Abdul Kader / মে 3, 2020
যদি আপনাকেও মাঝেমধ্যে শরীর খারাপের জন্য সারাদিন ঘরে বিছানায় শুয়ে কাটাতে হয়, তাহলে আপনার জন্য সময় এসে গেছে নিজেরই ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটাকে বাড়ানোর দিকে একটু নজর দেওয়ার।
ইমিউন সিস্টেম আমাদের দেহের ডিফেন্স মেকানিজম। এটা মেইনলি সেল, টিস্যু আর কিছু অরগানের মিলিত নেটওয়ার্ক যেটা ক্ষতিকারক ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইটসদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের দেহকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। এই যে দু’দিন পর পর সর্দি কাশি, মাথা ব্যাথা এগুলো সব দূর্বল ইমিউন সিস্টেমের লক্ষণ।
তো কিভাবেই আমরা সহজেই আমাদের ইমিউন সিস্টেম টাকে যথেষ্ট শক্তিশালী বানাতে পারি, যাতে অন্তত দু’দিন অন্তর অন্তর রোগে না ভুগতে হয়।
চিল্যাক্স মানে হলো Chill+Relax অর্থাৎ নিজেকে সতেজ রাখা+রিল্যাক্স করা। হ্যাঁ নিজের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী রাখতে চাইলে, এটাই সবার আগে আপনাকে করতে হবে। অতিরিক্ত স্ট্রেস আর ঘুমের ঘাটতি ইমিউন সিস্টেমের দুটি বড় শত্রু। তাই স্ট্রেস কমাতে নিজেকে Chill বা সতেজ রাখতে হবে আর ঘুমের ঘাটতি কমাতে রিল্যাক্স করতে হবে। কিন্তু নিজেকে কিভাবে Chill বা সতেজ রাখবেন, সেটা আপনার নিজস্ব পছন্দের ব্যাপার। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, পড়া আপনার হৃদস্পন্দনকে হ্রাস করে এবং আপনার পেশীগুলির মধ্যে চাপ কমিয়ে দিয়ে আপনার শরীরকে শিথিল বা শান্ত করতে পারে। এটি অন্যান্য শিথিলকরণ পদ্ধতির চেয়েও দ্রুত কাজ করে। এভাবে পছন্দের বই বা কমিকস পড়েও আপনি চাইলে নিজেকে Chill বা সতেজ রাখতে পারেন। তাতেও আপনার ইমিউন সিস্টেম বুষ্ট হতে পারে। আর রিল্যাক্স করার জন্য তো ঘুমাতে হবে। যদি ঘুমানোর অত সময় না থাকে তাহলে আপনি মেডিটেশন করতে পারেন। রিসার্চ থেকে জানা গেছে, ২০ মিনিটের মেডিটেশন প্রায় ২ ঘন্টার ঘুমের সমান।
ভিটামিন-ডি এটা আমাদের ইমিউন সিস্টেমের অন্যতম প্রধান খাদ্য বলা যেতে পারে। এটা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে একটা বড় ভূমিকা পালন করে। সূর্যের আলো ফ্রীতে আমাদের স্কিনে ভিটামিন-ডি সংশ্লেষ করে।
২০১০ সালের একটা রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রতিদিন ১২০০ iu পরিমাণ ভিটামিন-ডি নেওয়ার ফলে, ইনফ্লুয়েঞ্জা (সংক্রমক সর্দি-জ্বর) হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে। এর জন্য গরম কালে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে থাকলেই যথেষ্ট। সূর্যের আলো ছাড়া বিভিন্ন খাবার যেমন কমলালেবু, দুধ, ঘি এগুলোতেও ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়। তাই স্কিন কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে সারাদিন ঘরের মধ্যে লুকিয়ে বসে না থেকে, বিকেলের দিকে অন্তত রোজ ১৫ মিনিটের জন্য হলেও সূর্যের আলো তে নিজেকে রাখলে, তাতেও অনেকটা উপকার হতে পারে।
ধুমপান আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে একটু একটু করে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। ধুমপান করার ফলে যে ধোঁয়াগুলো শরীরে ঢুকে ওগুলো আমাদের শরীরে এন্টিবডিস আর এন্টিঅক্সিডেন্টস গুলোকে ধ্বংস করে দেয়। যেগুলোই মেইনলি শরীরের ইমিউন সিস্টেমের উপাদান। সব থেকে খারাপ তো হয় তাদের সাথে যারা প্রতিদিন ধুমপান না করে থাকতেই পারেন না। অনেক সময় তাদের ইমিউন তাদের লাংস্ সেল গুলোকে আক্রমণ করতে শুরু করে। যেটাকে ডাক্তারী ভাষায় অটোইমিউনিটি বলা হয়। মানে নিজের দেশেরই সৈন্য নিজেরই দেশ ধ্বংস করতে লেগে পড়ে।
