সকালের নাস্তা- যেসব সাধারণ ভুল আমরা করে থাকি
সকালের নাস্তা হলো সারাদিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন খাবার। সকালের নাস্তাটা অন্য বেলার খাবারের চাইতে তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর এবং ভারী হতে হয়। সারারাত শেষে সকাল বেলা রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ সবচেয়ে কম থাকে। গ্লুকোজ হলো মস্তিষ্কের জ্বালানী। নাস্তা খাওয়ার পর রক্তের গ্লুকোজ স্বাভাবিক হয় এবং মস্তিষ্ক ঠিক মত কাজ করে। তাই প্রতিদিন সকালে স্বাস্থ্যকর এবং ভারী নাস্তা খেলে মস্তিষ্ক পুরোদিনের জন্য তৈরি হয়ে যায় এবং সারাদিন শক্তি পাওয়া যায়। সকালের ভালো নাস্তা সারাদিনের ভালো কাজের জন্য মনকে প্রফুল্ল রাখে, দিনের কাজের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে তোলে। সকালের নাস্তার গুরুত্ব এড়িয়ে গেলে শরীরের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন গবেষকেরা। সকালের নাস্তা নিয়ে যে সাধারন ভুল আমরা করে বসি তা এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো-
সকালের নাস্তায় জুস নয়ঃ-
সকালে উঠে ব্লেন্ডারে ফলের জুস তৈরি করতে যাচ্ছেন? গবেষকেদের পরামর্শ হচ্ছে জুসের পরিবর্তে ফল খান এবং সঙ্গে এক গ্লাস পানি। জুস তৈরি করলে ফলের ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার নষ্ট হয়ে যায়।
সকালে পরিমাণমতো নাস্তা খানঃ-
সকালে একেবারে কম খেয়ে সারাদিন যা খুশি তাই খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে। অনেকে ধারণা করেন, দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার পর যা খুশি তাই খেলে ওজন বাড়ে না। কিন্তু গবেষকেদের পরামর্শ হচ্ছে সকালের পরিমাণ মতো নাস্তা খাওয়ার। গবেষনায় দেখা গেছে যারা সকালে পরিমানমত নাস্তা নেন তারা অনেক বেশি চিকন ও সতেজ থাকেন। সহজে মুটিয়ে যান না ।
সকালের নাস্তায় ডিম ভাজাঃ-
সকালবেলা চিনিযুক্ত খাবার বেশি খাওয়ার চেয়ে ডিমভাজি খাওয়ার পরামর্শ দেন গবেষকেরা। ভাজা ডিমে ট্রাইপটোফ্যান নামের এক ধরনের বিশেষ যৌগের উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন গবেষকেরা যা মস্তিষ্কে ভালো অনুভূতির জন্ম দেয়। কলা ও বাদামেও এই যৌগটি রয়েছে। তাই সকালের নাস্তায় এই উপাদানগুলোযুক্ত হলে সারাদিন ভালো কাটতে পারে।
সকালে বার্গার-স্যান্ডউইচ নয়ঃ-
চকলেট, প্যানকেক, বার্গার, স্যান্ডউইচের মতো উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার সকালের নাস্তায় এড়িয়ে চলুন। উচ্চ ক্যালরির খাবারের পরিবর্তে শসা, ফল, বাদাম প্রভৃতি খেতে পারেন।
সকালের নাস্তা গুরুত্বহীন ভাবা ঠিক নয়ঃ
অনেকেই সকালের নাস্তাকে গুরুত্ব দেন না যা আসলে ঠিক নয়। রাতে খাবার ঠিকমতো খেলেও সকালের নাস্তা গুরুত্বপূর্ণ। সকালের কাজে বের হওয়ার তাড়া থাকলেও সকালের নাস্তা সেরে বের হওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। সকালে ঠিকমতো নাস্তা না হলে সারাদিন আলস্য ভর করতে পারে।
সকালের নাস্তা বাদ দিলে যে রোগগুলো হয়-
ডায়াবেটিসঃ আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন এ প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সকালের নাস্তা বাদ দিলে মহিলাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মহিলারা প্রতিদিন ভালোভাবে নাস্তা করেন তাদের চাইতে নাস্তায় অবহেলা করা মহিলাদের টাইপ টু ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি বেশি।
হৃদরোগঃ
Circulation নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হওয়া গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত সকালে নাস্তা করলে ৪৫ থেকে ৮২ বছর বয়সী মানুষের হৃদরোগ কম হয়। এতে আরও দেখা যায়, নাস্তায় অনিয়ম হলে উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে উচ্চমাত্রায় চিনির পরিমাণ দেখা দেয়।
স্মৃতিশক্তিঃ
আমেরিকান ডায়েট অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত ৪৭ টি গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সকালে নাস্তা করলে উন্নতি হয় স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের ক্ষমতা এবং এতে পরীক্ষায় ভালো ফল করা সম্ভব হয়। বিশেষ করে বাচ্চাদের মস্তিষ্কের সঠিক উন্নতি ও বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্যকর নাস্তা খাওয়া খুবই জরুরি। এছাড়া তাদের শারীরিক বৃদ্ধিতেও সকালের নাস্তা অপরিহার্য। অন্যদিকে সকালে পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে দেখা দেয় ঠিক এর বিপরীত অবস্থা।
ওজন বেড়ে যাওয়াঃ
জানা গেছে,যারা সকালের নাস্তা খান তিন মাসের মাথায় তাদের ওজন গড়ে ১৭.৮ পাউন্ড কমে যায়। এবং যাদের মাঝে অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে তারা সকালের নাস্তা বাদ দেন খুব বেশি। সকালে নাস্তা না খাবার ফলে দুপুরের দিকে তাদের খিদে লাগে এবং তারা অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে ফেলেন ফলে তাদের ওজন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যায়। অর্থাৎ নাস্তা বাদ দিলে ওজন বাড়ে বেশি। যারা সকালের নাস্তা বাদ দিয়ে ডায়েট কন্ট্রোল করেন, তাদের ওজন কমার প্রবণতা কম।