প্রি-স্কুল কিংবা ডে-কেয়ার আমাদের শিশুদের জন্য কতটুকু প্রয়োজন!
প্রি-স্কুল কিংবা ডে-কেয়ার আমাদের শিশুদের যে তার শিক্ষার জন্যই শুধু প্রয়োজন এমনটা নয়। এর যেমন আছে নানা ভালোদিক তেমনি কিছু ভুলত্রুটিও আছে যার ফলে শিক্ষার্থীর জন্য এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত ও হতে পারে। আসুন বিষয়টি নিয়ে আর একটু আলোচনা করে নেওয়া হোক।
শিশুর বয়স যখন চার ছুঁই ছুঁই তখনই আমাদের মাথায় ভর করে বাচ্চাকে একটি ভালো স্কুলে দিতে হবে এই সময়টা শিশুর শিক্ষার প্রতি আমাদের চিন্তা হুট করে যেন বেড়েই যায়। কর্মজীবী বাবা-মার ক্ষেত্রে এই চিন্তাটা আরও প্রকট আকারে বেড়ে যায়। ‘কোথায় বাচ্চাটা সুরক্ষিত থাকবে, তার জন্য একটা সুষ্ঠু -সুন্দর পরিবেশের স্কুলের প্রয়োজন অনুভব করতে থাকেন। হয়তো এই চাহিদা হাত ধরে শহরের আলিতে গলিতে ছোট ছোট ডে-কেয়ারের মতো প্রি স্কুল গুলো। যেখানে শিশুরা খেলার ছলে ভুলে থাকে কখনো হাসতে হাসতে শিখে যায় অনেক কিছু, নাচতে গায়তেই শিখে যাচ্ছে নানা রকম ছড়া, গান, গণনা সহ হরেকরকম মজার মজার গল্প যেগুলো আর মানসিক,মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে সাহায্য করছে।
আসলে প্রি-স্কুল গুলোতে কি শিখানো হয়!
সাধারণত প্রি-স্কুল গুলোর আসল উদ্দেশ্য থাকে শিশুদের স্কুলের উপযোগী করে গড়ে তোলা। তাদের স্কুলের অভ্যাস গড়ে তোলা তার সাথে সাথে প্রাথমিক বা শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করা। পরিবার থেকে বাহিরে এসে একটা সামাজিক পরিবেশে মিশে সামাজিক গুণাবলি গুলো অর্জন করা।
শহরকেন্দ্রিক ডে-কেয়ার বা প্রি-স্কুল গুলো গড়ে উঠেছে কর্মজীবী পিতা-মাতার সহায়তার জন্য। অফিসের সময়টুকু বাচ্চাকে যেমন সাথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না তেমনি ফাঁকা বাসায় শিশুকে রেখে যাও ঝুঁকির কারণ হয়ে যায়। অনেকে বাসার গৃহকর্মীর কাছে তার সন্তানকে রাখতে চান না। এটি নিরাপদ ও না । বিগত অনেক সময় আমরা এমন অনেক খবর দেখেছি ‘মালিকের সন্তানের অপর গৃহকর্মীর অত্যাচার’ এমন খবর গুলো বাবা-মাকে সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেই এইটাই স্বাভাবিক। তাই শিশুদের জন্য নির্ধারিত এই ডে-কেয়ার গুলো । যেখানে সকাল ১০টা থেকে দুপুর বা বিকাল পর্যন্ত শিশুরা থাকে এবং তাদের দেখাশোনার পাশাপাশি কিছু খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুর শিক্ষণ-শিখন পরিচালনা করা হয়।
এর পাশাপাশি বর্তমানে প্রাথমিক স্কুল গুলোতে প্লে, নার্সারি, কেজি নামকরণ করেও শাখা খোলা হয়েছে। যেখানে শিশুরা যাতে গতানুগতিক শিক্ষার মাঝে না এসে তাদের শিক্ষার ভিত্তি সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারে তার জন্য তাকে তৈরি করা হয়।
শিশুদের কোমল মনে প্রি-স্কুল একটি বাড়তি চাপ কি না?
প্রি-স্কুলের শিশুদের জন্য যেই সকল কারিকুলাম নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে বলা হয় ‘বিদ্যালয়ে প্রবেশের পূর্বে শিশুদের বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ তেরি করা প্রি-স্কুল গুলোর প্রধান উদ্দেশ্য’ শিশুর পরিবারের বাহিরে এসে সামাজিকীকরণ একটি অন্যতম মাধ্যমই হল স্কুল। এখানে শিশুরা আসবে তার সমবয়সীদের সাথে মিশবে খেলবে যার মাধ্যমে তাদের মাঝে সহমর্মিতা ও সহযোগিতার মতো সামাজিক গুণাবলি গুলো বিকাশ লাভ করবে। এর পাশাপাশি প্রাথমিক যেই শিক্ষা অর্জন করা প্রয়োজন বর্ণমালার পরিচিতি, গণনা করতে পারা। এমন ‘খেলতে খেলতে শিক্ষা’ মূলমন্ত্র গড়ে তোলা।
কিন্তু বর্তমানে এই প্রি-স্কুল গুলো কি করছে! বাচ্চা স্কুলে ভর্তি হয়েছে মানে তাকে ৩থেকে ৪টা বই পড়াতে হবে, স্বল্প সময়ের মাঝে বর্ণমালা লিখতে পড়তে জানতে হবে। ১ থেকে ৫০ পর্যন্ত বানান করেও লিখতে জানতে হবে এমন বাচ্চার বয়স উপযোগী নয় সেগুলো ও ছোট বাচ্চাদের অপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর অভিভাবক মেতে উঠছেন প্রতিযোগিতায়। কার সন্তান কত তাড়াতাড়ি এইসব আয়ত্ত করতে পারছে।
এতে কি আসলেই শিশুর প্রকৃত শিক্ষা হচ্ছে! যেই সময়টা শিশুর হাসার সময় খেলার সময়, শৈশব উপভোগ করার সময় তখন তাকে কতগুলো বই আর খাতার মাঝে আবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে।
শিশুর মানসিক বিকাশ ও সামাজিকীকরণে যেখানে অভিভাবক ও স্কুল গুলোর ভূমিকা অন্যতম সেখানে যদি তাদের জন্য কিছু সেশন তৈরি করা হয় যেখানে শিশুদের শিখন-শিক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে তারা সচেতন হবেন । এর পাশাপাশি শিশুর শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি কিভাবে যত্নশীল হওয়া যায়। সেই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। যেই সেশনটি শিশুকে একজন মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে দিকনির্দেশনা দিয়ে যেমন সাহায্য করবে তেমনি আমাদের শিশুরা শুধু নম্বরের পিছনে দৌড়ানো প্রতিযোগিতায় মেতে উঠবে না। পাশাপাশি আমাদের প্রি-স্কুল বা ডে কেয়ার গুলোকে শিক্ষার্থী বান্ধব করে গড়ে তোলাও আবশ্যক। এতে করে শিশুদের শৈশব হবে আরও রঙ্গিন আরও সুন্দর আনন্দময়।