যত্ন নিন আপনার প্রিয় ক্যামেরার।

ছবি তুলতে বা দেখতে পছন্দ করেনা এই সময়ে এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। আর বর্তমান সময়ে ক্যামেরা নামটার সাথে পরিচিত নন এমন মানুষ পাওয়া কিন্তু আরও দুষ্কর । এই ছোট্ট কিউট জিনিসটাকে নিয়ে আমাদের আগ্রহও যেনো অনেক বেশি। অনেকের তো আবার ক্যামেরা নিয়ে কৌতুহলের শেষই নেই। দিন দিন এর চাহিদা এবং ব্যাবহার দুইটাই কিন্তু বেড়ে চলেছে। বাড়বেই না কেনো বর্তমান বিশ্বের কর্মক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তাও কিন্তু নেহাতই কম নয়।

অনেকে তো আবার ক্যামেরা কেই বেছে নিচ্ছেন তাদের কাজের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে। সাংবাদিক থেকে শুরু করে ফটোগ্রাফার সবার কাজের প্রধান অস্ত্রই তো হচ্ছে এই ক্যামেরা। শখের বসে বা টুকটাক সুন্দর মুহূর্ত গুলো ফ্রেমে বন্দী করার জন্য ক্যামেরা কেনা মানুষের সংখ্যাও কিন্তু কম নয় এখন। এই ক্যামেরার প্রতি মানুষের আগ্রহ কিন্তু একদিনের না। সেই যে ফিল্ম ক্যামেরা দিয়ে শুরু হয়েছিলো আজকে ডিজিটাল ক্যামেরা বা ডিএসএলআর, এসএলআরের যুগে এসে সে আগ্রহ যেনো আরও অনেকটাই বেড়ে গেছে।

এই যে এতোটা শখের এবং এতোটা কাজের একটা জিনিস এর যত্নে আমাদের কি কি করা উচিৎ সে সম্পর্কে আমরা জানিতো? একটুখানি অসচেতনতাই কিন্তু‌ এতো শখের জিনিসটার ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসতে পারে।

তো চলুন কিভাবে আমরা আমাদের ক্যামেরার প্রতি যত্নশীল হতে পারি সে ব্যাপারে কথা বলা‌ যাক।

পানি‌ থেকে দুরে‌ রাখা : বর্তমানে যে ডিজিটাল ক্যামেরা গুলো পাওয়া যায় এর সবচেয়ে বড়‌ শত্রুই হচ্ছে পানি।যে কেনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যেই পানি ঢুকলে তার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ক্যামেরা ও তার ব্যাতিক্রম নয়। ক্যামেরার মধ্যে পানি ঢুকলে এই পানি এর মাদারবোর্ডের ক্ষতির কারন হতে পারে তাই সমুদ্র বা‌ অন্য কোনো পানির ছবি তুলতে গেলে আমাদের অবশ্যই যত্নশীল হওয়া উচিত। যদি কখনো পানি‌ ঢুকেও যায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ক্যামেরা থেকে ব্যাটারি খুলে ক্যামেরা হালকা রোদে দিয়ে বা অভিজ্ঞ কারো দ্বারা ক্যামেরার পানি শুকানোর ব্যবস্থা করা উচিত।

শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা: বাচ্চারা অবুঝ হয়। এই অবুঝ মনে তারা কখন‌ কি করে বসে তার কিন্তু কোনো ভরসা নেই। খেলার ছলে যদি কখনো আপনার প্রিয় ক্যামেরা তাদের হাতে পৌছে যায় তাহলে এর অবস্থা যে খুব একটা ভালো থাকবেনা তা বলাই যায়। তাই সবসময় লক্ষ রাখুন আপনার ক্যামেরা যেনো তাদের‌ নাগালের বাইরে থাকে।

ব্যাটারির যত্ন: ব্যাটারি ক্যামেরার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই এর‌ যত্নের প্রতিও আমাদের আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। ব্যাটারি কখনোই ওভার চার্জ করবেন না, এতে করে ব্যাটারির কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। একটানা ব্যাটারি ফেলে রাখা থেকেও বিরত থাকুন। মাঝে‌ মাঝে ব্যাটারি চার্জ করুন এবং কিছু সময়ের জন্য হলেও ক্যামেরার তুলে ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে প্রতি ৬ মাস পরপর ব্যাটারির কার্যক্ষমতা পরিক্ষা করে দেখুন।

