প্রকৃতির মাঝে যেন এক টুকরো স্বর্গঃ নিকলী হাওর
বাংলাদেশ সুন্দর। সুন্দর এদেশের প্রকৃতি, মাঠ ঘাট সবকিছু। নিজের দেখার চোখ থাকলে চারপাশের সবকিছুই যেন সুন্দর প্রকৃতির রূপ-লাবণ্যের নির্যাস পেতে হলে চাই অন্তরদৃষ্টি।
কবিগুরু এ জন্যই লিখেছিলেন-
“দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে দু’পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শীষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু।”
বিস্তীর্ণ জলরাশির বুকে বিচ্ছিন্ন কিছু ছোট ছোট গ্রাম। যেন এক একটা ছোট্ট দ্বীপ।
হাওরজুড়ে গলা ডুবিয়ে থাকা হিজল গাছের সারি বা পানির নিচ থেকে জেগে ওঠা করচের বন।
কিংবা হঠাৎ হঠাৎ শুশুকের লাফ-ঝাঁপ মুহূর্তেই আপনার মন ভালো করে দেবে।
আর তাই মুহূর্তের মধ্যে মনকে ভালো করে দিতে চলে যেতে হবে কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরে।
কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওর ইতোমধ্যে পর্যটকদের মন কেড়ে নিয়েছে। বিশাল জলরাশির ওপর নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাস হয়েছেন অনেকেই।
এমন অপ্রসিদ্ধ জায়গায় নিজের মতো করে ঘুরতে পেরে খুশি সবাই ।
চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে নিকলী হাওরের সুনাম। তাই সুযোগ পেলেই ভ্রমণপিপাসুরা ছুটছেন সেখানে।
কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলার প্রায় সবটুকু এলাকাজুড়ে বিস্তৃত নিকলী হাওর। এ হাওরের সৌন্দর্যে খুঁজে পাওয়া যায় গ্রামীণ পরিবেশের স্বকীয়তা।
নৌকা নিয়ে একটু সামনে এগোতেই হারিয়ে যেতে হয় নীল জলরাশির মাঝে। দূর থেকে আরো যত দূরে চোখ যাবে, স্নিগ্ধ গ্রামের মতোই শান্ত অথৈ পানি প্রাণ জুড়িয়ে দেবে।
যেনো পুরো পৃথিবীর সৌন্দর্য এসে এখানে মিশে গেছে। নদী আর আকাশ মিলে যেনো এক মহাসাগর বানিয়ে ফেলেছে।
অধিকাংশ মানুষই কৃষির সাথে জড়িত। তাছাড়া এই হাওড় থেকে মাছ সংগ্রহ করেও জীবিকা নির্বাহ করেন অনেকে।
তাদের মাছগুলো বিক্রি হয় শহরের বড় বড় বাজারে। আর শুকনো মৌসুমে নানা ধরনের সবজির চাষ তাদের জীবিকার উৎস।
জেলেদের ছোট নৌকা, ভেসে আসা মিষ্টি সুরের ভাটিয়ালি গান কিংবা শিশুদের সাতার কাটা দেখতে দেখতে কখন যে সারাদিন গড়িয়ে যায়, কেউ বুঝতেই পারে না।
হাওরে ঘুরতে ঘুরতে চলে যাওয়া যায় ছাতিরচরে। পানির নিচে ডুবন্ত এক সবুজ বন। স্তরে স্তরে সাজানো সুবজ গাছ।
গাছের বুক বরাবর পানিতে ভেসে থাকা যায়। হুট করে দেখে যে কারো কাছে মনে হতে পারে এটা যেন আরেক রাতারগুল।
নিকলী বেড়িবাঁধ থেকে নৌকায় সরাসরি ছাতিরচর যেতে ঘণ্টাখানেকের মতো সময় লাগে।
ভরপুর কোনো পূর্ণিমা রাতের গাঢ় নীল আকাশের নিচে নৌকার ছাদে কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে পুরো একটি রাত।
রাতে থাকাটা মোটামুটি নিরাপদই, যদি আবহাওয়া ভালো থাকে। তবে পুরোপুরি নিরাপত্তার জন্য নিকলী থানায় ইনফর্ম করে নেওয়া যেতে পারে।
তাহলে চিন্তামুক্ত ও আরামদায়ক একটি রাত সহজেই কাটানো সম্ভব। যদিও নিকলীতে ডাঙায় থাকার কোনো সুব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তাছাড়া হাতের কাছে কিশোরগঞ্জ শহর তো আছেই।
নিকলীতে খাবারের খুব ভালো ব্যবস্থা না থাকলেও কাছেই রয়েছে বাজার। আর বাজারের রেস্টুরেন্ট থেকে হাওরের তাজা মাছের স্বাদ নিতে কে না চায়!
তাই একটা ঢুঁ তো মারতেই হয়।
এক রাতের মধ্যে ঘুরে আসতে চাইলে সুন্দর পন্থা হচ্ছে পুলেরঘাট দিয়ে নিকলী যাওয়া।
নিকলী হাওর সবচেয়ে বেশি কাছে হয় কিশোরগঞ্জের পুলেরঘাট থেকে।
ঢাকার গোলাপবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বেশ কয়েকটি বাস পুলেরঘাট যায়। ভাড়া ২২০ টাকার মতো। ৩ ঘণ্টার মধ্যে পৌছে যাওয়া যায় সেখানে।
পুলেরঘাট থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে ১ ঘণ্টায় নিকলী বেড়িবাঁধ যাওয়া সম্ভব।
তাছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে করে প্রথমেই চলে যাওয়া যেতে পারে কিশোরগঞ্জ শহরে। কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশন এর সামনে থেকে সিএনজিতে উঠে সোজা নিকলী।