“মস্তিষ্ক ” বা “ব্রেইন ” সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য

যদি প্রশ্ন করা হয়, “আমাদের দেহের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ইউনিট, স্মৃতি এবং আবেগের সংগ্রহস্থল কোনটি? ” তবে উত্তর হিসেবে অবশ্যই বলা হবে, “মস্তিষ্ক ” বা “ব্রেইন “। দার্শনিক থেকে বিজ্ঞানী সকলেই বলেছেন মস্তিষ্কের বিশেষত্বের কারণে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু আমরা আমাদের মস্তিষ্ক সম্পর্কে ঠিক কতটা জানি?


দেহের বেশিরভাগ ক্রিয়াকলাপ, শরীরের বাইরে এবং ভিতর উভয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো প্রক্রিয়াকরণ, চিন্তাভাবনার ক্ষমতা, অতীতে ঘটে যাওয়া স্মৃতি, আবেগ সমস্ত কিছু পরিচালিত হয় মানব স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ মস্তিষ্কের মাধ্যমে।  এখনো মস্তিষ্ক সম্পর্কে অনেক বিষয় আমাদের অজানা। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে, মানবদেহের “মেমোরি কার্ড” মস্তিষ্ক সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য নিয়ে।

আমাদের মস্তিষ্ক ঠিক কতটা বড়?
বয়স, লিঙ্গ এবং সামগ্রিক দেহের গঠনের উপর মস্তিষ্কের আকারের গভীর একটি যোগসূত্র রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মস্তিষ্কের ওজন গড়ে প্রায় ১,৩৩৬ গ্রাম ও প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা মস্তিষ্কের ওজন ১,১৯৮ গ্রাম। সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে ৩৫-৪৫ টন ওজনের শুক্রাণ্য তিমি সবচেয়ে বড় মস্তিষ্কের প্রাণী হিসেবে পরিচিত। তবে, পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক নিউরন রয়েছে মানব মস্তিষ্কে যার বিশেষায়িত কোষ বৈদ্যুতিক এবং রাসায়নিক সংকেত দ্বারা তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রেরণ করে।

সাধারণত বলা হয়ে থাকে যে, আমাদের মস্তিষ্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন ট্রাডস উৎস রয়েছে। কিন্তু, বর্তমানে কিছু গবেষক এই তথ্য সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেছেন। পরবর্তীতে, ব্রাজিলিয়ান নিউরোলজিস্ট সুজানা হার্কুলানো-হউজেল কতৃর্ক আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে দেখা গেছে সংখ্যাটি ৮৬ বিলিয়ন নিউরনের কাছাকাছি।

মস্তিষ্ক কিভাবে গঠিত?
আমাদের মস্তিষ্ক মেরুদণ্ডে জলের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। মস্তিষ্কের তিনটি প্রধান অংশ রয়েছে:
প্রথম অংশটির নাম ব্রেনস্টেম যা গাছের অঙ্কুরের মতো দীর্ঘায়িত হয় এবং মস্তিষ্কের বাকী অংশকে মেরুদণ্ডের জলের সাথে সংযুক্ত করে।

দ্বিতীয় অংশটি হচ্ছে সেরিবেলাম যা মস্তিষ্কের পেছনে অবস্থিত। এই অংশটি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে,নতুন কিছু মনে রাখতে এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

সর্বেশেষ অংশটি হচ্ছে সেরিব্রাম যা মস্তিষ্কের বৃহত্তম
অংশ হিসেবে পরিচিত। এটিতে সেরিব্রাল কর্টেক্স ও অন্যান্য ছোট কাঠামোগুলো চিন্তাভাবনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, স্মৃতিশক্তি এবং শেখার প্রক্রিয়া, যোগাযোগের মতো ক্রিয়া সমূহকে চালনা করে।

মস্তিষ্ক নরম টিস্যু দিয়ে তৈরি যার মধ্যে রয়েছে ধূসর এবং সাদা পদার্থ। এতে আরো রয়েছে স্নায়ু কোষ, নন-নিউরোনাল কোষ (যা নিউরোন এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে) এবং ছোট ছোট রক্তনালী।

