এই বর্ষাকালে ফাঙ্গাল ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন রোধের কার্যকরী উপায়
বৃষ্টি আর রোম্যান্টিকতা— দুটো যেন এক মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। কত কবি-লেখকেরা তাঁদের লেখায় এই বর্ষার কত রূপই না তুলে ধরেছেন! আমি নিজেও তো, এখনো বাসার সামনে পুকুর হয়ে গেলে সেখানে কাগজের নৌকা ভাসাই!
তবে সবকিছুরই ভালো-খারাপ দুটো দিক থাকে।বর্ষাকালের স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার হলো ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। চলুন আজ জেনে নেই কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করবেন।
বর্ষাকালে কেন ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বাড়ে?
এসব সংক্রমণের প্রধান কারণ পানি। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে ড্রেন, ডোবা, পুকুরের পানি মিলেমিশে বিচ্ছিরি অবস্থার সৃষ্টি করে। আর এই ময়লা পানি শরীরে লাগলে সংক্রমণ তো হবেই!
তাছাড়া স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পায়। আবার রোদের অভাবে প্রায়ই দেখা যায় কাপড় ভালোমতো শুকোয়না। সেই আধা ভেজা কাপড় পড়লেও সমস্যা হতে পারে।
আবার অনেকেই রং নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে কাপড় উল্টো করে ছাদে মেলে দেন। এটা কখনোই করা উচিত নয়। কারণ অনেক পোকামাকড় আছে যেগুলো দড়ি, তার বেয়ে হাঁটে।
আপনার কাপড়ের উপরে হাঁটার সময় এদের দেহ থেকে অনেক অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থ নিঃসৃত হয়। পরে যখন আপনি সেই ড্রেস সোজা করে পরবেন , তখন পোকার শরীর থেকে নিঃসৃত পদার্থ আপনার শরীরের সংস্পর্শে আসবে এবং সংক্রমণের সৃষ্টি করবে।
বর্ষাকালে কি ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়?
এই সময় সাধারণত স্কিনে রেডনেস বা ইচিং দেখা দেয় অনেক বেশি মাত্রায়। এছাড়াও ছুলি এবং মেছতার সমস্যাও বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া অনেকের দাদ(ring worm) ও হয়ে থাকে।
সংক্রমণ রোধে কি করবেন?
- কাদাপানি থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখুন। যদি বাইরে যাওয়ার সময় ভিজেও যান তবে বাড়ি ফিরে সাথেসাথে হাত পা মুখ ভালো পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
- ডেটল পানিতে প্রতিদিন গোসল করতে পারেন।
- জামাকাপড় ভালোমতো না শুকিয়ে পরবেন না।
- জামা কখনোই ছাদে উল্টো করে মেলে দিবেন না।
সংক্রমিত হলে কি করবেন?
রেডনেস এবং ইচিং যদি কম থাকে তাহলে সাধারণত ত্বকের একটু যত্ন নিলেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যদি বেশি জ্বালাপোড়া করে, দাদ বা ফুসকুড়ি উঠে যায় তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
বর্ষাকালে চুলের যত্ন :
বর্ষায় হঠাৎ করেই চুল পড়ার সমস্যা অনেকের বেড়ে যায়। আবার খুশকিও এসময়ে একটু বেশি হয়। এসব সমস্যা দূর করার কিছু উপায় জেনে নিন :
- স্ক্যাল্পে বেশি ময়লা জমে যাওয়ার আগেই শ্যাম্পু করে নিন।
- গোসলের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চুল শুকিয়ে নিন। তবে খুব বেশি হেয়ার ড্রায়ার ব্যাবহার করলে কিন্তু চুল রুক্ষ হয়ে যাবে।
- সপ্তাহে দুইদিন হট অয়েল ম্যাসাজ করুন।
- স্ক্যাল্পে লেবুর রস দিলে খুশকি খুব তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যায়।
- চুলে অ্যালোভেরা ব্যাবহার করলে তা চুলপড়া রোধ করে।
- এছাড়া ঘরে তৈরী যেকোনো হেয়ার প্যাকও ব্যাবহার করতে পারেন।
জেনে নিলেন তো, বর্ষাকালে ত্বক এবং চুলকে সুস্থ রাখার উপায়! ছোটখাটো নিয়মগুলো মেনে চললেই দেখবেন বৃষ্টিতে আপনার আর কোনো সমস্যা হবেনা, কবি-সাহিত্যিকদের মতো আপনিও পারবেন বর্ষার আনন্দ অনুভব করতে।