অপরিচিত কিছু জমিদার বাড়ি || সিরাজগঞ্জ
ব্রিটিশ শাসন চলাকালীন সময়ে বর্তমান বাংলাদেশকে ঢাকা, রংপুর, নোয়াখালী, মোমেনশাহী – এই চারটি জেলায় বিভক্ত করা হয়। লর্ড কর্ণওয়ালিসের (১৭৮৬ – ১৭৯৩) আমলে ১৭৮৭ সালে মোমেনশাহী জেলা স্থাপিত হলে জমিদার সিরাজ আলী চৌধুরী বড় বাজু পরগনার সাত আনা হিস্যা ‘সিরাজগঞ্জ জমিদারী’ নামে জমিদারী লাভ করেন। পরবর্তীতে তার নামানুসারে জায়গাটির নামকরণ করা হয় সিরাজগঞ্জ। বর্তমান এই সিরাজগঞ্জ জেলা বিভিন্ন সময়কার জমিদারদের স্মৃতি চিহ্ন আজও বহন করছে। এদের মধ্যে ধুবিল কাটার মহল জমিদার বাড়ি, রাউতারা জমিদার বাড়ি, সান্যাল জমিদার বাড়ি, আটঘড়িয়া জমিদার বাড়ি অন্যতম ।এসব জমিদার বাড়ি সম্পর্কে সেরকম পরিচিতি নেই বলে ভ্রমণ পিপাসুদের দৃষ্টির অগোচরেই থেকে যায় ।
রাউতারা জমিদার বাড়িঃ
এই জমিদার বাড়িটি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। জমিদার রুধেষ বাবু বড়াল নদীর তীরে প্রায় ১০ একর জায়গা নিয়ে তিনি ৫ তলা বিশিষ্ট এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। কিন্তু কবে জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয় তা আজও জানা যায় নি।বাড়ির চারপাশে ১০ ফুট উচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়েছিল। লোকেমুখে রচিত আছে রুধেষ বাবু একজন অত্যাচারী জমিদার ছিলেন এবং খুব দাপটের সাথে জমিদারী চালাতেন। এ বাড়িটিতে সুরঙ্গ পথ, প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের নজরকাড়া কারুকার্যখচিত সিঁড়ি সহ ২৫ টিরও বেশি ছোট বড় অসংখ্য কক্ষ। ১৯৫৭ সালের জমিদারী প্রথা বিলুপ্তি হলে জমিদার রুধেষ বাবু স্ব-পরিবারে ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে পরিত্যক্ত অবস্থায় রূপ নেয় এই জমিদার বাড়িটি।
ধুবিল কাটার মহল জমিদার বাড়িঃ
রায়গঞ্জ উপজেলার ধুবিল ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষিণ দিকে এই জমিদার বাড়িটির অবস্থান। ইট ,সুড়কি, রডের তৈরী দ্বিতল বিশিষ্ট এ জমিদার বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জমিদার মুন্সি আব্দুর রহমান তালুকদার । ১৮৪০ সালে এ জমিদার বাড়িটি নির্মিত হয়। সেকালের কারুকার্যের ছোয়া আজও দৃশ্যমান এ জমিদার বাড়িটিতে। এখানে প্রধান দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে চোখে পরে আঙ্গিনা , পাশাপাশি লাগানো দুটি ভবনে দেয়ালে রয়েছে কারুকার্য খচিত অসংখ্য নিদর্শন।
সান্যাল জমিদার বাড়িঃ
রায়গঞ্জ পশু হাসপ্পাতাল থেকে ৩.৫ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে এই জমিদার বাড়িটির অবস্থান। ইট ,সুড়কি দিয়ে পুরু দেয়ালের তৈরী এ জমিদার বাড়ি। বাড়িটি কে নির্মাণ করেছিলেন বা কবে নির্মিত হয়েছিল তা জানা যায় নি । তবে ধারনা করা হয় মোঘল আমল থেকে ব্রিটিশ আমলের শুরু দিকে এ সময়টিতে বাড়িটি নির্মিত ।এখানে একটি শিব দূর্গা মন্দির রয়েছে ।
আটঘড়িয়া জমিদার বাড়িঃ
রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। ১৭০০ সালের শুরুর দিকে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন জমিদার উৎসব নারায়ণ চক্রবর্তী ।বাড়িটিও ইট সুড়কি দিয়ে তৈরী এবং প্রাচীন স্থাপত্য শিল্প বিদ্যমান। জমিদার উৎসব নারায়ণ চক্রবর্তী মৃত্যুর পর তার সন্তানরা উক্ত এলাকায় জমিদারী করলেও পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তারা ভারতে চলে যান।
জমিদার জমিদার প্রথা না থাকলেও কালের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে এ জমিদার বাড়ি গুলো। বাড়িগুলোর কাঠামোগত গঠন , কারুকার্য দেখলেই ধারনা করা যায় সে সময় জমিদাররা কতটা আধিপত্যের সাথে জমিদারী করতেন ।
যেভাবে যাবেনঃ
শাহজাদপুর উপজেলা থেকে রায়গঞ্জ দূরত্ব পায় ৪০ কিলোমিটার হওয়াতে এজন্য হাটিকুমরুলে অবস্থান করলেই ভালো হবে। তো এজন্যে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যেকোনো বাসে করে হাটিকুমরুলে নামতে হবে। এতে ভাড়া পরবে ৩০০-৩৫০ টাকা। স্থানীয়ভাবে জায়গাটি সিরাজগঞ্জ রোড নামে পরিচিত । তো এখান থেকে শাহজাপুর ও রায়গঞ্জ উপজেলা পর্যন্ত যেতে ৪০-৫০ টাকা নিবে। দু দিন সময় নিলেই এই জমিদার বাড়িগুলো ঘুরে দেখা যাবে। আর হাটিকুমরুলেই কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে । খাবারের জন্য স্থানীয় কিছু হোটেল তো আছেই ।