গুগলকে সবচেয়ে বেশী জিজ্ঞেস করা ১০টি মজার প্রশ্ন
মজার প্রশ্ন করে বিজ্ঞজনদের বাহবা নেয়া অথবা বেকায়দায় ফেলে দেয়া, এরকম ঘটনার সাথে নিশ্চয় আপনি অপরিচিত নন। কৌতূহলবশত হোক আর উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই হোক, প্রশ্ন করে বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে যেমন বাহবা পেয়েছেন, তেমনি ধমক খেয়ে দৌড়েও পালাতে হয়েছে।
ইন্টারনেটের বদৌলতে সেই বিজ্ঞজনদের জায়গাটা দখল করে নিয়েছে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন- গুগল। গুগলের ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই। যে প্রশ্নটি আপনি আপনার খুব কাছের বন্ধুটিকেও জিজ্ঞেস করতে পারেন না, সেটাও খুব সহজেই জিজ্ঞেস করতে পারেন গুগলকে। এমনকি, গুগলের জ্ঞানের পরিধি যাচাইয়ের জন্য অনেকেই অদ্ভূত ও মজার মজার সব প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে থাকেন গুগলের সার্চ বক্সে। চলুন, দেখে নেয়া যাক সেই মজার প্রশ্নাবলির কিছু অংশ।
১/ আমার চাবি কোথায়? (৫২ কোটি)
প্রশ্ন দেখে অবশ্যই বুঝতে পারছেন প্রশ্নকর্তাবৃন্দের কী রকম অগাধ আস্থা গুগলের উপর! চাবি তারা যেখানেই রাখুক না কেন, গুগল-ই সেটা বলে দিতে পারবে। এরকমের প্রশ্নের দুই ধরনের কারণ থাকতে পারে।
এক. তাদের কেউ হয়ত ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন। কোথাও কোন কিছু রেখে প্রায়ই ভুলে যান। তাই প্রয়োজনের সময় দ্রুত খুঁজে বের করতে পারেন না। এ অবস্থায় গুগল-ই একমাত্র ভরসা।
দুই. কৌতূহল বশত বা নিতান্ত মজার জন্য। নির্দিষ্ট একটা জায়গায় রেখে গুগলকে জিজ্ঞেস করে দেখা যে, গুগল ঠিক ঠিক বলতে পারে কিনা!
এই দুইয়ের যে কারণেই তারা জিজ্ঞেস করে থাকুন না কেন, গুগল তাদের প্রত্যেকের ডাটা নিজের মস্তিষ্কে জমা করে রেখে দিয়েছে।
২/ আমি কি আমার বিড়ালটা খেয়ে ফেলতে পারি? (৭৩ কোটি)
হাস্যকর বা কিম্ভূতকিমাকার! যা-ই ভাবুন না কেন, ইন্টারনেট জুড়ে ৭৩ কোটি বার সার্চ হয়েছে এই প্রশ্নটির। তাছাড়া ছেলেবেলার কথা ভাবলে ব্যাপারটা আর অদ্ভূত লাগবে না। কারণ, সে সময় আরো বেশী অখাদ্য-কুখাদ্য যে খাওয়া হয়নি- তা বলতে পারবেন না। শৈশবের শুরুতে যে কোনো কিছু পরখ করার শত সিদ্ধ পদ্ধতি ছিলো- সেটা নিয়ে আগে মুখে দেয়া। তারপর, ভেবে দেখা যাবে ওটা নিয়ে কি করা যায়! সেগুলো মনে হলেই হাসিতে ফেটে পড়তে হয়।
পরবর্তীতে যখন কিছুটা বোধ আসলো যে, যে কোনো কাজের জন্য প্রথমে অনুমতি নিতে হবে বাব-মার কাছে, তখন ইশারা-ইঙ্গিত অথবা কান্নার মাধ্যমে হলেও অনুরোধ, আবেদন, অনুমতি প্রার্থনা যাই আছে সব করা হতো। এখন আর কারো কাছে যেতে হবে না। গুগলের কাছে ব্যক্ত করতে পারেন যে, আমি এটা খেতে চাই এবং এটা আমাকে দিতে হবে।
৩/ কখন আমি বড় হলাম? (৯২ কোটি)
প্রশ্নটার অভিব্যক্তি হতাশাজনক ভাবতে পারেন, আবার মনে করতে পারেন এই ৯২ কোটি মানুষ হঠাৎ করে দার্শনিক হয়ে গেছে। পৃথিবীর নানা জটিলতায় পড়ে অনেক কিছু করতে না পেরে আমরা শেষমেষ সময়ের উপর দোষটা চাপিয়ে দিই। এটা যেন সেই ভাবেরই একটা পরিস্ফুটন।
অন্যদিকে, অতি বিজ্ঞান মনষ্ক হয়ে বেড়ে উঠার সঠিক সেকেন্ড, মিনিট ও ঘন্টা জানার জন্য ব্যাকুলতা আপনার থাকতেই পারে। এই খোরাক মেটানোর জন্য গুগল-ই একমাত্র অবলম্বন।
গুগল যেন বলে দেবে, আপনার বড় হতে বত্রিশ বছর সময় লেগেছে। আপনি জীবনে যা করতে চান তা করার জন্য আর আঠাশ বছর সময় পাবেন। তাই, এক্ষুণিই ঝাপিয়ে পড়ুন।
