ফোনে কথা বলার সময় যেভাবে নিজেকে স্মার্টলি রিপ্রেজেন্ট করবেন
কথায় আছে ভদ্রতাই সৌন্দর্য। আপনার ভেতরের মানুষটা ঠিক কতটুকু ভদ্র তার ওপর নির্ভর করছে আপনার সৌন্দর্যতা। রূপে-গুণে সুন্দর কিন্তু আসল সুন্দর নয়। আপনার ক্যারেক্টার, পার্সোনালিটি এবং ভদ্রতাই আপনার আসল সৌন্দর্য প্রকাশ করে। অফিশিয়াল কোন কাজে অংশগ্রহণ করার সময় কিন্তু আপনার রূপ চেহারা দেখে আপনাকে চাকরিতে ঢুকায় না। বরং আপনি ঠিক কতটা স্মার্ট, কতটা ভালো ব্যক্তিত্বের মানুষ তার উপর নির্ভর করে আপনাকে কাজে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেয়। জীবনের প্রত্যেকটা ধাপেই নিজের স্মার্টনেস দ্বারা নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করতে হয়। এতে করে যেমন নিজের কাছে নিজেকে নিয়ে একটা শান্তি কাজ করে, ঠিক ওপর পাশের মানুষগুলো আপনাকে নিয়ে বেশ একটা ভালো ধারণা রাখতে পারে। তাই নিজের প্রয়োজনের জন্য হলেও সমাজের কাছে নিজেকে ভালোভাবে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য স্মার্টনেস মেইনটেইন করতে হবে।
যেহেতু জীবনের প্রত্যেকটা ধাপেই স্মার্টনেস প্রয়োজন, তাই ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রেও কিন্তু স্মার্টনেসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অর্থাৎ আপনি ফোনে যখন একজনের সাথে কথা বলছেন তখন যদি আপনি একটু স্মার্টলি কনভারসেশন চালান, তবে ফোনের অপর পাশের ব্যক্তি বা ব্যাক্তিগণ আপনার আচরণে মুগ্ধ হয়ে যাবে। এই মুগ্ধতাই পরবর্তীতে আপনাকে এনে দিতে পারে সম্মান ও বিশাল বিশাল সুযোগ। আপনি নিশ্চয়ই এগুলো হাতছাড়া করতে চান না।
আজকের আর্টিকেলটিতে মূলত আলোচনা করা হবে ফোনে কিভাবে স্মার্টলি কথা বলা যায়। যাতে করে ফোনের অপর পাশে থাকা ব্যক্তিকে আপনি মুগ্ধ করতে পারবেন। চলুন শুরু করা যাক –
শুরুটা সালাম দিয়ে হোক
আমরা প্রত্যেকে ফোন ধরার সময় হ্যালো বলি। কিন্তু জানেন কি? সুন্দর করে সালাম দেওয়াটা কিন্তু আপনাকে অন্যের সামনে স্মার্ট করে তোলে। একবার ভেবে দেখুন আপনি অপর পাশের ব্যক্তির ফোন ধরেই তার জন্য শান্তি কামনা করছেন ব্যাপারটা কি অনেক কুল না? অবশ্যই জিনিসটা বেশ সুন্দর। তবে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হয়ে থাকলে আদাব নমস্কার ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে কনভার্সেশন শুরু করাটা কিন্তু বেশ দারুণ।
আগেই ভেবে নিন কি বলবেন
আপনি একজন মানুষকে ফোন দিয়ে বসিয়ে রেখেছেন শুধুমাত্র আপনি কি বলবেন তাই ভেবে পাচ্ছেন না বলে। একটা মানুষের সাথে কনভারসেশন চালাতে হলে ভালোভাবে কথা বলা অনেক জরুরী। তাই একথা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাকে ফোন করার পূর্বেই কিংবা ফোন রিসিভ করার পূর্বে ঠিক করে রাখতে হবে যে আপনি তার সাথে কি নিয়ে কোন ব্যাপারে কেন কথা বলবেন। একটা নির্দিষ্ট সিরিয়াল মেইনটেইন করে সে ব্যাপারে তার সাথে কথা বলুন। কখনো কাউকে বসিয়ে রেখে চিন্তা করবেন না কি নিয়ে কথা বলবেন। এটা যতটা না অভদ্রতা ততটাই বিরক্তিকর।
ধীরে ধীরে কথা বলুন
অনেকেই আছেন ফোন করার পর অনেক দ্রুত কথা বলতে থাকেন। মস্তিষ্ককে চিন্তা করার সময় পর্যন্ত দেন না। যার ফলে মুখ দিয়ে অনেক ধরনের উল্টাপাল্টা শব্দ বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে আপনি নিজেই জিভ কেটে বলেন এই কি করলাম, একি বলে ফেললাম!
