ফ্রিল্যান্সারদের কিছু কমন ভয় যা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

কিছুদিন আগে একজন ফ্রিল্যান্সার ভাইয়ের আত্মহত্যার সংবাদে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটি থমকে গিয়েছিল। যিনি মারা গিয়ে ছিলেন তিনি এক সময় টপ লেভেলের ফ্রিল্যান্সার ছিলেন। তবে কেন এমন হল? আসলে আমরা যারা ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে  জড়িত বিশেষ করে রাইটার ভাইদের কোন ফিক্সড  আয় যেমন নেই তেমন কাজ না পাওয়ার, ক্লায়েন্ট হারানোর ভয় লেগেই থাকে। সত্যি এমনও সময় আসে যে আমরা মাসের পর মাস কোন কাজই পাইনা। বলতে কষ্ট লাগে যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সাররা একে অন্যের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন না। ফলে বিভিন্ন প্রকার ভয় সর্বদাই আমদেরকে ঘিরে থাকে যেমন-কাজ না পাওয়ার ভয়, সংসার না চালাতে পারার ভয়, ক্লাইন্ট হারানোর ভয়। বিশেষ করে রাইটার ভাইদের মানসিক যন্ত্রণা অত্যাধিক বেশি থাকে কারন তাদের উপর সব সময় মানসিক চাপ একটু বেশিই থাকে। এসব কারনে ঠিক করলাম, সেসব ভয়ের একটি লিস্ট করব যা সাধারণত সকল লেভেলের ফ্রিল্যান্সারদের প্রভাবিত করে থাকে।

তা হলে শুরু করা যাক। কি ভয় লাগছে নাকি?
প্রকৃতপক্ষে ভয় নামক অনুভূতিটি আনন্দদায়ক না হলেও এর কিন্তু একটি উদ্দেশ্য রয়েছে।
ভয় এমন একটি শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া যা আমাদেরকে আসন্ন বিপদ থেকে যেমন সতর্ক করে তেমন যেকোন সমস্যা মোকাবেলায় আমাদেরকে প্রস্তুত করে তোলে। মনে রাখুন ভয় আমদের জন্য উপকারিও বটে। কথায় আছে না, ভয়কে জয় না করতে পারলে সফল হওয়া যায়না। তাই অবশ্যই ভয়কে আমাদের জয় করতে হবে নইতো পিছিয়ে পড়ব এই জীবন সংগ্রামে।
সত্যি কি তাই?
নিম্নে কিছু উদাহরণ দিচ্ছিঃ

১) আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা ইংরেজি তে দক্ষ নন। ক্লায়েন্টদের সাথে ভুল ইংরেজিতে কথা বললে বা চ্যাট করলে কাজ নাও দিতে পারে, ফান করতে পারে, এসব ভেবে তাদের সাথে তেমন কমুনিকেট করেন না। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং এ কমুনিকেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা করতে ব্যর্থ হলে ভাল কাজ জানলেও আপনি সফল হতে পারবেন না। দেখলেন তো, ভুল হতে পারে এই ভয় আপনাকে সফলতার পথে অগ্রসর হতেই দিল না।

৩) রিজেক্ট হওয়ার ভয়ে হয়ত আপনি ক্লায়েন্টদের কাছে আপনার রাইটিং জমা দিচ্ছেন না বা বিড করছেন না। ফলস্বরুপ ক্যারিয়ার শুরু আগেই তার পরিসমাপ্তি ঘটল।

এই সমস্ত ভয় স্বাভাবিক হলেও এর অর্থ এই নয় যে আপনি ভীত হয়ে বসে থাকবেন। আমদের এই ভয়টি জয় করার চেষ্টা করতে হলে প্রথমে ভয় গুলো কি কি তা জানা আবশ্যক।

