আপনার প্রিয় রান্না ঘরেই থাকে বিষাক্ত ১৩টি খাবার

শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে

বিষাক্ত খাবার খাবেন জেনে শুনে? নিজের পরিবার ও নিজেকে সুস্থ রাখতে আমাদের কত প্রচেষ্টা! তাজা সবজি এবং ফল তো আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকে। কিন্তু আপনি জানেন কি এমন অনেক ফল ও সবজি আছে যাদের বিশেষ কোন অংশ অনেক বিষাক্ত উপাদানে ভরপুর থাকে যা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ?।এই পরিচিত ও জনপ্রিয় খাবার গুলো বার বার গ্রহনের ফলে শরীরে বিষের মাত্রা বেড়ে আপনাকে অসুস্থ করে দিতে পারে।আসুন আমরা সেই খাবার গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।

আপনার প্রিয় রান্না ঘরেই থাকে বিষাক্ত ১৩টি খাবার

বিষাক্ত কি কি খাবার আমাদের খাদ্য তালিকায় আছে জেনে নিন

আপনার প্রিয় রান্না ঘরেই থাকে বিষাক্ত যেসব ১৩টি খাবার!

১। আপেল:

প্রবাদে আছে – “An apple a day will keep the doctor away” অর্থাৎ আপনি যদি প্রতিদিন একটি আপেল খান তাহলে আপনাকে আর ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।কিন্তু আপেলের বীচিতে হাইড্রোজেন সায়ানাইড নামক বিষ থাকে।আমরা সাধারণত আপেলের বীচি খাই না এবং একটা আপেলে খুব বেশি বীচি থাকেনা। কিন্তু আপেলের বীচি কোন কারণে বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেললে ক্ষতির কারণ হতে পারে।তাই আপেলের জুস তৈরির সময় বীচি যেন না যায় সে ব্যপারে সতর্ক থাকুন।

আপনার প্রিয় রান্না ঘরেই থাকে বিষাক্ত যেসব ১৩টি খাবার!

২। চেরি এপ্রিকট, বরই:

চেরি জনপ্রিয় একটি ফল।চেরি কাঁচা বা রান্না করেও খাওয়া হয় এবং মদ তৈরিতে ব্যবহার হয়।চেরির পাতা এবং বীজে বিষাক্ত উপাদান আছে।যখন চেরির বীজকে চুষা বা চূর্ণ করা হয় তখন প্রুসিক এসিড (হাইড্রোজেন সায়ানাইড)উৎপন্ন হয়।যখন ই চেরি খাবেন এর বীচি চুষে খাবেন না। বরই এবং এপ্রিকট ফলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কখনও কখনও এগুলো দিয়ে তৈরি জ্যাম, স্প্রেড বা দুধ জাতীয় পণ্যসহ বিভিন্ন খাবারের প্যাকেটের গায়ে এসবের বীজ ফাটানো, গেলা বা চাবানো যাবে না বলে সতর্কীকরণ লেবেল সাঁটা থাকে। বিশষজ্ঞরা বলেন, বীজের উপাদানগুলো সনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে সেই সুনির্দিষ্ট ফল কম পরিমাণে খেতে হবে।

৩। কাজুবাদামঃ

মিষ্টি কাজুবাদাম ও তেতো কাজুবাদাম এই দুই ধরণের কাজুবাদাম পাওয়া যায়। তুলনামূলক ভাবে তেতো কাজুবাদাম এ প্রচুর হাইড্রোজেন সায়ানাইড থাকে। যা খুবই বিষাক্ত । সাত থেকে দশটা তেতো কাজু বাদাম কাঁচা খেলে বড়দের সমস্যা হতে পারে এবং ছোটদের জন্য প্রাণনাশক হতে পারে। কিছু কিছু দেশ এই তেতো বাদাম বিক্রি করা অবৈধ ঘোষণা করেছ, যেমন- নিউজিল্যান্ড।আমেরিকাতে কাঁচা কাজু বাদাম বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

৪। জায়ফলঃ

জায়ফল এ মাইরিস্টিসিন আছে যা মনের উপরে কাজ করে। সাধারণত রান্নায় যে পরিমাণ জায়ফল ব্যবহার করা হয় তা ক্ষতিকর নয়।কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে বমি,ঘামঝরা,মাথাঘোরা,মাথাব্যথা ও হ্যালুসিনেশন হয়।

আপনার প্রিয় রান্না ঘরেই থাকে বিষাক্ত যেসব ১৩টি খাবার!

৫। আলুঃ

এমনিতে আলু খাওয়া নিরাপদ।কিন্তু আলুর পাতা ও কাণ্ডে গ্লাইকোএ্যল্কালয়েড থাকে।বাসায় অনেক দিন পর্যন্ত আলু রেখে দিলে এর মধ্যে গ্যাঁজ হয়ে যায়।এই গ্যাঁজে গ্লাইকোএ্যল্কালয়েড থাকে যা আলোর সংস্পর্শে বৃদ্ধি পায়।এইজন্য আলু সবসময় ঠাণ্ডা ও অন্ধকার জায়গায় রাখতে হয়।সবুজাভ ও গ্যাঁজ হওয়া আলু খেলে ডায়রিয়া, মাথাব্যাথা, এমনকি কোমায় চলে যেতে পারে ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

৬। কাঁচা মধুঃ

কাঁচা মধুতে গ্রায়ানোক্সিন থাকে।তাই এক টেবিল চামুচ কাঁচা মধু খেলে মাথাঘোরা, দুর্বল লাগা, অত্যধিক ঘাম হওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া এবং বমি হওয়া এই উপসর্গ দেখা দেয়।

আপনার প্রিয় রান্না ঘরেই থাকে বিষাক্ত যেসব ১৩টি খাবার!