৪/ তুমি কি একটা কথা গোপন রাখতে পারবে? (১৪৩ কোটি)
মানুষের কাছে বলে বলে আর শেষ রক্ষা হলো না। কেউই গোপন রাখতে পারলো না। এখন দেখা যাক গুগল কি করে। এই মজার প্রশ্ন শেষমেষ দেখা গেলো ১৪৩ কোটি জনের কাছে ছড়িয়ে গেলো। আপনি নিজেও প্রশ্নটি করে নিজ দায়িত্বে গুগলের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত জবাবটি।
মুলত গুগলের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি কাজ করে ওপেন সিক্রেটের মত। আপনি গুগলকে আপনার যে গোপন কথাটিই বলুন না কেন, পৃথিবীর অন্য প্রান্তে অন্য কোন এক মানুষ হয়ত ঠিক একই কথা চুপি চুপি বলছে গুগলকে। কিন্তু, গুগল কখনোই সেই লোককে বলে দিচ্ছে না যে, এই একই কথা আপনিও গুগলকে বলেছেন।
তবে ১০০ টা স্থান থেকে ১০০ জন সেই একই কথা বললে, গুগল সেই কথার শব্দগুলো সময় সহ সেই স্থান এবং প্রশ্নকর্তা সংখ্যা মনে রেখে দিবে। অবশ্য নির্দিষ্ট কোন কাজের জন্য ইন্টারনেটে আপনি কুখ্যাত হয়ে গেলে আলাদা কথা। গুগল আপনার নামসহ বিস্তারিত সবকিছু মনে রেখে দিবে।
৫/ আজ কি ছুটির দিন? (১৯৭ কোটি)
আমরা সবাই চাই যে, প্রতিটা দিন ছুটির দিন হোক। শুধু যদি সব অফিসের বসগুলোও তা-ই চাইতো, তাহলে আর সমস্যা ছিলো না। সপ্তাহের শেষ দিন বলতে একদিনকেই বোঝায়। আর ছুটির দিন একটা, কেউ কেউ দুইটা পায়। এটা সবার জানা। এরপরেও, একটু শান্তনার জন্য যেন সবাই সরণাপন্ন হয় গুগলের কাছে। ভুলেও যদি বলে ফেলে-
হ্যা, আজ ছুটির দিন।
এখন সময় কত বা আজ কত তারিখ। এ প্রশ্নগুলো খুব স্বাভাবিক এবং সার্বজনীন হয়ে দাড়িয়েছে। ক্যালেন্ডার পর্যন্ত উঠে যেয়ে দিন-তারিখ দেখাটা অনেক বড় ব্যাপার। কিন্তু ছুটি আছে কিনা সেটা জানতে হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসগুলোর ব্যাপারে খেয়াল রাখা, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা অবগত থাকা ইত্যাদি প্রয়োজন। সে অনেক কাজ। এর চেয়ে কীবোর্ডের বোতাম চেপে গুগলকে জিজ্ঞেস করলে নিমেষেই জেনে নেয়া যায়।
৬/ কে আমাকে কল করেছিলো? (২২২ কোটি)
প্রযুক্তির যেভাবে উন্নতি হচ্ছে, সেখানে আমরা সবাই যেন একটা লম্বা অদৃশ্য সুতায় বেধে আছি। অনেক দুরে থাকা কেউ একটু নড়াচড়া করলেই এ প্রান্তে থাকা মানুষটা সুতায় টান অনুভব করছে। এই অদৃশ্য তারের যোগাযোগটার নাম তার বিহীন যোগাযোগ।
আপনার ছোট্ট মুঠোফোনটিতে আসা কলগুলোর বিস্তারিত কল হিস্টরী থেকেই জেনে নিতে পারেন। সেখানে নেট কানেকশন অ্যাক্টিভ করে ব্রাউজারে যেয়ে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে টাইপ করে কে কল করেছিলো জানতে চাওয়াটা অতিরঞ্জিত ব্যাপার। আর এই কাজটাই করেছেন এই ২২২ কোটি মানুষ।
হয়ত বহু বছর আগে কে কল করেছিলো তার কথা জানতে চাইছে তারা। কিংবা হতে পারে শুধুই মজার প্রশ্ন।
৭/ আমি এখানে কেন? (৩৫০ কোটি)
বেতার তরঙ্গের বহুল ব্যবহারের ফলে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো মানুষের অবস্থান বের করা সম্ভব। কিন্তু তার সেখানে থাকার কারণটা শনাক্ত করার তাৎক্ষণিক কোন ডিভাইস বা যন্ত্র এখনো তৈরি হয়নি। তার পেছনের ঘটনা, তার গতিবিধি পর্যালোচনা করে একটা গ্রহণযোগ্য জবাব দাড় করানো যায়।
কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সার্চ ইঞ্জিন গুগলের পক্ষে এই মজার প্রশ্ন হজম করার ক্ষমতা কতটুকু সেটা আলোচনা সাপেক্ষ। এটা বলা বাহুল্য যে, গুগল কোন জবাব-ই দিতে পারবে না।
