গলা ব্যাথা? ক্যান্সার নয় তো?

শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে

মানবদেহের যেকোনো অংশে ক্যানসার হতে পারে। ক্যানসার জিনিসটা আসলে কি? আমাদের শরীরের সজীব কোষ গুলো একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বিভাজিত হতে থাকে। যদি কোনো কারণে এই নিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় সমস্যা হয় এবং নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে যায়, তখন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কোষ বিভাজন হতে থাকে। অনিয়ন্ত্রিত এই কোষ বিভাজন রুপ নেয় টিউমার ও পরবর্তীতে ক্যান্সারে। আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে গলার ক্যান্সার। অর্থাৎ গলার ক্যান্সারে সাধারণত কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায়।

Throat cancer

যেহেতু ক্যান্সার দেহের যেকোনো অংশেই হতে পারে তাই গলায়ও এর অন্তর্ভুক্ত। গলায় ক্যান্সার হওয়ার জন্য সাধারণত তিনটি অংশ দায়ী। অর্থাৎ শ্বাসনালী, অন্ননালি ও স্বরযন্ত্রের টিউমার থেকেই গলার ক্যান্সার হয়। এরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সাথে সংযুক্ত। তাই কোনো এক জায়গায় ক্যান্সার কোষ সৃষ্টি হওয়া শুরু করলে খুব দ্রুত আশেপাশের স্থানগুলো ছড়িয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি চিকিৎসা না করলে ক্যান্সার কোষ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি সময় নেয় না।

কণ্ঠনালীর ক্যান্সার কিভাবে শনাক্ত করবেন?

সাধারণত কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে যা দ্বারা বোঝা যায় কণ্ঠনালীতে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টি হয়েছে।
এগুলো হলো-

* প্রচুর গলা ব্যাথা
* কণ্ঠস্বর পরিবর্তন
* শ্বাস প্রশ্বাসে অধিক সমস্যা অর্থাৎ কষ্ট হওয়া
* এই ক্যান্সার এর শেষ পর্যায়ে গলার চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়ে গলা ফুলে যায়।

কারণঃ সাধারণত ধূমপান অন্যতম কারণ। সাদা পাতা কিংবা পানের সাথে জর্দা খাওয়ার কারণেও কণ্ঠনালীতে ক্যান্সার হয়।
তাছাড়া অতি মাত্রায় গরম খাদ্য গলধঃকরণ করা ও কণ্ঠনালীর অতিরিক্ত ব্যবহার এই ক্যান্সারের কারণ ।

শ্বাসনালীর ক্যান্সারের উপসর্গ সমূহ কী?

শ্বাসনালীর উপসর্গ গুলো হলো-

* কণ্ঠস্বরের হঠাৎ পরিবর্তন
* কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন ঔষধেও সারানো সম্ভব হয় না
* কণ্ঠস্বরের এই পরিবর্তন পনেরো দিনের বেশি থাকে
* শ্বাস কষ্ট হয়
* ঢোক গিলতে সমস্যা হয়
* গলায় কিছু আটকে আছে মনে হয়

কারণঃ সাধারণত ধূমপানকেই এই ক্যান্সারের কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও কারখানার কোনো কেমিক্যাল কিংবা বিষাক্ত ধোঁয়া কোনোভাবে নাকের ভেতরে প্রবেশ করে শ্বাসনালীতে ঢুকে গেলেও শ্বাসনালীর ক্যান্সার হয়।

স্বরযন্ত্রের ক্যান্সারঃ

স্বরযন্ত্র হলো ভোকাল কর্ড। এটির মাধ্যমে গলা দিয়ে স্বর বের হয়। ক্যান্সার কোষ যখন স্বরযন্ত্রেও স্থান করে নেয় তখন তাকে স্বরযন্ত্রের ক্যান্সার বলে।

কখন বুঝবেন আপনার স্বরযন্ত্রে ক্যান্সার হয়েছে?

কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাবে। সেগুলো হলো-
* গলার স্বর বসে যাওয়া
* গলায় অস্বস্তি অনুভূত হওয়া
* শ্বাসের সমস্যা প্রথমে অল্প হওয়া। পরবর্তীতে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে অত্যাধিক কষ্ট হওয়া
* খাবার খেতে সমস্যা হওয়া
* গলা ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিবে

কারণঃ ধূমপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য (যেমন মদ গাঁজা প্রভৃতি) বায়ুমন্ডলের দূষণ, পান সুপারি ও জর্দা/তামাক ইত্যাদিকে এর কারণ হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়।

আলোচ্য তিনটি অংশের যেকোনো একটির ক্যান্সার-ই গলার ক্যান্সার হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়। তাই কিছু সাধারণ লক্ষণ (যেমনঃ গলা ব্যাথা, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, খাবার গিলতে বা ঢেকুর তুলতে সমস্যা, কাশির সাথে রক্ত ইত্যাদি) দেখেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। বেশি দেরি করে ফেললে ক্যান্সার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে।

মনে রাখবেন, ক্যান্সার আমাদের কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। ক্যান্সার প্রতিরোধেও তাই সেরকম ব্যবস্থা নেই। তবে হ্যাঁ, সময় থাকতেই যদি ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা যায়, তাহলে অনেক বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভালো থাকুন।


শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে

Similar Posts

One Comment

Comments are closed.