আপেল সিডার ভিনেগার: উপকারিতা ও ব্যবহারবিধি

আজকাল রূপচর্চা ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় আপেল সিডার ভিনেগার এর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। হাজার বছর ধরে মানুষ এটিকে রান্নায় ও ঘরোয়া টোটকা হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এর এ্যান্টি-মাইক্রোবাইয়াল ও এ্যান্টি-অক্সিডেন্টাল গুণ আছে। বলা হয়ে থাকে ওজন কমানো, রক্তে কোলেস্টেরল ও শর্করার মাত্রা হ্রাস করা ও ডায়েবেটিসের উন্নতি হতে পারে নিয়মিত সেবনে। এ ছাড়াও আরো অনেক গুণাগুণ রয়েছে এই বিশেষ ধরণের ভিনিগারের আসুন জেনে নেওয়া যাক এর ভালো মন্দ সম্পর্কে বিস্তারিত –

আপেল সিডার ভিনেগার

আপেল সিডার ভিনেগার আসলে কি?

আপেল সিডার ভিনেগার হলো আপেল এর রস থেকে প্রস্তুতকৃত এ্যালকোহল। আপেলের রসে ঈস্ট মেশানো হয়। যেটি ফারমেন্টেড হয়ে এ্যালকোহল তৈরী হয়। এরপর এত ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আরও ফারমেন্ট করা হয়। এতে তৈরী হয় এসিডিক এসিড। এই এসিডিক এসিডের কারণে এটি কটু গন্ধযুক্ত ও ভীষণ টক। গবেষকদের মতে এই এসিডিক এসিডেই আছে এর সব উপকারিতা।

অপরিশোধিত আপেল সিডার ভিনেগার দেখতে ঘোলা, এই ঘোলটে রঙ এর কারণ হলো মাদার। মাদারে আছে প্রোটিন, এনজাইম ও উপকারি ব্যাকটেরিয়া।

 

আপেল সিডার এর ৬টি ব্যবহার ও এর নিয়ম

  • এটি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে:

সাধারণত জীবানুনাশক ও পরিষ্কারক হিসেবে ভিনেগারের ব্যাবহার চলে আসছে হাজার বছর ধরে। এর মূল উপাদান এসিডিক এসিড ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। নখ ও কানের ইনফেকশন, উকুন, খুশকি ও আঁচিল এর প্রতিকারে এটি ব্যাবহার করতে পারেন।

খাবার সংরক্ষণের জন্য প্রাকৃতিক প্রিজারভিটিভ হিসেবেও আপনি আপেল সিডার ভিনেগার ব্যাবহার করতে পারেন।

  • রক্তের শর্করা কমিয়ে আনে:

    টাইপ ২ ডায়েবটিস নিয়ন্ত্রণ করতে আপেল সিডার ভিনেগার রান্নায় ব্যাবহার করতে পারেন। এটি রক্তে সুগারের পরিমাণ কমিয়ে আনে। কয়েক আউন্স পানির সাথে ৪ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন খাবার আগে।

  • এটি হজমে সহায়তা করে:

    আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া খাবার হজমে সাহায্য করে। তাই সালাদের সাথে ড্রেসিং হিসেবে বা পানির সাথে মিশিয়ে পানীয় হিসেবে এটি ব্যাবহার করতে পারেন।

  • ক্ষুধা নিয়ন্ত্রন করে:

    ব্রেনের যে অংশ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে এটি সে অংশকে এটি দমন করে। ফলে ক্ষুধা কম লাগে। একারণে এটি ওজন কমানোর জন্য পান করতে পারেন খাবারের সাথে বা আগে। এক গ্লাস পানিতে ১ থেকে ২ টেবিল চামচ ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে হবে।

  • ত্বকের যত্নে:

    ত্বকের শুষ্কতা ও এক্সিমা প্রতিরোধের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার ব্যাবহার করতে পারেন। ফেস ওয়াশ ও টোনারের সাথে মিশিয়ে ব্যাবহার করতে পারেন। পানির সাথে মিশিয়ে পাতলা করে তাতে তুলা ভিজিয়ে নিন। মুখ মুছে নিন ঐ ভেজা তুলা দিয়ে। কিছুক্ষণ রেখে ভালোমত ধুয়ে ফেলুন।

  • ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে:

    ত্বকের পিএইচ ৫ ব্যালান্স রক্ষা করে আপেল সিডার ভিনেগার। এটি চুলকে উজ্জলও করে। ভেজা চুল ধুয়ে ফেলুন পানির সাথে মিশিয়ে। ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপরে আবার ধুয়ে ফেলুন ভাল মত।

 

আপেল সিডার ব্যবহারে যা করবেন না

  • আপেল সিডার ভিনেগার খুবই এসিডিক। তাই সরাসরি ব্যাবহার করবেন না। অন্য কোন পানীয় বা খাবারের সাথে মিশিয়ে পাতলা করে নিবেন।
  • এটি খাবার পর পান করার চেয়ে খাবার আগে পান করা বেশি উপকারী। বিশেষ করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের পাচক রস কমে যায়। ফলে খাবার পর বদহজম, পেটফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা হয়। তারা খাবার আগে একটু ভিনেগার সেবন করলে উপকার পাবেন।
  • এটি ব্যাবহারের সময় খেয়াল রাখবেন যেন নি:শ্বাসের সাথে নাকে চোখে না চলে যায়। এতে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি হতে পারে।
  • এটি যেহেতু ভীষণ এসিডিক তাই দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করতে পারে। তাই স্ট্র দিয়ে পান করলে ভাল। তা না হলে এটি পানের পর মুখ ভালমত কুলি করে ধুয়ে নিবেন।
  • যদি আপনি এর আগে কখনও এটি ব্যাবহার না করে থাকেন তবে শুরুতেই বেশি নিবেন না। প্রথমে খুব অল্প পরিমানে পান করে আস্তে আস্তে পরিমান বাড়াবেন।
  • ঘুমাতে যাবার ঠিক আগে পান করবেন না। এত শুয়ে থাকা অবস্থায় এসিড খাদ্যনালীতে চলে এসে জ্বালাপোড়া হতে পারে। যেকোন এসিডিক খাবার গ্রহণের কমপক্ষে আধঘণ্টা পরে ঘুমাতে যাবেন।
  • সরাসরি ত্বকে লাগাবেন না। এত চুলকাতে বা জ্বালা করতে পারে।

Similar Posts

One Comment

  1. অনেক সুন্দর হয়েছে লেখাটা।উপকারী ও মনে হয়েছে।আপনার থেকে আরো চমৎকার সব লেখা আশা করছি।

Comments are closed.