হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের পার্থক্য
হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক। আমাদের অতি পরিচিত দুইটি শব্দ। প্রায়ই শুনি যে উনার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বা স্ট্রোক হয়েছে। অনেকেই হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক এই দুটি জিনিসকে এক বলে গুলিয়ে ফেলে। কিন্তু জিনিসদুটি এক নয়। আজকের আর্টিকেলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের লক্ষণ, প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আর্টিকেলটি পড়া শুরুর আগে ফিচার ছবিটি একবার ভালো করে দেখুন। ধারনা নিন এবং পড়া শুরু করুন।
হার্ট অ্যাটাক
হার্ট অ্যাটাক মানে হলো হার্ট বা হৃদপিণ্ড সম্পৃক্ত রোগ। আমাদের হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত, রক্তনালী দিয়ে সারাদেহে যায় এবং সারাদেহ থেকে রক্ত, রক্তনালির মাধ্যমে হৃদপিণ্ডে আসে। যদি এসব রক্তনালির ভেতরে চর্বি,ক্যালসিয়াম এগুলো জমে প্লাঙ্ক বা জমাট বেঁধে যায় তাহলে রক্তনালি দিয়ে রক্ত চলাচল বাঁধা পায়। রক্ত চলাচল বাঁধা পেলে হার্টের কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়। তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। হার্ট অ্যাটাককে ডাক্তারির ভাষায় বলে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন।
আবার, রক্তের মধ্যেই সারাদেহের কোষ/টিস্যুতে খাবার, অক্সিজেন পৌঁছায়। যখন রক্ত সরবরাহ কমে যায় তখন কোষগুলো এসবের ঘাটতিতে পড়ে।
লক্ষ্মণ:
-বুকে ব্যাথা থাকবে
-বুক নিষ্পেষিত (বুকে অসহ্য চাপ,মোচড়ানোর মতো অনুভূতি) হয়ে আসছে মনে হবে
-ঘন ঘন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস হবে
-দেহের উপরের অংশে (হাত,পিঠ,গলা,চোয়াল) ব্যাথা বা অস্বস্তি অনুভব হবে
-বমি-বমি ভাব হবে
প্রতিরোধ করবেন কিভাবে?
-টাটকা শাকসবজি, ফলমূল খাবেন
-চর্বি ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার বাদ দিবেন
– ব্যায়াম করতে হবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ( সহজ ব্যায়াম যেমন- হাঁটা, দৌড়ানো)
-অবশই অবশই ধূমপান, অ্যালকোহল পুরোপুরি পরিত্যাগ করতে হবে।
স্ট্রোক
স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যা।
আমাদের মস্তিষ্ক হলো পুরো দেহের কেন্দ্র। আমাদের সব কাজ,অনুভূতি, প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের ভিতরের কোষগুলোর খাবার,অক্সিজেন যায় রক্তের মাধ্যমে। মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলোর কোনো জায়গায় যদি ক্যালসিয়াম/প্রোটিন জমে বা অন্য কোনো কারণে নালীর ভিতরে রক্তের উচ্চ চাপ তৈরি হয় তাহলে অনেক সময় নালী ফেটে যায়। ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় এবং আশেপাশের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই রক্তক্ষরণ -কেই Stroke বলে।
রক্তক্ষরণের ফলে কি হয়?
মস্তিষ্ক হলো খুবই সেনসেটিভ জিনিস। এর একেকটা অংশ দেহের একেকটা অংশের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তক্ষরণের ফলে যখন আশেপাশের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন কোষগুলো দেহের যে অংশের কাজগুলো করতো সে অংশের কাজগুলো বন্ধ হয়ে যায়। অথাৎ ঐ অংশগুলো প্যারালাইজড হয়ে যায়।
লক্ষণ:
-মাথা ঘুরানো বা মাথা ব্যাথা
-ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা
-কথা আটকে যাওয়া বা কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া
– চোখে ঘোর লাগা বা একই জিনিস দুইটা দেখা
-শরীর অবশ বা দুর্বল লাগা
প্রতিরোধ
-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
-দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা
-নিয়মমাফিক খাবার খাওয়া
-ধূমপান ত্যাগ করা
-কোলেস্টেরল ও চর্বি যুক্ত খাবার না খাওয়া
-প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করা
তাহলে আমরা দেখলাম, হার্ট অ্যাটাক হলো হৃদপিণ্ডের রোগ আর স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কে। অর্থাৎ দুইটি জিনিস সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এই রোগগুলো হলো সার্বজনীন অর্থাৎ যে কারো এই রোগগুলো হতে পারে। কোনো বয়স,লিঙ্গ এগুলোর উপর নির্ভর করে না।
সুতরাং আমরা সবাই সচেতন থাকবো, সঠিকভাবে নিয়মমাফিক জীবনধারণ করবো।