তাহলে পড়তে থাকুন।

ফ্রিল্যান্সারদের ভিতর সাধারণত যে ভয়গুলা থাকে তা হলঃ

১) সমালোচনার ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখা:
আপনার লেখা প্রকাশিত হলে বা জমা দিলে লোকেরা কেবল এটি পড়বে শুধু মাত্র তাই নয়, তারা আপনাকে বিচার করবে, মন্তব্য করতে এবং আপনাকে প্রশ্নও করতে পারে। যেটা অনেকের জন্য ভীতিকর। অনেকে আবার অসম্মানজনক ও মনে করেন।

২) পর্যাপ্ত অর্থোপার্জন না করাঃ
ফ্রিল্যান্সার হিসাবে ক্যারিয়ার তৈরি করতে সময় লাগে এবং প্রথম দিকে পর্যাপ্ত অর্থোপার্জন করতে না পারার চিন্তা খুবই ভীতিজনক হতে পারে- বিশেষ করে যদি আপনার পরিবারের সদস্যরা যদি আপনার উপর নির্ভরশীল হয়।

৩) ব্যর্থতার ভয়ঃ
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হিসাবে সফল হতে না পারেন তবে কী করবেন? পরিবারের লোকদের কিভাবে মুখ দেখাবেন? ক্লায়েন্টরা যদি আপনাকে কাজ দিতে না চায় তবে কী হবে? এ সকল ভয় আপনাকে মানসিক ভাবে দুর্বল করতে পারে।

৪) নিজেকে অনুপোযুক্ত ভাবাঃ
ধরুন বিড করার পর আপনি কাজ পেলেন,কিন্তু যখনই কাজ করতে যান মনে হয় হয়ত কাজটি সফল ভাবে শেষ কর‍তে পারব না? কাজটি কি রিজেক্ট হবে? কোথাও কি কিছু ভুল হচ্ছে? আমি কি এ কাজের উপযুক্ত?

৫) কাজের মান কি বজায় রাখতে পারবঃ
প্রথম দিকে এই ভয়টি প্রায় সকল ফ্রিল্যান্সারদের ভিতর দেখা যায়। কাজের ধারাবাহিকতা, কোয়ালিটি ঠিক আছে কি না? ক্লাইন্ট কি কাজের মান নিয়ে প্রশ্ম তুলবেন? সঠিক সময়ে কি জমা দিতে পারব?

৬) ক্লাইন্ট হারানোর ভয়ঃ
ধরুন আপনি ভাল একটি ক্লাইন্ট পেয়ে গেলেন। তখনও কিন্তু ভয় থেকে মুক্তি নাই। এবার শুরু হয় ক্লাইন্ট হারানোর ভয়। আয়ের একমাত্র উৎস টি শেষ হয়ে যাবে? এখন আবার কি প্রথম থেকে শুরু করতে হবে? আবার কি নতুন ক্লাইন্টকে খুজতে ও খুশি করতে আদা-জল খেয়ে লাগতে হবে?

যদি আপনি উপরে উল্লেখিত ভয় গুলার কারনে ভীত হয়ে থাকেন, তবে আপনি একা নন। সকল ফ্রিল্যান্সাররা এই ভয় গুলো নিয়ে বেঁচে আছেন। কিন্তু এতই ভীত কি আমরা হব যে জীবন শেষ করে দিব বা হাত গুটিয়ে বসে থাকব?
অবশ্যই না।
এসব ভয়গুলা দুরে সরিয়ে নিজেদের কে যোগ্য হিসাবে গড়ে তুলতেই হবে। এমন পর্যায়ে যেতে হবে যেন এইসকল ভয় গুলো আপনার আমার জীবন কে স্তব্ধ করতে না পারে।

তাহলে আজ এই পর্যন্ত। আপনাদের কাছ থেকে সাড়া পেলে এই সকল ভয়কে মোকাবেলার কিছু কমন টেকনিক বা উপায় নিয়ে পরবর্তিতে আলোচনা করা যাবে।

ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ধন্যবাদ।

Similar Posts

One Comment

  1. ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে থাকতে পারাটা জীবনে সুখী এবং সফল দুটোই হওয়ার চাবিকাঠি।

Comments are closed.