আমাদের মস্তিস্ক কতটা ‘ক্ষুধার্ত’?
অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় মানব মস্তিষ্ক খুব বড় না হলেও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কার্যকর রাখার জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয় । হারকিউলানো-হউজেলের ব্যাখ্যানুসারে, মস্তিষ্কের ভর দেহের ওজনের ২ শতাংশ হলেও প্রতিদিন শরীরের যে শক্তির প্রয়োজন হয় তার ২৫ শতাংশ শুধুমাত্র ব্রেইনের চালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।

আমাদের মস্তিষ্কের কতটা ব্যবহার করি?
সাধারণত বলা হয়ে থাকে যে, মানুষ তার মস্তিষ্কের ক্ষমতার মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করে থাকে, বাকী ৯০ শতাংশ কি করে ব্যবহার করতে হয় তা এখনো তাদের অজানা।
জিএর আটলান্টায় এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নিউরোলজিস্ট কৃষ সাথিয়ান বলেছেন, ” আমরা যদি কোন কাজে নিযুক্ত থাকি তখন কিছু নিউরন মস্তিষ্কের অন্যান্য কাজে যুক্ত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কখনো কখনো দেখা যায় আমরা কোন সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে ভাবছিনা কিন্তু কিছুক্ষণ পর বা ঘুম থেকে উঠার পর সে সমস্যার সমাধানের উপায় আপনি আপনি আমদের মস্তিষ্কে ধরা দেয় কারণ মস্তিষ্ক অবিচ্ছিন্নভাবে সচল থাকে।

ডান ব্রেইন বেশি সচল নাকি বাম ব্রেইন:
ব্যক্তিত্বের উপর মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যাদের বাম ব্রেইন বেশি সচল তারা গাণিতিকভাবে আগ্রহ প্রবণ এবং বিশ্লেষণাত্মক হয়। আর যাদের ডান ব্রেইন বেশি সচল তারা সৃজনশীল হয়।
আবার পরবর্তীতে গবেষণায় দেখা গেছে আমারা উভয়ই মস্তিষ্কের গোলার্ধকে সমান পরিমাপে ব্যবহার করে থাকি। তবে এটি সত্যি যে, বাম মস্তিষ্কের উপর ভাষার প্রভাব বেশি থাকে আর ডান মস্তিষ্ক যোগাযোগ রাখতে অধিক সক্ষম।

বয়সের বৃদ্ধির সাথে সাথে মস্তিষ্কের পরিবর্তন কীভাবে হয়?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের মস্তিস্কের নিউরনের পরিমাণ কমতে থাকে ফলে কিছু অংশ ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গবেষণায় দেখা গেছে, নিউরনের পরিমাণ কমার পাশাপাশি আবার নতুন নিউরনের আগমন শুরু হয়।
যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষক স্যান্ডরিন থুরেট ব্যাখ্যা করেছেন যে, নতুন কোষ তৈরির ক্ষেত্রে “হিপ্পোক্যাম্পাস ” প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কে নতুন স্নায়ু কোষগুলো যে প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় তাকে নিউরোজেনেসিস বলা হয়। থুরেটের মতে, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হিপোক্যাম্পাসে আনুমানিক গড়ে ৭০০ টি নতুন নিউরিন তৈরী হয়।

মস্তিষ্কের যত্ন:
রোজকার কাজের চাপে দেখা যাচ্ছে আমরা নিজেদের সময় দিতেই যেন ভুলে গেছি। মস্তিষ্ক প্রত্যেকটি মানুষের জন্যই খুব জরুরি ভূমিকা পালন করে। এক কথায় মস্তিষ্ক আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। তাই মস্তিষ্কের যত্ন নেয়া খুব প্রয়োজন। শরীরের অন্যান্য অংশেত মতো মস্তিষ্কের কিছু সময় বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। বই পড়া, মেডিটেশন হতে পারে মস্তিষ্কের বিশ্রামের ভালো মাধ্যম। তাছাড়া, শরীরচর্চা মস্তিষ্কে সঠিক পরিমাণে রক্ত সঞ্চালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তথ্যসূত্র: https://www.medicalnewstoday.com/articles/322081.phpp

Similar Posts

One Comment

Comments are closed.