ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেন যেভাবে
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন ধরণের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও গেজেট আমাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। দিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় হচ্ছে অনলাইনে।আমরা প্রযুক্তির উপর খুবই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো গেজেট ব্যবহার করছি। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ইন্টারনেট আরও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে, সেই সাথে বাড়ছে এর ব্যাবহার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং তথ্য-প্রযুক্তির গ্যাঁড়াকলে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সময়। যে কারণে সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কের ভিত নষ্ট হচ্ছে। ইন্টারনেট-আসক্তি আমাদের কর্মস্পৃহা এবং সৃষ্টিশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে। আর এসব কারণে জীবনের প্রকৃত অর্থ হয়ে গেছে দূরীভূত।
আমরা সবাই কম বেশী অনুভব করি যে এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। কিন্তু বের হওয়ার উপায় কী? তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তির কিছু কার্যকর উপায়।
১। বদলে ফেলুন ঘরের পরিবেশ:
ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকতে হলে নিজেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় এমন ডিভাইসকে দূরে রাখা খুবই জরুরী।
- কম্পিউটার বা ল্যাপটপ নিজের বেডরুমে না রেখে কম্পিউটার রুম অথবা অন্য রুমে রাখুন।
- যে কোন প্রকার চার্জার রুমের বাহিরে রাখার চেষ্টা করুন। কারণ যেকোন প্রকার শব্দ অথবা ভাইব্রেশন রুমের পরিবেশ-এ বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
- টেলিভিশন,মোবাইল বা কম্পিউটারের মতো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের নীল আলো অনেক সময় অনিদ্রার কারণ হতে পারে। তাই ঘুমানোর অনেক আগে থেকেই এগুলোর ব্যবহার পরিহার করুন।
২। অবসর সময় কাটুক অ-ডিজিটাল কার্যালাপে:
অবসর সময়টুকু অনলাইনে ব্যয় না করে অন্যান্য কাজে ব্যয় করতে পারেন।
- অনলাইনে আড্ডা না দিয়ে বন্ধুদের সাথে বাইরে কোথাও দেখা করতে পারেন বা আড্ডা দিতে পারেন। এতে করে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
- বন্ধুরা কিংবা পরিবারের সবাই মিলে ভ্রমণ করতে পারেন। সবাই একসাথে দর্শনীয় কোন স্থানে ঘুরে আসলে আপনার মন আনন্দময় ও প্রফুল্ল হয়ে উঠবে।
- অবসর সময় বা ছুটির দিনগুলোতে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
- ইন্টারনেট ব্যবহার কমিয়ে তার পরিবর্তে শখের কোন কাজ বেছে নিন। যেমন: ছবি আঁকা, বই পড়া, দাবা খেলা ইত্যাদি।
নিজেকে সপ্তাহে অন্তত একদিন ভার্চুয়াল জগত থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করুন।
৩। মাদককে না বলার মতোই ইন্টারনেট আসক্তিকে না বলুন!
গবেষণায় অনুযায়ী, কেউ যদি প্রয়োজনীয় কাজ ব্যাতীত সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টার বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাহলে তাকে ইন্টারনেট আসক্ত বলা হয়। ইন্টারনেট আসক্তিকে না বলার কিছু উপায় হল:
- ইন্টারনেট ব্যববহারের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন করুন, যে সময়ে আপনি অনলাইনের যাবতীয় প্রয়োজনীয় কাজ করবেন।
- সারাদিন অনলাইনে ব্যয় না করে দিনের নির্দিষ্ট পরিমান সময় অনলাইনে ব্যয় করুন।
- এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে যেগুলোতে আপনার একাউন্ট রাখার তেমন প্রয়োজন নেই। যেমনঃ স্ন্যাপচ্যাট, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি। এগুলো শুধু সময়ের অপচয়ই নয়, আসক্তিও বটে। তাই অপ্রয়োজনীয় ওয়েবসাইটের নোটিফিকেশন ডিজেবল করে রাখুন। এছাড়া কিছু ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ আছে যেমনঃ ভাইবার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি। সবগুলো একবারে ব্যবহার না করে যেকোন একটি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
- কিছু সফটওয়্যার আছে যেগুলো time lock সমর্থন করে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পর অটোমেটিকভাবে লক হয়ে যাবে। আপনার পরিবারের অন্য কাউকে দিয়ে পাসওয়ার্ড সেট করে নিবেন, যেন শুধুমাত্র জরুরী প্রয়োজন ছাড়া আনলক করতে না পারেন। এতে করে ইন্টারনেট আসক্তি অনেক কমে আসবে।
ইন্টারনেট আসক্তি এখন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এটি মাদকাসক্তির মতোই মারাত্মক একটি সমস্যা। অতিরিক্ত অনলাইন আসক্তি সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। তাই ইন্টারনেটে বেশি সময় না দিয়ে পরিবারকে ও পরিচিতজনকে সময় দিন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
বই পড়ার অভ্যাসটা করলে বেশি ভালো হয়। এতে করে বইয়ের নেশায় আসক্ত হলে ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়। মস্তিষ্কের জন্যও ভালো।
জ্বী বই পড়ার অভ্যাস করা জরুরী। বই আপনার ইতিবাচক চিন্তাশক্তি ও কল্পনা শক্তি বাড়ায়। কিন্তু বেশি বেশি ইন্টারনেটের ব্যবহার আমাদের ইতিবাচক চিন্তাশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে।
সময়োপযোগী লেখা। এখনকার যুগে বেশিরভাগই তো ইন্টারনেটে আসক্ত। ইভেন আমিও। আমরা ইন্টারনেট চালাইনা। ইন্টারনেটই আমাদের চালায় যেন।
জ্বী ভাই একদম ঠিক বলেছেন। ইন্টারনেট এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বলা বাহুল্য ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে নিজেরাই সেই জালে আটকে পড়ছি।