সময়ের কাজ সময়ে করবেন যেভাবে

প্রতিবারই নতুন বছর শুরুর সময় কত কিছু করব বলে ঠিক করি। এর আসলে কতটুকু আমরা শেষ পর্যন্ত করি ? এক গবেষণা অনুযায়ী শুধুমাত্র ৮ শতাংশ মানুষই  নতুন বছরে করবে বলে যা ঠিক করে তা শেষ পর্যন্ত করতে পারে। বাকিরা ? বাকিরা কাজটা করার ইচ্ছা আর প্রকৃতপক্ষে করা এই ফাঁদের মধ্যে পরে যায়। কোনো একটা কিছু করা নিয়ে কেন আমরা এই গড়িমসি করি এর কারণ কি কখনো ভেবে দেখেছেন? 

কোনো কাজ করবো বলে গড়িমসি করা যতটা না আমাদের অলসতার সাথে জড়িত তার থেকে বেশি জড়িত আমাদের আবেগপ্রবণতার সাথে। ধরা যাক আপনাকে এখন একটা কাজ করতে হবে। কিন্তু আপনার ইচ্ছা না করায় আপনি নিজেকে বললেন পরে করবো।  এটি আসলে নিজের মস্তিষ্ককে ধোঁকা দেয়ার একটি পদ্ধতি। আপনি যখনই বলেন পরে করবো তখনি আপনি আপনার মস্তিষ্ককে সান্তনা দিচ্ছেন যে আপনি কাজটি করবেন না ব্যাপারটা এমন না বরং কাজটি আপনি পরে করবেন। এভাবে মস্তিষ্ককে ধোঁকা দিতে দিতে এটি একসময় অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। যারফলে শেষ মুহূর্তের আগে আর কাজটি করার আগ্রহ পাওয়া যায় না। আর শেষ মুহূর্তে যখন বাধ্য হয়ে কাজটি করা লাগে তখন আর কাজের ফলাফল আশানুরূপ হয় না।

how to stop procrastination

সমাধানে যাওয়ার আগে চলুন সম্পূর্ণ বিষয়টিকে বুঝতে চেষ্টা করি।

কোনো একটা কাজ শুরু করা কেন সবচেয়ে কঠিন?  

কোনো একটা কাজ একবার করা শুরু করলে তা সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু কাজটি শুরু করাই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন ধাপ। আমরা বলতে গেলে কোনো একটা কাজ শুরু করার সময়ই সবচেয়ে বেশি গড়িমসি করি। এই গড়িমসির পিছনে যেই কারণ গুলো থাকতে পারে-

কাজটিতে ব্যর্থ হওয়ার ভয়:

আমরা যখনি সন্ধিহান থাকি যে একটি কাজ করতে পারবো কি পারবো না তখন আমরা নিজের অজান্তেই এই চিন্তা থেকে বের হওয়ার জন্য মস্তিষ্ককে পরে করবো বলে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করি। পরে করবো বলে নিজেকে সান্তনা দেয়াই হচ্ছে কোনো একটা কাজ শুরু করার পিছনে অন্যতম বাধা।

আবেগপ্রবণতা: 

আমাদের মস্তিষ্ক এমন ভাবে তৈরী যে আমরা যে কাজটিতে আনন্দ/আরাম পাই সে কাজের প্রতিই মস্তিষ্ক আমাদের বার বার আগ্রহী করে তুলবে। যার কারণে পছন্দ করি এমন কোনো কাজ রেখে নতুন কিছু শুরু করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

করার ইচ্ছা নেই এটি মানতে না চাওয়া: 

মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব অনুযায়ীই আমরা আমাদের খারাপ দিক সরাসরি মানতে চাই না। যার কারণে কোনো একটা কাজ করবনা এইটা সরাসরি আমরা মানতে চাই না। এর থেকে পরে করবো বলে নিজেকে সান্তনা দিতে বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

অলসতা নাকি নেতিবাচক আবেগ-প্রবণতা?  

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতে আমরা কোনো একটা কাজ সময় মতো করা নিয়ে যেই গড়িমসি করি এর পিছনে যতটানা অলসতা কাজ করে তার থেকে বেশি কাজ করে নেতিবাচক আবেগপ্রবণতা। বেশিভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমরা কোনো একটা কাজ পরে করবো বলে যখন রেখে দেয় তখন বসে থাকিনা বরং এমন কোনো কাজ করি যেটি করতে আসলে আমরা পছন্দ করি। এ ক্ষেত্রে আসলে অলসতার কথা বলা যায় না। কারণ আমরা অন্য একটি কাজ ঠিকই করছি। ধরাযাক আপনার একটি কাজ করতে হবে আবার আপনার একটি সিনেমা দেখতেও ইচ্ছে করতেছে। এই রকম অবস্থাতে বেশিভাগ মানুষই কাজটি পরে করবো চিন্তা করে সিনেমা দেখা শুরু করবে। এখানে আপনি আপনার নেতিবাচক আবেগের কাছে হেরে গেলেন।

কেন আমরা এইরকম করি তা হয়তো কিছুটা বুঝা যাচ্ছে এখন। চলুন তাহলে এখন সমাধানের দিকে যাওয়া যাক।

সচেতন হতে শুরু করুন:

কোনো কিছুতে সফল হওয়ার প্রথমধাপই হচ্ছে বিষয়টি নিয়ে সচেতন হওয়া। যখনই আপনি কোনো কাজ পরে করবেন বলে ঠিক করছেন তখনই নিজেকে প্রশ্ন করুন যে কেন আপনি পিছাচ্ছেন কাজটি? কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ আছেকিনা এর পিছনে? নিজেকে যখন প্রশ্ন করতে শুরু করবেন এটি আপনাকে আপনার আবেগপ্রবণতা সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে। যা আপনাকে সাহায্য করবে কাজ নিয়ে গড়িমসি করার স্বভাব থেকে বের হয়ে আসতে।

কাজটি পারবেন কি পারবেন না তা চিন্তা না করে শুরু করুন প্রথমে: 

কোনো একটা কাজ শুরু করা সবচেয়ে কঠিন ধাপ। কোনো একটি কাজ শুরু করার জন্য আমরা ‘ ৫ সেকেণ্ড নিয়ম’ নেমে একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। এটি অনুযায়ী কোনো একটি কাজ করতে হবে এটি চিন্তা করার ৫ সেকেন্ড এর ভিতরে আপনাকে কাজটি করা শুরু করে দিতে হবে যাতে করে আপনি কাজটি পরে করবেন এই চিন্তা আপনার মাথায় না আসতে পারে। কোনো একটা কাজ শুরু করার ব্যাপারে এই উক্তি দেখা যেতে পারে-

“You don’t have to be great to get started but you have to get started to be great.”
― Les Brown

 

আমাদের সবার হাতেই এমন অনেক কাজ আছে যা আমরা করবো করবো করে রেখে দিয়েছি। কিন্তু আর করা হয়ে উঠছে না। তাই চলুন সচেতন হয়ে একটি একটি করে কাজ গুলো করা এখন থেকেই শুরু করা দেই।

Similar Posts

2 Comments

  1. আমার ক্ষেত্রে এটা খুবই হয়। একটা কাজ করবো, শুরুই করা হয়না।

    তবে শুরু করলে এক দুইদিন খুব বেশি এফোর্ট দেই, এরপর দেখা যায় কমপ্লিট করার আগেই আবার বাদ দিয়ে দেই। হাহাহা।

    লেখাটা ভালো হয়েছে। ?

Comments are closed.