বুদ্ধিমানের মতো আচরণ কিভাবে করবেন
“আমি হলাম একটা বোকা-সোকা লোক”– কিছু কিছু মানুষ আছে, যাদের মুখ থেকে আমরা এ ধরনের কথা শুনে থাকি। তাদের কিন্তু বোকাদের তালিকায় ফেলা যায় না। বাস্তবক্ষেত্রে, তারা যে বুদ্ধিমান- সে পরিচয় বেশ পাওয়া যায়।
বোকারা নিজেদের বুদ্ধিমান বলে জানে, আর বুদ্ধিমানরা নিজেদের বোকা মনে করে।
-উইলিয়াম শেক্সপিয়ার।
কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে। ধরুন, একজন সত্যিকারের বোকা লোক কোনো একভাবে জেনে ফেললেন, তার বুদ্ধি কম। এখন বলুন, তাকে কোন শ্রেণীতে ফেলবেন-বুদ্ধিমান না বোকা?
জট পাঁকিয়ে ফেললাম, না? চলুন, জটটা ছাঁড়িয়ে নেয়া যাক।
সে বুদ্ধিমান না বোকা তা আমরা তখনই বলতে পারব যখন তার আচরণের সাথে নিচের যেকোনো এক শ্রেণীর আচরণ মিলে যাবে।
এবার বৈশিষ্ট্যগুলি দেখে বলুন, তাকে কোন ক্যাটাগরিতে ফেলা যায় –
১. একজন বুদ্ধিমান লোক কখনো না ভেবে কথা বলে না, আর তাৎক্ষণিক আবেগবশত তো নয়ই। রাগের মাথায় আপনি মুখে যা তা বললেন, পরবর্তীতে আফসোস করে ক্ষমা চাইলেন। এই কাজটা বোকারা বেশী করে থাকে। মনে রাখবেন রাগ-জেদ কখনো আপনার ক্ষমতা, মহত্ত্ব প্রকাশ করে না। প্রকাশ করে আপনার পশুত্ব। রাগকে আরেকভাবে রোগও বলা হয়ে থাকে।
২.বুদ্ধিমানরা কম কথা বলে। বেশী কথা বলে বোকারা। জীবনের যাবতীয় ঘটনা সেটা হোক তুচ্ছ বা গুরুতর, বলবে। পেটে কথা জমা রাখতে পারে না। বুদ্ধিমানরা শোনে বেশী।
৩. বেশীরভাগ বুদ্ধিমান লোকই রসিকতা করতে পারে। সস্তা মানের রসিকতা না, বেশ ভালো মানের রসিকতা। তাদের সেন্স অব হিউমার চমৎকার। অনেকে আবার রসিকতা করতে গিয়ে ভাঁড় নামে পরিচিত হয়। বোকাদের মধ্যে অনেকে রসিকতা বোঝে না।
কেউ যখন কৌতুক বলে, আশেপাশের সবাই হেসে ওঠে। ওখানে এমনও লোক থাকে যারা না বুঝেই হাসে। সবাই হাসছে, তারও হাসা উচিত। অতএব সেও হাসে!
৪. সব মানুষই নিজের প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে। সে কথা মাথায় রেখে বুদ্ধিমানরা মানুষদের প্রশংসা করে। আর এভাবে সহজে প্রিয়পাত্রও হয়। অন্যদিকে বোকারা নিজেই নিজের প্রশংসা করে।
A fool flatters himself, a wise man flatters the fool.
-Edward G. Bulwer
৫. “আমি স্পষ্টকথার মানুষ” কথাটিতে নিজের অটল ব্যক্তিত্ব প্রকাশিত হয়। স্পষ্ট কথা বলা ভালো। তবে এমনও পরিস্থিতি আছে যেখানে স্পষ্ট কথা বলা যায় না। যেমন- একজন আপনাকে খুব শখ করে ডিনারের দাওয়াত দিয়েছে। খাবার টেবিলে বসার সময় এও বলেছে যে সবকিছু তার নিজের রান্না করা। তখন খাবার খেতে খারাপ হলেও আপনার সেটা বলা বোকামী। তার বদলে আপনাকে মিষ্টি করে হেসে কিছু প্রশংসা করতে হবে।
৬. বোকারা সুযোগ পেলেই নিজের বুদ্ধি প্রমাণ করতে লেগে যায়। বুদ্ধিমানরা কখনো এমন করে না। আশেপাশের মানুষকে বুদ্ধি দেখাতে চাইলে, তারা দেখবে- এটা যেমন সত্যি। আবার তারা এও বুঝবে যে আপনি কী উদ্দেশ্যে কাজটা করলেন! বুদ্ধিমানরা এ ধরনের কিছু করে না।
৭. বোকারা কথায় কথায় তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এরপর যখন তর্কে জয়লাভ করে, তখন খুব গর্ববোধ কর। অন্যদিকে বুদ্ধিমানরা তর্ক যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে। কখনো তর্কের সেখান থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খোঁজে।
প্রখ্যাত একজন রাজনীতিবিদ বলেছেন,
“দীর্ঘকাল রাজনীতি করে আমি বুঝেছি যে, একজন অজ্ঞ লোককে তর্কে হারানো অসম্ভব ব্যাপার।”
-William Gibbs McAdoo
শেষ কথা:
আমাদের সবারই বোকাদের আচরণগুলো পরিহার করে চলতে হবে। এখানে একটা প্রশ্ন তৈরি হয়, “বুদ্ধিমানের মতো আচরণ করলেই বুদ্ধিমান হয়ে যাব?” এর উত্তর হবে, নিশ্চয়ই।আপনি চেষ্টা করে দেখুন। মায়েরা সব সময় একটা কথা বলে থাকেন “সৃষ্টিকর্তা সবাইকেই মস্তিষ্ক দিয়েছে। কেউ সেটা ব্যবহার করে, কেউ করে না।” চলুন আমরা ভেবে দেখি, কেন বুদ্ধিমানরা এ আচরণগুলো করে। উপরে ৭ টা আচরণের “কেন”-এর উত্তর যদি আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারি, তবেই আমরা এ আচরণে অভ্যস্ত হতে পারবো।
আর তারপরও যদি আপনি বোকাদের আচরণ করেন, তবে কিন্তু আপনার নাম “অতিবোকা” হয়ে যাবে। কেননা আপনি সেক্ষেত্রে জেনেশুনে বোকামি করবেন, তাই না?
লিখা গুলো পড়ার সময় মনে হলোঃ শ্রেণিকক্ষে বসে টিচারের বক্তব্য শুনছি!! আর যখনিই শেষ হলো বক্তব্য, মনে হচ্ছে কোনো এক গ্রহ থেকে নেমে আসলাম!! (ব)
Quote গুলো একটু শ্রেণিকক্ষসুলভই হয়!
ধন্যবাদ, পড়ে মন্তব্য দেয়ার জন্য।