কিন্তু, ধরুন আশা করা হলো এরকম একটি জবাবেরঃ
আপনি এখানে কারণ, আপনি দুই দিন আগে অ্যাক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে ছিলেন। আজ সকাল থেকে বাসায় বিশ্রাম নিতে বলায় আপনি এখন বাসায় আছেন।
তাহলে মনে হচ্ছে সেই ৩৫০ কোটি মানুষ হতাশ-ই হয়েছে।
৮/ আপনার মাথার ঠিক কোথায় আপনার মুখটা রয়েছে? (৩৯০ কোটি)
হতে পারে সেই ৩৯০ কোটি মানুষ শারীরতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতেন। তাই মানুষের শরীরের উপর বিস্তারিত তথ্য দরকার ছিলো। আর, যদি সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাসা হয়ে থাকে তাহলে এটাকে নিতান্ত সাধারণ জ্ঞানের ক্যাটেগরিতে রাখা যায়। সেক্ষেত্রে, এর উত্তর “পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে” তথ্যটির মত হতে পারে।
কিন্তু গুগলের কাছে বসে না থেকে আয়নার সামনে দাড়ানোই কি সহজ হোতো না! প্রযুক্তির ব্যবহারের উদ্দেশ্য যদি সবকিছু সহজকরণ হয়ে থাকে, তাহলে নিশ্চই গুগলের জবাব পড়ে মাথায় মুখের অবস্থান বুঝাটা সঠিক ব্যবহার হলো না!
৯/ আমি কার মত দেখতে? (৫৫৬ কোটি)
হ্যা। আপনি অবশ্যই বলবেন, এই প্রশ্নটা নিছক বিনোদনের জন্যই। এখন ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অনেক অ্যাপ দেখা যায় যেগুলো, আপনাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসার মাধ্যমে বলে দেয় আপনি অমুক সেলিব্রেটির মত। এই ৫৫৬ কোটির সবাই যদি এই কারণেই গুগল সার্চ করে থাকে তাহলে অকপটে স্বীকার করা যায় যে, এখন বিনোদনটাও মানুষের একটা মৌলিক অধিকার হয়ে গেছে।
আর যদি না হয়, তাহলে নিশ্চই তাদের কেউ আশা করছেন যে, গুগল বলবে, আপনি আপনার দাদীর মত হয়েছেন। সেক্ষেত্রে আপনার দাদীর পরিষ্কার ছবি গুগলের ডাটা স্টোরে থাকতে হবে।
আপনিও আপনার সব পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের ছবি আপলোড করে এই মজার প্রশ্ন করে দেখতে পারেন, গুগল কি জবাব দেয়!
১০/ আমি এখন কোথায়? (৬৭৬ কোটি)
এটাকে ঠিক মজার প্রশ্ন বলাটা উচিত হবে না। কারণ, ধরুন আপনি কোন গভীর জঙ্গলে হারিয়ে গেছেন। অথবা কোন পাহাড়ী রাস্তায় বা মাঝ সমুদ্রে। এ অবস্থায় সঠিক দিক দর্শন আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে দেবে।
অনেকে কোথাও যাওয়ার জন্য নিজের অবস্থানটা দেখে নেয় কত সময় লাগবে সেটা জানার জন্যে। তাছাড়া, বর্তমানে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসগুলো ব্যবহারের সময় আপনার আশেপাশে কোন রাইডার ফ্রি আছে কিনা, সেটা দেখতে আপনার নিজের অবস্থান দেখার প্রয়োজন হয়।
কিন্তু, আপনি আপনার ঘরে বসে সার্চ করে নিজের বাসার ছাদ দেখার পরেই যদি গুগল ম্যাপ বন্ধ করে দেন, তাহলে হয় আপনি প্রযুক্তিটি নতুন ব্যবহার করছেন, আর না হয় সারাদিন ধরে এই কাজটা করতে আপনার খুবই ভালো লাগে।
গুগলকে সবচেয়ে বেশী জিজ্ঞেস করা এই ১০টি মজার প্রশ্ন কিন্তু এই প্রমাণ করে যে, এখন প্রশ্ন করে যে কোনো কিছু জেনে নেয়াটা কতটা সহজসাধ্য হয়ে দাড়িয়েছে! মজার হলেও যেহেতু এত মানুষ এগুলো নিয়ে আলোচনা করেছে সেহেতু তাদের জীবনে এগুলোর প্রভাব সন্দেহাতীত। আপনিও আমাদের জানাতে পারেন আপনার অদ্ভূত ও মজার প্রশ্নটি, যেটি আপনি গুগলকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। আর, লেখাটি সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে এই মজার প্রশ্নগুলো নিয়ে আড্ডা দিতে পারেন।