ঐতিহ্যবাহি সিআরবি ভবন চট্টগ্রাম
অপুর্ব স্থাপত্য নিদর্শন ঐতিহ্যবাহি সিআরবি ভবন চট্টগ্রাম
জায়গার বর্ণনাঃ চট্টগ্রাম শহরের অতি প্রাচীনতম স্থাপনার নাম সি.আর.বি এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে সেন্ট্রাল রেলওয়ে ভবন। কালজয়ী ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিআরবি ভবন চট্টগ্রাম ঠিক তেমনি নাগরিক জীবনে কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে সন্নিহিত এলাকায় আঁকা-বাঁকা, সর্পিল রাস্তা উঁচু নিচু পাহাড় টিলা, বন-বনানী ছায়া সুনিবিড় এই বিরাট এলাকা অঘোষিত পর্যটন স্পট হিসেবে যুগ যুগ ধরে মানুষকে দিয়ে আসছে বিনোদনের আস্বাদন।
১৮৬২ সালে তৎকালীন বৃটিশ সরকার তদানিন্তন পূর্ববঙ্গের দর্শনা থেকে জাগতি পর্যন্ত ৫৩.১০ কি.মি. ব্রডগেজ রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে এতদ্বাঞ্চল রেলপথের গোড়াপত্তন করে। ১৮৯১ সালে সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে তখন ১৬/১১/১৮৯২ইং, গেজেটমূলে ফেনী থেকে রেলওয়ে চট্টগ্রামের বটতলী পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্যই কেন্দ্রীয় রেল ভবন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান ও চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন সুবিধাকে রেলওয়ের সাথে সমন্বিত করার প্রয়াসেই ১৮৯৯ইং সালে সি.আর.বি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সি.আর.বি লাগোয়া উত্তর টিলায় লোজ্জ ক্লান, দুপাহাড়ের মাঝখানে গভীর খাদ, যার শেষ প্রান্তে বেরিয়েছে পশ্চিম প্রান্তের মূল রাস্তায় পেট্রোল পাম্পের পাশ দিয়ে যেখানে উঁচু বাঁধ দিয়ে তৈরি করা যাবে শত ফুট গভীরতার স্বচ্ছ সরোবর। চট্টগ্রামের সিআরবির সাত রাস্তার মোড় ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে। পাহাড় ঘেরা মনোরম পরিবেশে নির্মাণ করা হয়েছে শিরীষতলা সহ বেশ কিছু নান্দনিক স্থাপনা। শিরীষতলায় বসে জমিয়ে আড্ডা দেয়া যায়, মাঠে খেলা যায়। সাথে দেখবেন, মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেয়া শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম স্মৃতিফলক, তারপর নজরে আসবে ১৮৯৯ সালের তৈরি বাষ্পীয় রেল ইঞ্জিনের মডেল। ভবনের দক্ষিণ দিকে বিরাট আঙিনায় দায়সারা গোছের ফুলের বাগান দেখলে অব্যবস্থাপনার ছাপ ফুটে উঠবে। সি.আর.বির পূর্ব দিকে রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে রেলওয়ে হাসপাতাল অবস্থিত। এটা একসময় ছিল ফিরিঙ্গি অফিসারদের ক্লাব, কর্মক্লান্ত কর্মকর্তারা কাজের বাইরের সময়টুকু এখানে আমোদ-প্রমাদ করে কাটাতেন, আড্ডা দিতেন, নিজ দেশে ফেলে আসা আত্মীয়স্বজনের গল্প করতেন। গেল চার/পাঁচ বছর ধরে সি.আর.বি পাহাড়ি জনপদের এ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আশপাশ ও পাহাড়ের তলদেশে বাঙালির সর্ববৃহৎ বৈশাখী উৎসব, বসন্ত উৎসব ও ঐতিহ্যবাহী সাহাবুদ্দিনের বলীখেলায় লক্ষাধিক লোকের জমায়েত ঘটে। বলা যেতে পারে বর্তমান সময়ে চট্টগ্রামে সাহিত্য সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র এই সি.আর.বি।
যাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ সারা বছর যাওয়ার উপযুক্ত সময়। কিন্তু বিকালের টাইমের মানুষের ভিড় বেশি থাকে এবং পরিবেশটা খুব ভাল লাগবে।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকেঃ বিআরটিসি এর বাসগুলো ছাড়ে ঢাকা কমলাপুর টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছাড়ে, আর অন্যান্য এসি, ননএসি বাস গুলো ছাড়ে সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য সার্ভিস গুলো হল এস.আলম ও সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভূতি। চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে ৮কিমি দূরে অবস্থিত অপরূপা ফয়স লেক।
অন্য শহর থেকেঃ দেশের প্রায় সব কয়টি জেলার সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। আপনি আপনার শহর থেকে নিজের পছন্দ মত বাসে এসে চট্টগ্রাম শহরে এ কে খানে নামবেন এবং সেখান থেকে সি এন জি বা রিক্সা যোগে চলে যাবেন ফয়স লেকে।
নদী পথেঃ
বরিশাল, খুলনা পটুয়াখালী ইত্যাদি জেলার সাথে চট্টগ্রামের রয়েছে লঞ্চ/ইস্টিমার সার্ভিস। সুতরাং আপনি নদী পথে ও চট্টগ্রাম আসতে পারেন।
রেলওয়েঃ
ঢাকা থেকে আশুগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া, কুলিল্লা, চান্দপুর, ফেনী হয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। তাছাড়া সিলেট থেকে ও ট্রেন সার্ভিস রয়েছে।
*** জি.সি মোড় থেকে থেকে সিএনজিচালিত বেবিটেক্সিতে ৮০-১০০ টাকা নিতে পারে। টাইগারপাস মোড় থেকে হাঁটলে পাঁচ মিনিটের পথ। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম গেট থেকে ও একই সময় লাগবে।