ইমিউন সিস্টেম দূর্বল হওয়ার কারণে সবচেয়ে সাধারণ রোগ হলো সর্দি কাশিতে ভুগা। আর এটা থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সকালে আদা দিয়ে, মধু দিয়ে, এক কাপ চিনি-বিহীন লেবু চা অথবা গ্রীন টি খাওয়া। এটা রীতিমতো ম্যাজিকের মতোই ইমিউন সিস্টেমকে বুস্ট করার ক্ষমতা রাখে। আদা আমাদের শরীরের ভিতরের টক্সিনস্ গুলোকে রিমোভ করে আর শরীরের তাপমাত্রা সঠিক বজায় রাখতে সাহায্য করে। মধু একটা এন্টিসেপটিক এর কাজ করে, আর পাতি লেবুতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-ডি এবং এন্টিএক্সিডেন্টস পাওয়া যায়, যেটা ওভারল ইমিউন সিস্টেমকে বুস্ট করে। তাই যদি আপনিও কিছুদিন পর পরই সর্দি কাশিতে ভুগেন, তাহলে রোজ সকালে ওই দুধ চা বা কফি না খেয়ে কয়েকদিন অন্তত আদা দিয়ে, মধু দিয়ে, লেবু চা খেয়ে ট্রাই করে দেখুন। কয়েকদিনের মধ্যেই আপনি নিজেই এফেক্ট টা বুঝতে পারবেন।
এক্সারসাইজ তো দেখছি, সব কিছুর জন্যই কার্যকর। হ্যাঁ তা ঠিক কিন্তু তবুও মজার ব্যাপারটা হল, এটাতেই আমাদের সবার সব থেকে বেশিই অনীহা।
এক্সারসাইজ মূলত তিন ভাবেই ইমিউনসিস্টেমকে বুস্ট করতে সাহায্য করে।
১. এক্সারসাইজ করার ফলে আমাদের শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন টা ভালো হয় যার ফলে এন্টিবডিস এবং হোয়াইট ব্লাড সেলস্ যেগুলো মেইনলি ইমিউন সিস্টেমের মূল উপাদান যা শরীরের বিভিন্ন অংশে দ্রুত বারবার চলাচল করার সুযোগ পায় ফলে কোন রোগ বেড়ে ওঠার আগেই সেটাকে সনাক্ত করে ধ্বংস করতে সাহায্য করতে পারে।
২. এক্সারসাইজের ফলে এক্সারসাইজের আগে ও পরে আমাদের বডি টেম্পারেচারে বেশ অনেকটা ওঠানামা হয়, যার ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো বেড়ে উঠতে পারে না।
৩. এক্সারসাইজ ট্রেস হরমোন যেমন করটিসল ক্ষরণ কমিয়ে দেয় যার ফলে স্ট্রেস কমে যাওয়ার কারণে ইমিউন সিস্টেমও বুস্ট হয়।
আর এগুলোর জন্য খুব বেশি কিছু এক্সারসাইজেরও দরকার নেই। প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত একটু জোরে হাটাহাটি অথবা ১০ মিনিট সহজ হিট এক্সারসাইজ করলেই যথেষ্ট।
আমেরিকান এন্টারপ্রেনার জিম রন বলেছেন:
“Take care of your body. It’s the only place you have to live.”
– “আপনার শরীরের যত্ন নিন। আপনাকে বাঁচানোর জন্য এটাই একমাত্র জায়গা।”
সর্বোপরি, ইমুউনি সিস্টেম শক্তিশালী হলে ৮০ শতাংশেরও বেশি রোগ শরীরে সৃষ্টি হওয়ার আগেই, আমরা ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি।
FILED UNDER :লাইফস্টাইল , স্বাস্থ্য কথন
Comments are closed.
Comments
Rana says
আসলেই আমরা নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া বিষয়ে গুরুত্বই দেই না। বেঁচে থাকার স্বার্থেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটাকে বাড়ানো জরুরী।
Kader says
হ্যাঁ ভাই!
Mehedi Hasan Khan says
কোয়ারান্টাইনের এই বন্দীদশার সাপেক্ষে গুরুত্বপূর্ণ একটা পোস্ট। ধন্যবাদ লেখক।
Kader says
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই!
tasnim says
সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ একটা পোস্ট ছিল। বর্তমানের করোনা মহামারীর কারণে নিজের immune system ঠিক রাখাটা সকলেরই উদ্দেশ্য। তাই ধন্যবাদ।
Kader says
আপনাকেও ধন্যবাদ!