কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি, চট্টগ্রাম
ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি
জায়গা বর্ণনাঃ প্রতিষ্ঠাকালে এই এলাকাটি একটি বিশাল ধানের ক্ষেত ছিল, যদিও বর্তমানে এটি বেশ উন্নত এলাকা এবং শহরের প্রানকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ তখন ছিল ব্রিটিশ শাসনাধীন। সেই সময়কার যুদ্ধে নিহত অনেক সৈনিকের সম্মানার্থে ব্রিটিশ সৈন্যদের অধীনে বাংলাদেশ ও এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি সমাধিস্থল তৈরি করা হয় যা ‘কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি’ নামে পরিচিত। এখানে আপনি দেখতে পাবেন শ্যামল সুবুজ ঘাসের শ্যামল ছায়ায় শান্ত, নিরিবিলিভাবে সারিবদ্ধ হয়ে শুইয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনা ও বিমান বাহিনীর ৭৫১ জন বীর যোদ্ধা। এখানে ১৭টি অজানা ব্যক্তির মৃতদেহ সমাধিস্থল করা হয় আর দেশি ও বিদেশী সৈন্যদের প্রায় ২০টি সমাধি বিদ্যমান। বাংলাদেশের লুসাই, ঢাকা, খুলনা, যশোর, কক্সবাজার, ধোয়া পালং, দোহাজারি, রাঙ্গামাটি এবং পটিয়ার অস্থায়ী সমাধি থেকে আরও অনেক লাশ নিয়ে এসে সমাধিস্ত করা হয় কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি চট্টগ্রামে। কবরস্থানের মাঝখানে বিশালাকার একটু ক্রুশ মাথা উঁচু করে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার পরই (পূর্ব দিকে) আছে ছোট্ট প্রার্থনা ঘর।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাণিজ্যিক নৌবহরে যে সাড়ে ছয় হাজার নাবিক মারা যান, তাদের নাম ও পদবি এই মেমোরিয়াল বুকে লিখিত আছে। পাশের কুটিরে সংরক্ষিত একটি রেজিস্টারে ৭৫৫ জন সৈনিকের নাম, পদবী ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রিতে ৭৫৫ জন সৈনিকের প্রত্যেককে স্ব-স্ব ধর্মীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। সমাধিক্ষেত্রের একটি স্থাপনায় রাখা রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ আছে আরও ৬৫০০ জন যুদ্ধে নিহত নাবিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং ১৫টি ডুবে যাওয়া জাহাজের নাম। এছাড়া এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) চট্টগ্রাম-বোম্বের একটি স্মারক বিদ্যামান। এটিতে রয়েছে- যুক্তরাজ্যের ৩৭৮ জন, কানাডার ২৫ জন, অস্ট্রেলিয়ার ৯ জন, নিউজিল্যান্ডের ২ জন, অবিভক্ত ভারতের (বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান) ২১৪ জন, পূর্ব আফ্রিকার ১১ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৯০ জন, বার্মার ২ জন, নেদারল্যান্ডসের ১ জন ও জাপানের ১৯ জন।
যাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ প্রতিদিন সকাল ৮-১২টা এবং বিকাল ২-৫টা খোলা থাকে। সর্ব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকেঃ বিআরটিসি এর বাসগুলো ছাড়ে ঢাকা কমলাপুর টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছাড়ে, আর অন্যান্য এসি, ননএসি বাস গুলো ছাড়ে সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য সার্ভিস গুলো হল এস.আলম ও সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভূতি। চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে ৮কিমি দূরে অবস্থিত অপরূপা চট্টগ্রাম চিড়িয়খানা।
অন্য শহর থেকেঃ দেশের প্রায় সব কয়টি জেলার সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। আপনি আপনার শহর থেকে নিজের পছন্দ মত বাসে এসে চট্টগ্রাম শহরে এ কে খানে নামবেন এবং সেখান থেকে সি এন জি বা রিক্সা যোগে চলে যাবেন ফয়স লেকে।
নদী পথেঃ বরিশাল, খুলনা পটুয়াখালী ইত্যাদি জেলার সাথে চট্টগ্রামের রয়েছে লঞ্চ/ইস্টিমার সার্ভিস। সুতরাং আপনি নদী পথে ও চট্টগ্রাম আসতে পারেন।
রেলওয়েঃ ঢাকা থেকে আশুগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া, কুলিল্লা, চান্দপুর, ফেনী হয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। তাছাড়া সিলেট থেকে ও ট্রেন সার্ভিস রয়েছে।
***চট্টগ্রাম শহরে জিইসি মোড় থেকে সোজা পূর্ব দিকে হেঁটে গেলে পাবেন গোলপাহাড় (আপনারা চাইলে হেঁটে আসতে পারেন) না হয় সোজা জিইসি মোড় থেকে রিকশা নিয়ে আসতে পারেন। রিকশা ভাড়া ২০-২৫ টাকা নিবে। সেখান থেকে একটু সোজা গিয়ে হাতের ডান দিকে যে রাস্তাটা গেছে সেটাই ১৯ নং বাদশা মিয়া চৌধুরীসড়ক। সেই সড়ক দিয়ে একটু গেলেয় হাতের বাম দিকে দেখা যাবে সেই নীরব, নির্জন দৃষ্টিনন্দন স্থান ‘কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি, চট্টগ্রাম’।