ঘুমের অলসতা যেভাবে দূর করবেন
রাতে ঘুমানোর সময় আমরা সাধারনত পাঁচটি স্টেজের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করি। সংক্ষেপে বললে, এক এবং দুই নাম্বার স্টেজ হচ্ছে লাইট স্লিপ, তিন এবং চার নাম্বার স্টেজ হচ্ছে ডিপ স্লিপ এবং পাঁচ নাম্বার স্টেজ হচ্ছে REM স্লিপ যেটাকে Rapid Eye Movement-ও বলা হয়।
তো যেভাবে ঘুম থেকে উঠা উচিৎ সেটাই আজ শেয়ার করবো।
এলার্ম দিয়ে ঘুম থেকে ওঠা পরিহার করুন:
এই পাঁচটি স্টেজ মিলিয়ে, প্রতিটি স্লিপ সাইকেল টোটাল ৯০ মিনিট হয়ে থাকে এবং পাঁচটি স্টেজের মধ্যে লাইট স্লিপ স্টেজ হলো ঘুম থেকে উঠার জন্য সব থেকে উপযোগী। কিন্তু যদি আপনি কোনো এলার্ম ক্লক ব্যবহার করেন, তবে হতে পারে যখন আপনি আপনার স্লিপ সাইকেলের REM স্টেজ বা ডিপ স্লিপ স্টেজে রয়েছেন, তখনই হয়তো এলার্মটা বেজে উঠলো। এর ফলে আপনার স্লিপ সাইকেলটা সম্পূর্ণ কমপ্লিট হতে পারে না। ফলে ঘুম থেকে উঠার পরও আপনার ঘুম ঘুম পেতে থাকে। তো বেস্ট হয়, যদি আপনি এলার্ম ছাড়াই ঘুম থেকে উঠতে পারেন। এতে আপনি আপনার স্লিপ সাইকেলটা সম্পূর্ণ কমপ্লিট করে, ন্যাচারালি ঘুম থেকে উঠতে পারবেন।
প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার জন্য একটা এলার্ম সেট করুন:
এবার ব্যাপারটা হচ্ছে, আপনাকে হয়তো প্রতিদিন সকালে একটা ফিক্সড টাইমে উঠে রেডি হয়ে অফিসে অথবা কলেজের জন্য বেরোতে হয়। ফলে আপনার পক্ষে হয়তো এলার্ম ক্লকটা এভয়েড করা সম্ভব না। এবার এটাও সত্যি, যে রাতে আপনার যতটা সময় ঘুমানো দরকার, যদি ততো ঘন্টা আপনি না ঘুমান, তাহলে আপনি যাই করেন না কেন, সকালে উঠে আপনার ঘুম ঘুম পাবেই। তাই এলার্ম দিয়ে উঠার বদলে, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার জন্য একটা এলার্ম সেট করে রাখলে বরং বেশি ভালো হয়।
যেমন ধরুন আপনাকে হয়তো প্রতিদিন সকাল পাঁচ টায় ঘুম থেকে উঠতে হয় এবং যেহেতু আপনি একজন প্রাপ্তবয়স্ক, তাই আপনার প্রতিদিন রাতে এটলিস্ট ছয় ঘন্টার ঘুম দরকার হয়। যাতে আপনি এটলিস্ট চারটি কমপ্লিট স্লিপ সাইকেল পূরণ করতে পারেন, তো প্রতিদিন রাত সাড়ে দশটায় এলার্ম সেট করে রাখুন। আর যে মাত্রই এলার্ম টা বেজে উঠবে, সাথে সাথে আপনি যাই করছেন না কেন, সেটাকে বন্ধ করে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ুন। এর ফলে যখন আপনি সকাল পাঁচ টায় এলার্মের আওয়াজ পেয়ে উঠবেন, তখন আপনার চারটি স্লিপ সাইকেল সম্পূর্ণ কমপ্লিট হওয়ার পর, লাইট স্লিপ স্টেজে থাকাকালীন সময়ে উঠবেন। ফলে তখন উঠার পর আলসেমি ভাব লাগার বদলে, আপনি অনেকটা এনার্জাইজড অনুভব করবেন।
ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর পরই পানি পান করুন:
আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের শরীরে ৭৫ শতাংশ শুধুমাত্র পানি দিয়ে তৈরি। কিন্তু রাতে ঘুমানোর সময় শ্বাস-প্রশ্বাস এবং ঘামের মধ্যে দিয়ে ওই ছয় সাত ঘণ্টায়, আমাদের শরীর থেকে আমরা অনেকটা পরিমাণে পানি হারিয়ে ফেলি এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর, যদি আমরা সেই পরিমাণ পানি আবার পুনরায় পান করে শরীরে ফিরিয়ে না আনি, তবে আমরা অলসতা অনুভব করতে শুরু করি, তো সকালে উঠেই সবার আগে আপনার প্রথম কাজ হল, এক গ্লাস পানি পান করা। কারণ এটা আপনাকে আপনার শরীরে পানির পরিমাণ সঠিক করতেই শুধু সাহায্য করবে না, তার সাথে সাথে এটা আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও আপনাকে অনেকখানি সাহায্য করবে।
প্রতিদিন পাঁচটি এনার্জি বুস্টিং রুটিন ফলো করুন:
যখন আমরা স্ট্রেচিং করি, তখন আমাদের মাসেল এবং জয়েন গুলির ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ার সাথে সাথে, বডিতে এনার্জি সার্কুলেশন সঠিকভাবে হতেও সাহায্য হয়। ফলে অলসতা দূর হয়ে যায়। সারা রাত একটানা বিছানায় শুয়ে থাকার পর, আপনার মাসেল গুলোকে একটু স্ট্রেচ করা অত্যন্ত দরকার। এর ফলে আপনার হার্ট রেটও বৃদ্ধি পায়। যেটা অলসতা কাটিয়ে ওঠার জন্য, যে এক্সট্রা এনার্জি বুস্টার দরকার, সেটাও সরবরাহ করে। ঠিক এই কারণেই সকালে উঠে দাঁত ব্রাশ করার ঠিক পরেই, আপনার এই পাঁচটি এনার্জি বুষ্টিং এক্সারসাইজ রুটিন ফলো করতে হবে:
1. পাঁচটা জাম্পিং জ্যাকস
2. পাঁচটা পুশ-আপস
3. পাঁচটা সিট-আপস
4. পাঁচটা স্কোয়াট
5. এবং জাস্ট পাঁচ সেকেন্ড প্ল্যানক
এই সিম্পল এবং সুপার ইজি পাঁচ মিনিট এক্সারসাইজ রুটিনটা, আপনার এনার্জি লেভেল পাঁচ গুন অব্ধি বাড়িয়ে দিবে।
তো সকালে একদম ফ্রেশ এবং এনার্জিটিক হয়ে, ঘুম থেকে উঠার জন্য যা করবেন তা হচ্ছে এলার্মের আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে ওঠা বন্ধ করুন বরং এলার্ম দিয়ে রোজ রাতে একটা ফিক্সড টাইমে শুতে যান। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সবার আগে এক গ্লাস পানি পান করুন এবং সকালে উঠে এনার্জি বুস্টিং রুটিনটা ফলো করুন।
মনে রাখবেন, যদি আপনি আপনার সকালটাকে সঠিক ভাবে শুরু করতে পারেন, তাহলে পুরো দিনটাই আপনার হাতের মুঠোয় চলে আসবে।