ধুলাবালি ও আগুন থেকে সাবধান: পানির মতো এই দুটি জিনিসও ক্যামেরার জন্য ক্ষতিকারক। ধুলোবালি আপনার ক্যামেরার লেন্স এবং সেন্সর দুই জায়গা তেই জমে গিয়ে ছবির মধ্যে দাগ ফেলতে পারে। তাই যে জায়গায় বেশি ধুলোবালি ওরে সেই যায়গায় লেন্স পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকুন। আর হ্যা কখোনোই আগুনের খুব কাছে গিয়ে ছবি তুলবেন না এতে করে আগুনের তাপে আপনার লেন্সের গ্লাসে ফাটল ধরতে পারে।

খেয়াল রাখুন লেন্সের প্রতি: লেন্সে যেনো কখনো ফ্যাঙ্গস বা ছত্রাক না পরে সেদিকে খেয়াল রাখুন। লেন্সের ভিতরের বিভিন্ন ধাতব অংশে মরিচা ধরতে পারে তাই ভেজা বা স্যাতস্যাতে জায়গা থেকে লেন্স কে দুরে রাখুন। লেন্স কে আঘাত বা ঘষা খাওয়া থেকে দুরে রাখুন। নিয়মিত লেন্স ক্যাপ এবং লেন্স হুড ব্যাবহার করুন।

অতিরিক্ত ভিডিও করা থেকে বিরত থাকুন: এখন প্রায় প্রতিটা ডিজিটাল ক্যামেরায় ভিডিও করার অপশন থাকে। কিন্তু একটানা বেশিক্ষণ ভিডিও করা উচিত নয়। একটা পেশাদার ক্যামেরায় একটানা প্রায় ১০-১৫ মিনিট ভিডিও করা যায়। তাই যতটুকু সম্ভব বিরতি দিয়ে দিয়ে ভিডিও করুন।

শাটার লাইফ: শাটার কাউন্টের মাধ্যমে ক্যামেরার জীবনকাল নির্ধারণ করা হয়। একটি এন্ট্রি লেভেলের ক্যামেরাতে (ক্যানন ১৩০০ ডি,১১০০ ডি,নাইকন ডি ৩২০০ ইত্যাদি) শাটার লাইফ দেওয়া থাকে এক লাখের মতো। প্রফেশনাল ক্যামেরায় অবশ্য আরও বেশি শাটার লাইফ দেওয়া থাকে। একটা করে ছবি তোলার মাধ্যমে একটা করে শাটার কাউন্ট হয়ে থাকে। শাটার লাইফ এক লাখ মানেই যে শুধুমাত্র এক লাখ ছবিই তোলা যাবে তা কিন্তু নয় এর বেশিও তোলা যেতে পারে এবং শাটার নষ্ট হয়ে গেলে পরিবর্তনের মাধ্যমে আবার আগের মতো ছবি তোলা সম্ভব। যেহেতু কম্পানি থেকে শাটার লাইফ দেওয়া থাকে তাই অযথা‌ ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।

আরও কিছু বিষয় যেসবে আমাদের নজর দেওয়া উচিৎ:

* ক্যামেরা কে আঘাত থেকে রক্ষা করতে ভালো মানের ব্যাগ ব্যবহার করুন।

* ক্যামেরা চালু রাখা অবস্থায় ব্যাটারি বা‌ মেমোরি কার্ড খুলবেন না।

* ভালো মানের মেমোরি কার্ড ব্যবহার করুন, আপনার পিসিতে মেমোরি কানেক্ট করার সময় অ্যান্টি ভাইরাস ব্যবহার করুন।

* লেন্স খোলার সময় জোর প্রয়োগ করবেন না।

* প্রতিদিন কাজ শেষে ক্যামেরা পরিস্কার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

* ক্যামেরার কাগজ পত্র গুলো সংগ্রহ করে রাখুন যেনো কখনো ক্যামেরা হারিয়ে গেলে আইনি সহায়তা নিতে পারেন।

Similar Posts

One Comment

  1. ধন্যবাদ। সবগুলো সতর্কতাই খুব কার্যকরী। পরবর্তীতে কাজে দিবে।

Comments are closed.