তাই কথা বলার সময় কখনও তাড়াহুড়া করবেন না। বরং আগে মস্তিষ্ককে সময় দিন কথাটা গুছিয়ে নেয়ার। অতঃপর ভালোভাবে নিজে থেকে ঠিক করে আপনার মুখ দিয়ে শব্দ গুলো বের করুন। কোন তাড়াহুড়া নয়।
নিজেকে রিল্যাক্স রাখুন
কথা বলার সময় হুটহাট ঘাবড়ে যাবেন না। শান্ত থাকুন। শান্ত ভঙ্গিতে ঠান্ডা মাথায় অপর পাশের ব্যক্তির সাথে কথা বলুন। কোন কারণে ঘাবড়িয়ে গেলেও আপনি আপনার আচরণে বা কণ্ঠস্বরে তাকে বুঝতে দিবেন না যে আপনি ঘাবড়ে গেছেন। বরং পরিস্থিতি সামলে বিষয়টা নিয়ে তার সাথে বিস্তারিত আলোচনা করুন।
গভীর শ্বাস নিন
কথার প্রসঙ্গে কোনো একটা কারণে আপনি খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে গেলেন তখন আপনি কি করবেন? অবশ্যই আপনার উত্তেজনার প্রকাশ করবেন না। কেননা এর ইতিবাচক নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে। তাই যদি কথা বলার সময় নিজেকে বেশ উত্তেজিত মনে করেন তখন বড় একটি শ্বাস নিয়ে নিন। কিছুক্ষণ আটকে রেখে শ্বাস ছেড়ে দিন। এতে করে অক্সিজেন আপনার মস্তিষ্কের নার্ভগুলোকে আরাম দেবে এবং আপনি উত্তেজনা থেকে বেরিয়ে আসবেন।
অপর পাশের ব্যক্তির কথা আগে শুনুন
আপনাদের মাঝে অনেকেই রয়েছে যে নিজের কথাই শুধু বলতে চান। অপরপাশের ব্যক্তি কি বলছেন বা কি বলার চেষ্টা করছেন, তা কখনো বুঝতে চান না। শুধু নিজের কথা প্রকাশ করার চেষ্টা করেন। এই বদ অভ্যাস যদি আপনার থেকে থাকে, তবে সাথে সাথে বদলে ফেলুন। অপর ব্যক্তি কি বলছে সেটা শোনার চেষ্টা করুন। অন্যথায় আপনার কথা শুনতে শুনতে যেমন অপর পাশের ব্যাক্তি বিরক্ত হয়ে যাবে, ঠিক তেমনই আপনাকে বাচাল মনে করে আপনার প্রতি একটা বিরূপ ধারণা তার তৈরি হয়ে যাবে।
কথার মাঝে তার নাম উচ্চারণ করুন
একজন মানুষের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস হচ্ছে তার নাম। সুতরাং কথার মাঝে প্রায়ই তার নাম উচ্চারণ করুন। আপনার সম্পর্কে তার ধারণা অনেক ভালো হবে এবং আপনার প্রতি তার আগ্রহ বাড়বে। একই সাথে আপনি হয়ে উঠবেন তার প্রিয় ব্যক্তিত্ব।
প্রিয় পাঠক, এভাবেই ফোনে স্মার্টলি কথা বলে আপনি ফোনের অপর পাশের ব্যক্তির মন জয় করে ফেলতে পারবেন। শুধুমাত্র খেয়াল রাখবেন যে, এমন কোন কাজ করে ফেলবেন না যার কারণে ব্যক্তি আপনার উপর বিরূপ ধারণা পোষণ করে। কাচের গ্লাস একবার ভেঙে গেলে যেমন আর জোড়া লাগে না ঠিক তেমনি ফাস্ট ইম্প্রেশন এ যদি কেউ আপনার প্রতি বিরক্ত হয়ে যান তবে আপনাকে নিয়ে তার ধারণা অনেক ক্ষেত্রে নাও ঠিক হতে পারে। সুতরাং নিজেকে ঠিক রেখে স্মার্ট ভাবে মানুষের কাছে রিপ্রেজেন্ট করতে উপরের টিপসগুলো ফলো করুন। আশা করি ভাল ফলাফল পাবেন।আজকের জন্য এখানেই ইতি টানছি, ধন্যবাদ।