মাহবুবা হক / জুন 12, 2020
চুল পড়ার সমস্যা খুবই ভয়াবহ আর এটা আজকাল প্রায় সব মানুষের মধ্যে দেখা যায়। প্রতিদিন ৫০-১০০টা চুল পড়া খুব স্বাভাবিক। কিছুদিন পরেই সেখানে নতুন চুল উঠতে দেখা যায়। কিন্তু যদি ব্যাপারটা হয় এমন, শুধু চুল পড়ছেই কিন্তু নতুন কোন চুল গজাচ্ছেনা তাহলে তার দিকে নজর দেবার সময় এসেছে। অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, পুষ্টির ঘাটতি, এলার্জি, হরমোন ভারসাম্য, কম কার্যকর থাইরয়েড, ঠিকমতো চুলের যত্ন না নেয়া এবং জেনেটিক কারণে চুল পড়তে পারে। চুল পড়ার সমস্যা পুরুষ আর মহিলা দুজনেরই সাথে হতে পারে। কারন মাথায় টাক পড়লে, আমাদের সৌন্দর্য একেবারেই কমে যায়।
১। এনড্রোজেন হরমোনঘটিত কারনে চুল পড়তে পারে যদি রোগী বয়স্ক হয়ে থাকেন। পারিবারিক ভাবে তিনি এটি বহন করে থাকতে পারেন। এই ধরনের চুল পড়ায় আস্তে আস্তে কপাল চওড়া হতে থাকে। বাচ্চাদের এটা হয় না।
২।চুলে মাত্রারিক্ত ক্যামিকেলস এর ব্যাবহার- চুলে ডাই ব্যবহার, ব্লিচ, কার্ল এবং হেয়ার ড্রায়ার এর ব্যবহার—বেশি গরম বাতাসে চুল পড়ে যায়।
৩।শাওয়ারের পানি যেখানে প্রতিদিন বেশি লাগে বিশেষ করে বাথ্রুমে ঝর্নায় গোসল করলে।.
৪। জ্বর, মানসিক চাপ, সার্জারি পরবর্তি সময়ে।
৫। ফানগ্যাস (রিং ওয়ার্ম) সংক্রমণ।
৬। এলোপেসিয়া এরিয়াটা- যেটা ফ্যামিলিগতভাবে হয়। শরীরের ইমিউন সিস্টেম হেয়ার ফলিকেলসের বিরুদ্ধে কাজ করে।
৭। নিজের চুল নিজে টেনে ছিড়ে আঘাত করার বদঅভ্যাস। এটি একধরনের মনোরোগ। একে Trichotillomania বলা হয়।
৮। থাইরয়েড হরমোনের অভাবজনিত সমস্যা।
৯। সুষম পুষ্টির অভাব।শরীরে আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, বায়োটিন, ভিটামিন এর অভাবে চুল পরে যেতে পারে।
৯। ক্যানসার রোগের চিকিৎসায় ব্যবহূত কেমোথেরাপি ও র্যাডিয়েশনের কারনে।
চুল পড়া থামানো এবং নতুন চুল গজাতে সেই সাথে চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে চাইলে খুব বেশি পরিশ্রম করার প্রয়োজন নেই। কিছু সহজ টিপস গ্রহন করলেই চুলের ঘনত্ব আবার আপনি ফিরে পেতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নিই চুলের যত্নে কিছু সহজ ও উপকারী টিপস
প্রতিদিন সকালে একটি করে আমলকী খান। আমলকী চুলের কাঠামো শক্তিশালী হতে সাহায্য করে। আমলকী খেলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং ত্বক ও চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। আপনার চুলের পরিবর্তন কিছুদিনের মধ্যেই টের পাবেন।
একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ আমলকী গুঁড়ার অথবা বাটার সাথে ২ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার এটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে এক ঘন্টা রাখুন। তারপর শ্যাম্পু করে নিন এবং সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক-টি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন।
আমলকীতে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি যা চুলের স্বাস্থ্য সুন্দর রাখে। এর ভিটামিন সি চুলের গোড়ায় কোলাজেন-এর মাত্রা বৃদ্ধি করে চুল বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আর লেবুর রস চুলের খুসকি দূর করে এবং আমলকীর সাথে যুক্ত হয়ে চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে।
