জানেন কী শুধুমাত্র বসে থেকে আপনার মৃত্যু হতে পারে?

বসে থাকার কারণে আপনার মৃত্যু হতে পারে, জানেন কী ? প্রতি ৩০ মিনিট পর একটু হাঁটাচলা করুন- এক্সপার্ট রা বলে থাকেন। আপনি যতই ব্যায়াম করুন না কেন অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকা অকাল মৃত্যুর একটি বড় কারণ। সাম্প্রতিক Annals of Internal medicine এর এক গবেষণায় এটি প্রকাশিত হয়েছে ।৮০০০ জন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তির উপর গবেষণায় দেখা গেছে,  বসে থাকার সময়ের সাথে  দ্রুত মৃত্যুর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আপনার বসে থাকার সময় যত বাড়বে আপনার মৃত্যুর ঝুঁকি ও তত বৃদ্ধি পাবে।

Bangla Vibe-sitting for long time can kill you

আমরা দিনের বেশী ভাগ সময় মোবাইল নিয়ে অথবা নিজের ডেস্ক এবং চেয়ারে আঠার মত লেগে থাকি। ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যায় এভাবে। নড়াচড়া কম করায় দিন দিন অতিরিক্ত ফ্যাট জমতে থাকে শরীরে।

আপনি যদি ছাত্র অথবা প্রফেশনাল হয়ে থাকেন, আপনাকে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়। হয়ত লেকচার শুনছেন টিচারের অথবা কম্পিউটারে কাজ করছেন দিনভর। গবেষনায় দেখা গেছে আমাদের দৈনিক ৯-১০ ঘন্টা বসে থাকতে হচ্ছে।

চলুন একটা হিসাব করি ঃ

ধরুন একজন ব্যাক্তি সপ্তাহে পাঁচদিন নয় ঘণ্টা করে কাজ করছেন ৩০ বছর ধরে। তাহলে তিনি ৪৯২,৭৫০ ঘন্টা বসে থাকছেন। এখানে তার গাড়িতে যাতায়াতের সময়, টিভি দেখার সময় বা অন্যান্য সময়ের বসে থাকার সময় ধরা হয়নি

কিভাবে অনেক সময় ধরে বসে থাকা আপনার ক্ষতি করছে?

বসে থাকা খারাপ কিছু না। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকা অবশ্যই ক্ষতিকর। আপনি যখন দিনের পর দিন এভাবে বসে থাছেন তা আপনার অকাল মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আপনি হৃদরোগ , ফগি ব্রেইন, কোলন, ব্রেস্ট  এবং এন্ডোম্যট্রিয়াল ক্যান্সার এ আক্রান্ত হতে পারেন খুব দ্রুত। শারীরিক গঠন নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং কাঁধ এবং পিঠের ব্যাথায় ভুগতে শুরু করে অনেকে। অনেকক্ষণ বসে থাকলে কোমরের ফ্ল্যাক্সিবিলেটি নষ্ট হয়ে যায়। শরীরে রক্ত চলাচল কমে যায় এমনকি শরীরের অন্যান্য অঙ্গ ও আক্রান্ত হতে পারে।

কলোম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ইর্ভিং মেডিক্যাল সেন্টার এর গবেষকরা প্রমান করে দেখিয়েছেন যে, যারা টানা ৩০ মিনিটের কম সময় বসে থেকেছেনে তারা ৫৫% কম রিস্কে আছেন যারা ৩০ মিনিটের বেশী সময় ধরে বসে থাকেন। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা হটাত মৃত্যুর সবগুলো কারনের সাথে জড়িত। বয়স, লিঙ্গ, শরীরের মাপ, ব্যায়াম করার অভ্যাস এতে কোন প্রভাব ফেলেনা।

গবেষণায় দেখা গেছে অনেক সময় ধরে বসে থাকলে তা অতিরিক্ত ওজন এবং মেটাবোলিজম ইস্যু তৈরি করে। যারা দিনে দুই ঘন্টার কম সময় যে কোন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন এবং যারা দিনে চার ঘণ্টার বেশী সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন তাদের উপর পরীক্ষায় চালানো হয়। যারা বেশী সময় ব্যয় করছেন স্ক্রিনের সামনে, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি( যে কোন শারীরিক কারণ) ৫০% বেশী এবং হার্ট এটাকের ঝুঁকি ১২৫% বেশী।

কেন আমরা বসে থাকায় এত অভ্যস্ত হয়ে গেছি?

বসে থাকা একটা নিরব ঘাতক জেনেও তার পরিমান কমিয়ে আনা অনেক চ্যালেঞ্জিং। আপনি স্টাডি করছেন অথবা কাজ করছেন,বসে থাকতে তো হচ্ছেই। আপনি যখন সারাদিনের কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরছেন, তখন মেন্টালি অনেক পরিশ্রান্ত থাকেন। তখন আপনার মন চাইবে টিভি ছেড়ে একটু রিলাক্স হতে। অথবা মোবাইলে আপনার সোশ্যাল সাইট গুলোতে আপনি ঢু মারতে থাকেন।
বসে থাকার এই চক্র ভাঙ্গা আরও কঠিন হবে যদি  আপনার মত অভ্যাসের মানুষরাই আপনাকে ঘিরে থাকে সবসময়। আপনি যখন কাজে যাচ্ছেন, আপনার সাথের সবাই তখন ডেস্কে ঘণ্টার পর ঘন্টা কাজ করে যাচ্ছে। আপনার তখন মনেই হয়না এটা একটি খারাপ অভ্যাস।

আমি দাঁড়িয়ে থাকলে ক্লান্ত হয়ে যাই!

