লিউকোমিয়া : লক্ষণ ও চিকিৎসা
অস্থিমজ্জা এবং রক্তের অস্বাভাবিক অবস্থাকে বলা হয় লিউকোমিয়া । ভ্রূণ অবস্থায় যকৃত এবং প্লীহায় লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন হয় ।সাধারণত শিশুদের জন্মের পর থেকে লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন শুরু। লাল অস্থিমজ্জা হতে এই কণিকা উৎপন্ন হয় ।এগুলোর প্রধান কাজ অক্সিজেন সরবরাহ করা । লোহিত রক্ত কণিকা তে অবস্থিত হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে অক্সিহিমোগ্লোবিন তৈরি করে। অতঃপর তা সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
আমাদের দেহে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ এর চেয়ে প্রায় 500 গুণ বেশী । তবে কোন কারণে যদি শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে লিউকোমিয়া তে আক্রান্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে । অত্যাধিক পরিমাণে শ্বেত রক্ত কণিকা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে পক্ষান্তরে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং তার পাশাপাশি অনুচক্রিকা উৎপাদনের হার কমে যায় ।অনেকের মতে একটি ভুল ধারনা থাকে। সেটি হচ্ছে লিউকোমিয়া কে অনেকেই রক্তের ক্যান্সার বলে থাকে । তবে প্রকৃতপক্ষে এটি রক্তের ক্যান্সার নয় বরং রক্তের অস্বাভাবিক পরিবর্তন।
মূলত এ ক্ষেত্রে যে অঙ্গটি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় সেটি হচ্ছে অস্থিমজ্জা।
লিউকোমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণসমূহ :
একজন লিউকোমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে।
যদি কেউ লিউকোমিয়া আক্রান্ত হয় তাহলে দেহে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ কমে যাওয়ায় অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে । ফলে রোগী ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়। দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হারাতে থাকে। তার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট তে ভোগে।
রক্তে শ্বেত রক্তকণিকার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে লোহিত রক্তকণিকার পাশাপাশি অনুচক্রিকার পরিমাণও কমতে থাকে। যার ফলে দেহের কোথাও কেটে গেলে অথবা কোন জায়গায় রক্তক্ষরণ হলে সে জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। বিশেষ করে দাঁতের গোড়া, নাক সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ। অনেক সময় দেহে অস্বাভাবিকহারে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
তার পাশাপাশি দেহ ত্বকে ছোট ছোট লাল বর্ণের দাগ দেখা যায়। এবং পায়ের গিট ফুলে যায়। তার পাশাপাশি অস্বাভাবিক ব্যাথা শুরু হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আজ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক শ্রেণীর লিউকোমিয়া আবিষ্কৃত হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই শ্বেত রক্ত কণিকার অত্যাধিক বৃদ্ধির ফলে হয়ে থাকে।
অনেকের মনে হয়তোবা প্রশ্ন থাকতে পারে যে, শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে হয়তোবা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে। তবে এই ধারনাটি সম্পুর্ন ভুল। কারণ শ্বেত কণিকার পরিমাণ বেড়ে গেল সেগুলো মূলত ক্যান্সার কোষ।
মাঝেমধ্যে গায়ে জ্বর আসে। এবং লসিকা গ্রন্থি ফুলে যায়। রক্তে শ্বেত কণিকার পাশাপাশি লোহিত এবং অনুচক্রিকার কাজের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।
চিকিৎসা কি?
প্রাথমিক অবস্থায় রোগ থাকাকালীন এ রোগ নির্ণয় করা গেলে, সুচিকিৎসার নিশ্চিত করার মাধ্যমে রোগীকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো সম্ভব। প্রাথমিক অবস্থায় কেবলমাত্র অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। তবে যদি অস্থিমজ্জা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাহলে কেমোথেরাপি দেওয়া আবশ্যক।
একটা সময় ছিল যখন লিউকোমিয়া রোগের কেউ আক্রান্ত হলে দেশের বাইরে চিকিৎসা নেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না। ফলে বাংলাদেশে অনেক মানুষ লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হতো এবং বছরে অনেক মানুষ মারা যেত। তবে বর্তমানে দেশের বাইরে যাওয়ার তেমন কোনো প্রয়োজন হয় না। বরং লিউকোমিয়ার উন্নত চিকিৎসা দেশের ভেতরে পাওয়া যায়। সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কেমোথেরাপি দেওয়ার যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেবলমাত্র কেমোথেরাপি এবং অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে ভালো করা সম্ভব ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। ক্ষেত্র বিশেষে চিকিৎসা অন্যরকম হতে পারে।
মনে রাখবেন লিউকেমিয়া রোগের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবহেলা নয়, বরং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে শনাক্ত করে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নিরাময় করা আবশ্যক।