রুক্ষ চুল,শুষ্ক চুল, চুল পড়া এই রকম চুলের শত শত সমস্যায় প্রতিটি নারীকে প্রতিনিয়ত পড়তে হয়। অ্যালোভেরা বা ঘৃত কুমারী স্বাস্থ্যরক্ষার পাশাপাশি ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দারুন কার্যকর। অ্যালোভেরা পাতার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ও অ্যালোমিন শরীর, ত্বক এবং চুলের জন্য বেশ উপকারী এবং কার্যকর।
একটি অ্যালোভেরা পাতা থেকে এর জেলটি বের করে নিন। তারপর মসৃণভাবে পেস্ট করে নিন। এবার মাথার স্ক্যাপ্ল-এ ভালো করে ঘষে ঘষে লাগিয়ে রাখুন প্রায় ১০-১৫ মিনিট। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরা জেল, নারকেল তেল এবং মধুর প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া এলোভেরা জেল, ডিম এবং টক দই এর হেয়ার প্যাক ও চুলের পুস্টি যোগাতে সাহায্য করে।
অ্যালোভেরা মাথার তালুর মৃত কোষ মেরামত করে চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল অনেক বেশি ঘন এবং লম্বা করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।
চুল পড়া শুরু হয় যখন আপনার মাথার হেয়ার ফলিকল্গুলো পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পায়না। এর ফলে চুলের গঠনের এবং পুস্টির জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেল থেকে চুল বঞ্চিত হয়। তাই চুল ঝরে পড়ে অকালে। আপনার স্কাল্প এর হেরার ফলিকলস হাতের সাহায্যে বা যে কোন মাসেজার দিয়ে ম্যাসেজ করে রক্তের প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব চুলের গোঁড়ায়।
আয়রন এবং প্রোটিন একেবারে বেসিক উপাদান চুল গঠনের।তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এদের রাখুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। আমাদের চুল মূলত কেরাটিন দিয়ে গঠিত। এটি অ্যামিনো এসিড দিয়ে তৈরি এক ধরণের প্রোটিন।কেরাটিন দুর্বল হয়ে গেলে চুল ভেঙ্গে যায় এবং পড়তেও শুরু করে। তাই চুল পড়া বন্ধ এবং নতুন চুল গজানোর জন্যে অবশ্যই আপনার শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমানে অ্যামিনো এসিড সরবরাহ করতে হবে।
পরিমিত পরিমাণে আয়রন আর জিঙ্ক নতুন এবং দ্রুত চুল গজানোর জন্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মটরশুঁটি, বাদাম, কলিজা, মাংস, দুধে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় জিংক আর আয়রন বিদ্যমান।
এ ভেষজ উপাদান চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি চুলে নিয়ে আসে ঝলমলে ভাব। মেহেদির ভেষজ গুণ চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। ২ মুঠো তাজা মেহেদি পাতা অল্প পানি দিয়ে বেটে নিন। আপনি চাইলে এর সাথে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল যোগ করতে পারেন। এবার এটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল আবৃত করে রাখুন ৩০-৩৫ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। প্যাক-টি মাসে ১ বার ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ডিম, মেহেদি বাটা অথবা গুড়া মেহেদি এবং যে কোন তেল একসাথে মিশিয়ে চুলে দিতে পারেন। এরসাথে আমলকী যোগ করতে পারেন।
মেহেদি প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কার করে চুল তাই মেহেদি লাগানোর পর আলাদা করে শ্যাম্পু করার দরকার হয়না ।মেহেদি চুলের আদর্শ খাদ্য। এটি চুলকে ভেতর থেকে মজবুত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপের ফলে আমাদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্যে পার্থক্য দেখা যায়। দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ বেড়ে গেলে আমাদের চুল পড়া শুরু হয়ে যায়। তাই দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ কমাতে হবে এবং সবসময় পজেটিভ চিন্তা করতে হবে, যাতে চুল না পড়ে আর পড়লেও নতুন চুল গজাতে শুরু করে।