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, আমরা দাঁড়িয়ে থাকাকে এড়িয়ে যাই। কেউ দাঁড়িয়ে থাকেলও আমরা বলি- বসো বসো, দাঁড়িয়ে আছো কেন? বা কাউকে সাজা দিতে হলে দাঁড়াতে বলি। তার মানে আমাদের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা একটা সাজা! বসে থাকতে আমরা যতটা অভ্যস্ত দাঁড়াতে ততটা না। বসে থাকতে হলে শরীরের কোন সাপোর্টও লাগেনা।

আপনার চেয়ার এর সাথে সুসম্পর্ক নষ্ট করতেই হবে

কোন খারাপ অভ্যাস কে ত্যাগ করতে যদি হয় তাহলে সর্বোপ্রথম মন থেকে স্বীকার করে নিতে হবে আপনি ভুল করছেন। ধন্যবাদ দিন , আপনাকে বলা হচ্ছেনা সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকুন। আপনি শুধু একটু চেষ্টা করুন এই বদভ্যাসে একটু পরিবর্তন আনতে। প্রতি ৩০ মিনিট পর একটু হাঁটাহাঁটি করুন।

দাঁড়ানোর সুযোগ খুঁজুন

আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনি অনেক সময় নিয়ে হাঁটেন অথবা দাঁড়িয়ে থাকেন তারপরও আরও সুযোগ আছে বসে থাকার সময় কমিয়ে আনার। যখন একটা ফোন কল করছেন কাউকে এই সময়টা দাঁড়িয়ে থেকে কলটা করুন অথবা রিসিভ করুন। অফিস কিংবা ভার্সিটি যাচ্ছেন যখন যদি পাবলিক গাড়িতে যান, তাহলে সে সময়টা বসে না থেকে দাঁড়িয়ে থাকুন। স্বাভাবিক ভাবে এটা ছোট ব্যাপার মনে হতে পারে কিন্তু এই অভ্যাস আপানার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বড় সুফল নিয়ে আসবে।

Bangla vibe- sitting for long time can kill you

কম্পিউটার অথবা ডেস্কে কাজের সময় দাঁড়িয়ে কাজ করা যায় এমন ডেস্ক ব্যবহার করুনঃ

আপনার হয়তো মনে হতে পারে বসে কাজ করা ছাড়া আর কোন অপশন নেই। কিন্তু অনেক কোম্পানি তাদের অফিস দাঁড়িয়ে কাজ করা যায় এমন ভাবে সাজাচ্ছেন। কেউ দাঁড়িয়ে কাজ করে আবার অনেকে উঁচু সিটে বসে কাজ করেন। সবসময় যে তা খুব ব্যয়বহুল তা কিন্তু নয়। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার বসকে ই-মেইল করতে পারেন, আপনাকে মেরে তো আর ফেলবেননা তিনি। হয়তো তিনি ব্যপারটা বুঝতে পারবেন, যদি আপনি বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে বুঝাতে পারেন। একটা কোম্পানি কখনোই চাইবেনা তার দক্ষ কর্মীরা অসুস্থ হয়ে যাক। আর যদি না মানে সেক্ষেত্রে আপনি নিজের খরচে একটা চেয়ার করে নিতে পারেন। শুধু জেনে নিন এতে আপত্তি আছে কিনা।

লাঞ্চ ব্রেকে হেঁটে আসুন

ধরলাম আপনাকে স্ট্যান্ডিং চেয়ার দেয়া হলোনা, তারপরও আপনি আপনার শরীরের রক্ত চলাচল বাড়াতে পারেন দুপুরের খাবারের জন্য দেয়া বিরতিতে। আপনাকে বলা হচ্ছেনা আপনি খাবার বাদ দিয়ে হাটতেই থাকুন। শুধু বলা হচ্ছে যতটা সময় পারা যায় দাঁড়ান অথবা হাঁটুন। আপনি যখন আবার ডেস্কে ফিরে আসবেন, আরও বেশী মনযোগী বা ফোকাসড থাকবেন।

আপনার ফিটনেস প্ল্যানের সঙ্গী করে নিন

আপনি যদি পরিকল্পনা করে কাজ করতে চান সেক্ষেত্রে আপনার প্রতিদিনের ফিটনেস প্ল্যানে  হাঁটাহাঁটি কে যুক্ত করে নিন। প্রতিদিন ৭,০০০-৮,০০০ স্টেপ হাঁটুন। অনেক মোবাইল এপ্লিকেশন আছে যেমন –Fitonomy App, যা আপনি নামিয়ে নিতে পারেন আপনার সেল ফোনে। এটি ট্র্যাক রাখবে আপনি কতটুকু হেঁটেছেন।

বাইরে যান, একটু ঘুরে আসুন

আশা করছি এই আর্টিকেল পড়ার পর আপনি বুঝতে পারছেন অনেক সময় ধরে বসে থাকা কতটা অস্বাস্থ্যকর।কাল থেকে করবেন এমনটা যেন না হয়! আজ এখন থেকে শুরু করে দিন। আপনার পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের, যাদের এমন অভ্যাস আছে তাদের সাথে এই আর্টিকেল শেয়ার করে জানিয়ে দিন। আপনার শরীর আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি যদি অনেক ফিট এবং স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে থাকেন তাহলে এটা ধরে রাখার জন্য নতুন অভ্যাস শুরু করে দিন। অভিনন্দন জানাচ্ছি আপনার নতুন অভ্যাস কে!

 

Similar Posts

4 Comments

  1. অনেক ধন্যবাদ এমন একটা আর্টিকেল লেখার জন্য। আমরা যারা বসে বসে কাজ করি তাদের জন্য একটা সতর্ক বার্তা। আর বিশেষ করে আমি অনেক বেশি পরিমানে বসে বসে কাজ করি। আমাকে আমার কাজের স্টাইল পাল্টাতে হবে।

Comments are closed.