্রচুর রক্ত বের হয়।

পাইলস কেন হয়?

সাধারণত দীর্ঘ সময় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে পাইলস দেখা যায় । এছাড়াও মলদ্বারে ক্যান্সার, নিয়মিত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা, দীর্ঘ মেয়াদী কাশির সমস্যা, প্রস্রাবে বাধা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে একজন ব্যক্তি পাইলস রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

এছাড়াও জন্মগতভাবে দুর্বল ধমনী, অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে মলত্যাগ, ভারী বস্তু বহন করা অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে পাইলস এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

খুবই যন্ত্রণাদায়ক এই রোগে একজন মানুষের রক্তশূন্যতা দেখা যেতে পারে। কারণ পাইলস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে ধীরে ধীরে রক্তপাত হতে হতে একসময় দেহে রক্তশূন্যতা দেখা যায়।

পাইলস রোগের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে:

১.সাধারণত মলত্যাগের সময় ব্যথাহীন রক্তপাত হয়।

২.চুলকানি ও অস্বস্তিকর জ্বালাপোড়া শুরু হয়।

৩. পায়ুপথের বাইরের দিকে ফুলে যায়।

৪.পায়খানা করার সময় অত্যধিক পরিমাণে রক্ত যেতে পারে। টাটানো অনুভব হয়।

৫.কাটা বিদ্ধ অনুভব হয়।

৬.বক্ষদেশ ও মলদ্বারে ভার বোধ হয়।

কোন ব্যাক্তি একবার পাইলস রোগে আক্রান্ত হলে সেই রোগ নিরাময় করা বেশ কষ্টসাধ্য। অনেকেই হোমিওপ্যাথি, এলোপ্যাথি সহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা নিয়ে থাকে। তবে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। সুতরাং পাইলস রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই ভালো। সে কারণে শুরু থেকেই এই রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে!

পাইলস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের করণীয়:

১.নিয়মিত পায়খানা করতে হবে।

২. পেটে হজম হতে চায় না এমন খাদ্য অবশ্যই বর্জন করতে হবে।

৩. চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিয়মিত বিশ্রাম নিতে হবে।

৪. অবশ্যই কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হওয়ার কারণ গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

৫.দীর্ঘমেয়াদী কাশির সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

৬. দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার অভ্যাস অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে৷

৭.পরিশ্রমের অভ্যাস থাকা ভালো। তবে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবেনা।

৮. তরল ও সহজপাচ্য খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

৯. অতিরিক্ত মসলাজাতীয় খাবার অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

১০.নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস থাকতে হবে।

তবে একবার যদি পাইলস রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে সেই রোগ থেকে নিরাময় পেতে হলে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কিছু খাবার যোগ করতে পারেন:

১.বেদানা : বেদানার দানা জলে ভাল করে ফোটান। অতঃপর সেই পানি ক্রমাগত ফুটিয়ে যান এবং একপর্যায়ে দানার রং বদলালে যে জলে আপনি বেদনা ফুটিয়েছেন সেই জল ছেকে রেখে দিন। এবং দিনে দুইবার করে এই জল পান করুন।

২.ডুমুর : ডুমুর সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। অতঃপর পরের দিন সকালে এবং বিকালে সেই পানি পান করুন।

৩.কাঁচা পেঁয়াজ :কাঁচা পেঁয়াজ অন্ত্রের যন্ত্রণা প্রশমিত করতে সাহায্য করে।কাজেই পাইলসের কারণে মলদ্বার থেকে যে রক্ত পড়ার সমস্যা হয় সেটি অনেকাংশে লাঘব করতে পারে কাঁচা পেঁয়াজ।

৪.কাঁচা হলুদ :কাঁচা হলুদ জলে বেশ ভাল করে ফোটান। অতঃপর জল নিয়মিত পান করুন। তাহলে পাইলসের সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।

৫.কলা : কোষ্ঠকাঠিন্যের এক ধরনের অব্যর্থ ওষুধ হচ্ছে কলা। বিনা কষ্টে মলত্যাগ করতে হলে প্রতিদিন দুটি করে কলা খাওয়া আবশ্যক। তবে আপনি যদি কলা সয়াবিনের দুধ দিয়ে খেতে পারেন তাহলে তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

৬.ডাল :খেসারির ডাল, মাসকলাই এর ডাল ইত্যাদি ডাল জাতীয় খাদ্য পাইলসের সমস্যা নিরাময়ে যথেষ্ট সহায়ক। সুতরাং দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ডালজাতীয় খাবার রাখতে পারেন।

বিশেষ সতর্কবার্তা : পাইলসের সমস্যা দেখা দিলে হাতুড়ে চিকিৎসা না নেওয়াটাই ভালো। অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

Similar Posts