চুলের বৃদ্ধিতে পেঁয়াজ ও রসুন দারুণ কাজ করে। কারণ এর মধ্যে প্রচুর সালফার রয়েছে, যা চুল পড়া রোধ করে এবং নতুন চুল গজায়। বিশেষ করে পেঁয়াজ চুলের ভেঙে যাওয়া রোধ করে প্রাকৃতিকভাবে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
পানি, গোলমরিচ ও পেঁয়াজের রস একসঙ্গে মিশিয়ে ‘হেয়ার মাস্ক’ তৈরি করুন। এরজন্য টুকরো করে কাটা বড়সড় একটা পেঁয়াজ, দুই কাপ পানি এবং এক টেবিল চামচ গোলমরিচ নিন। একটি পাত্রে পানি ও পেঁয়াজ দিয়ে ১০ মিনিট ফুটান। এরপর এর থেকে পেয়াজের টুকরো গুলো তুলে নিন। পানি একটু ঠাণ্ডা হয়ে আসলে এতে গোল মরিচের গুঁড়া দিয়ে দিন। এখন এই মিশ্রণ বোতলে রেখে ব্যবহার করতে পারবেন। চুলে মাখানোর পর শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন প্রায় ২ ঘণ্টা। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
শসাতে আছে যথেষ্ট পরিমাণে সিলিকা, সালফার এবং ভিটামিন এ। এই উপাদানগুলো চুলের বৃদ্ধি ঘটায় এবং চুল পড়া বন্ধ করে। নিয়মিত কাঁচা শসার জুস খান। এটি স্বাস্থ্যকর এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন খোসাসহ একটি কচি শসা খেলে নতুন চুল গজাবে।
মেথিতে রয়েছে একপ্রকার হরমোন যা চুলের বৃদ্ধি ঘটায় আর হেয়ার ফলিকলকে মজবুত রাখে। মেথিতে আছে নিকোটিন অ্যাসিড ও লেসিথিন নামক উপাদান যা পাতলা চুল ঘন করতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুনাগুণ স্ক্যাল্পের ইনফেকশন রোধ করে এবং প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসাবেও কাজ করে।
২ টেবিল চামচ মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন ভিজিয়ে রাখা মেথি দানা ছেঁকে নিয়ে এর সাথে আধা কাপ পরিষ্কার পানি যোগ করে ব্লেন্ডার-এ মসৃণভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এবার এই পেস্ট-টি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে নিন। এটি সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করুন।
কিন্তু অনেক সময় বাটা মেথি ব্যবহার করলে চুল ধোয়ার পরেও চুলে আটকে থাকে এর খোসা। তাই যদি মেথি নারিকেল তেলের সাথে ফুটিয়ে নেন মেথি দানা গুলো লাল হয়ে যাওয়া পর্যন্ত, তাহলে চুলে ব্যবহার করে অনেক সহজ হবে। এই তেল ডিমের কুসুম, টক দই, অথবা লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে স্কাল্পে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং নতুন চুল গজাতে শুরু করবে।
নতুন চুল গজানোর জন্য ১:১ অনুপাতে অলিভ অয়েল এবং কালিজিরার তেল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে লাগান। এর পর একটি নরম তোয়ালে কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে এবং পানি নিংড়ে পুরো চুল মুড়িয়ে মাথায় লাগিয়ে রাখুন ৪০ থেকে ১ ঘন্টা সময়ের জন্য। নিয়ম করে সপ্তাহে ২ বার এভাবে চুলের যত্ন নিলে নতুন চুল গজায়
FILED UNDER :অন্যান্য , পাঁচ মিশালী , লাইফস্টাইল , স্বাস্থ্য কথন
Comments are closed.
Comments
fatemabd says
ধন্যবাদ মাহবুবা আপু। চুলের সমস্যার সমাধানের জন্য খুব সুন্দর লিখেছেন।
Rakib says
অনেক ভালো লাগলো আপু। আপনার টিপস অবশ্যই ব্যাবহার করে দেখবো। আশা করছি কাজ দিবে।
Sajid says
আমার দীর্ঘদিন ধরে চুল পড়ছে ভাবছি আপনার কথাগুলো ফলো করব। কতদিনে ফল পেতে পারি??
Sabbir Rahman says
আপু উপরের কোনটা বেশি ফলো করলে শীঘ্রই ফল পাব?