৭। টমেটোঃ

আলুর মতোই টমেটোর পাতা ও কাণ্ডে গ্লাইকোএ্যল্কালয়েড থাকে যা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে।কাঁচা সবুজ টমেটোতে ও একই উপাদান আছে। তবে অল্প পরিমাণে খেলে সমস্যা নেই।

৮। শিম এর বীচিঃ

শিম এর বীচিতে ফাইটোহিমাটোগ্লুটানিন নামক বিষ থাকে।যা আপনাকে মারাত্মক অসুস্থ্য করে দিতে পারে যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।তাই রান্নার পূর্বে ১০ মিনিট সিদ্ধ করে তারপর রান্না করতে হবে।

৯।ক্যাস্টর অয়েলঃ

রেড়ীর তেল বিভিন্ন ধরণের ক্যান্ডি,চকলেট ও অন্যান্য খাদ্যে ব্যবহার করা হয়।অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন একটু ক্যাস্টর অয়েল খেয়ে থাকেন এবং বাচ্চাদেরকেও জোর করে খাওয়ান।রেড়ীর বীচিতে রিচিন নামক বিষ থাকে যা খুবই মারাত্মক বিষ।যারা এই বীজ সংগ্রহরের কাজ করে থাকেন তাদের মারাত্মক ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। রেড়ীর একটা বীজ খেলে একজন মানুষ মারা যায় আর চারটা খেলে একটা ঘোড়া মারা যায়। আমরা ভাগ্যবান, কারণ আমরা যে ক্যাস্টর অয়েল কিনি তা ভালোভাবে প্রস্তুত করা থাকে।

১০।বিষাক্ত খাবার পটকা মাছ:

জাপানি রেস্তোরা এবং এশিয়ার বিভিন্ন বাজারে পটকা মাছের চাহিদা চোখে পড়ার মত। জাপানে পটকা মাছের যেকোনও আহারই জিভে জল এনে দেয়। সামুদ্রিক এই মাছের কিছু অংশ এমন রয়েছে যা বিষের মতই মারাত্মক। আর যদি পটকা মাছের স্বাদ নিতেই হয় তাহলে বাদ দিন মাছের ‘পটকা’।

১১। চিনাবাদাম ঃ

অবাক হলেও এটা সত্যি, চিনাবাদামে রয়েছে ‘allergic’ উপাদান। এলার্জিক সিনড্রোম যখন তখন আপনার শরীরে দানা বাঁধতে পারে এবং কোনও রকম কিছু বোঝার আগেই আপনার দেহ এর সংক্রামক ছড়িয়ে পড়তে পারে।

১২। সুগন্ধি ফল ও মশলা ও আছে বিষাক্ত খাবার এর তালিকায়ঃ

এক টুকরো ভালো ও সুগন্ধি মশলা শুকনো খাবারে মেশালে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না কিংবা এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। আপাত দৃষ্টিতে এদের বিষাক্ত মনে হয়না। কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা এমন কি হ্যালুসিনেশনের মতো নানা ধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে! বাদামে মিরিসটিসিন নামে এক ধরনের সাইকোঅ্যাক্টিভ উপাদান রয়েছে, যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোজম্যারি ও ওরেগানোর মতো অন্যান্য মশলা বেশি পরিমাণে খেলে আমরা আরো বেশি সক্রিয় হবো।

১৩। শুকনো ফল :

আমাদের অনেকেরই শুকনো ফলের প্রতি এক ধরনের আসক্তি দেখা যায়। ধুয়ে বা না ধুয়ে অনেকসময় আমরা এসব ফল মুঠো ভরে খেয়ে ফেলি। কিন্তু এসব ফল যত কম খাওয়া যায় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ততটাই মঙ্গল। বাজারে বিক্রি হওয়া এসব শুকনো ফলের বেশিরভাগ সালফার এবং পটাসিয়াম জাতীয়  বিষাক্ত দ্রব্য ব্যবহার করে শিল্প কারখানায় শুকানো হয়। যা হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। আর তাই সুষ্ঠু হজম ক্রিয়ার জন্য শুকনো ফল বেশি পরিমাণে না খাওয়াই উত্তম। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রচুর পরিমাণ সালফারের ব্যবহার হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া এটা পাকস্থলির সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। যে সব শস্য সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়নি, সেগুলোতে মাইক্রো-টক্সিন নামে এক ধরনের ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে যা আমাদের জন্য বিপজ্জনক।

(Visited 361 times, 3 visits today)

শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে

Similar Posts