যেভাবে নিজেকে ভালোবাসবেন
সত্যি বলতে আমাদের মধ্যে খুব কম মানুষই এরকম আছেন, যারা আসলেই নিজেকে নিজে ভালোবাসেন। কারণ খুব কম মানুষই আছেন, যারা একা খুশি থাকতে পারেন। আমাদের নিজের প্রতি নিজের ভালোবাসা, আমাদের জীবন যাপনের গুণমান নির্ধারণের ক্ষেত্রে, একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যত কম আপনি নিজেকে নিজে ভালবাসবেন, নিজের মনের ভিতর কি চলছে সেটা মন দিয়ে শোনা এবং বুঝার যত কম চেষ্টা করবেন, ততবেশি আপনি আপনার লাইফে কনফিউজড এবং ফ্রাস্ট্রেটেড অনুভব করতে শুরু করবেন। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, নিজেকে নিজে ভালোবাসা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
কারণ যদি আপনি নিজেকে নিজে ভালবাসতে শিখে যান, তবে সেটা আপনার সেল্ফ কনফিডেন্স এবং নিজের প্রতি শ্রদ্ধাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিবে। ফলে স্বাভাবিক বেশিরভাগ সময়ই আপনার মধ্যে একটা পজিটিভ মনোভাব কাজ করবে। আর তাছাড়া, অন্য কাউকে ভালোবাসার আগে নিজেকে নিজে ভালোবাসতে শেখাটা অত্যন্ত দরকার। কারণ যে নিজেকেই ভালবাসতে জানেনা, সে অন্য কাউকে কিভাবে ভালবাসবে। ফলে আপনার সম্পর্কগুলোর গুণমান প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এটার ওপর নির্ভর করছে, যে আপনি নিজেকে নিজে কতখানি ভালোবাসেন। তো চলুন দেখে নেয়া যাক, কিভাবে আপনি চাইলে নিজেকে ভালোবাসার এই গুণটা নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে পারেন।
১। আপনার নেতিবাচক চিন্তা ত্যাগ করুন:
সব সময় লাইফে বাজে কি হচ্ছে সেটার দিকে নজর দেওয়াটা একটা বাজে অভ্যাস। কারণ সব সময় আপনার ফোকাস যদি আপনার লাইফে বাজে কি হচ্ছে সেদিকেই আটকে থাকে, ফলে একটা সময় পর, আপনার মনে হতে শুরু করবে, যে আপনার লাইফে ভাল বলতে কিছুই নেই। যেটা একেবারেই সত্যি না। এটা কখনোই সম্ভব না, যে একটা মানুষের লাইফে কোন কিছুই ভালো হচ্ছে না।
একটু দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালেই, আপনিও আপনার লাইফে প্রচুর ভালো কিছু লক্ষ করতে পারবেন আর এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর জন্য সবার আগে দরকার, আপনার কাছে এই মুহূর্তে যা আছে যেটুকু আছে সেটুকুতেই আগে সন্তুষ্ট হয়ে, তারপর নিজের লক্ষ্যগুলো পূরণ করার উদ্দেশ্যে এগুনো। এখন আপনার কাছে যতটুকু আছে, ততটুকুতেই যদি আপনি সন্তুষ্ট না হতে পারেন, তাহলে কী করে আপনি এটা বলতে পারেন, যে আরেকটু বেশি পেলেই আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন? সব সময় আপনি যতখানি চাইছেন, ঠিক ততখানিই হয়তো পাবেন না বা যেখানে পৌঁছাতে চাইছেন, একজ্যাক্টলি সেখান অব্দি হয়তো পৌঁছাতে পারবেন না। কিন্তু সব সময় এটা মাথায় রাখবেন, আপনার কাছে এই মুহূর্তে যা রয়েছে বা যতটুকু রয়েছে, এই পৃথিবীতে এরকম কোটি কোটি মানুষ রয়েছে, যারা হয়তো সারা জীবনেও সেটুকুও কোনদিন পাবে না। তাদের কাছে আপনার জীবনটা স্বপ্নের মত।
২। যারা আপনাকে নিচে নামাতে চায়, তাদের থেকে নিজেকে দূরে রাখুন:
আপনি যাদের সঙ্গে বেশিরভাগ সময় কাটান, তাদের মধ্যে যদি এরকম কোন বন্ধু থাকে, যে সবসময় আপনাকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করে, তাহলে আপনার এখনই তাদের সঙ্গ ত্যাগ করা উচিৎ। অন্যদিকে যদি আপনার কোন বন্ধু, আপনাকে আপনার স্বপ্ন পূরণের জন্য অনুপ্রাণিত করে তুলে, তবে তার সংস্পর্শে থাকলে আপনি নিজের প্রতি ভালো অনুভব করতে শুরু করবেন।
দুষ্টু গরুর থেকে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো।
যাদের কাছে আপনার কোনো দামই নেই, তাদেরকে দাম দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। নিজের মূল্য বুঝতে শিখুন, যারা আপনাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, তাদের সাথে সময় কাটাতে থাকলে, আপনার নিজের চোখে নিজের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা দুটোই দিন দিন কমে যেতে থাকবে। তাই শুধুমাত্র তাদের সাথেই বন্ধুত্ব বজায় রাখুন, যারা আপনাকে উৎসাহিত করে এবং প্রকৃতপক্ষে আপনার ভালো চায়।
সর্বদা পরিমাণের উপর গুণমান।
৩। কোনো কাজে অন্যের অনুমোদনের কোনো দরকার নেই:
সবাই যা করছে আপনাকেও সেটাই করতে হবে তার কোনো মানে নেই বা অন্য কোনো কিছু করতে চাইলে, সবার কাছ থেকে আগে তার জন্য পারমিশন নিতে হবে তারও কোনো প্রয়োজন নেই। এই পৃথিবীতে আপনার সময় সীমিত। তাই আজ আপনি যে কাজটা করবেন, সেটা আপনার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনার সীমিত সময়ের মধ্যে থেকে, একটা দিন আপনি সেই কাজেই বিনিয়োগ করতে চলেছেন। তাই বাঁচার জন্য, অন্যের অনুমতির অপেক্ষায় বসে থাকা, আমার মতে নিছক বোকামি। জীবনটা তখনই সুন্দর হয়ে উঠবে, যখন আপনি যে কাজটা করতে চাইছেন, সেটাই আপনি করবেন। আর তার জন্য, আপনার কারো সমর্থন পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যেটা প্রয়োজন সেটা হল নিজের সমর্থনটুকু পাওয়া।
৪। নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করুন:
এই সমাজে আমরা ছোটবেলা থেকেই শিখে এসেছি যে, যার কাছে টাকা আছে, ক্ষমতা আছে, সৌন্দর্য ও যৌবন আছে, তারই একমাত্র এই পৃথিবীতে মূল্য আছে। আর যদি আপনি এই মিথ্যাগুলিতে বিশ্বাস করেন, তাহলে জেনে নিন, আপনি কখনোই নিজেকে নিজে সত্যিকারের ভালোবাসতে পারবেন না। আপনার মন সব সময় আপনাকে বলতে থাকবে, আপনার কিছুই নেই, আপনার দ্বারা কিচ্ছু হবেনা, আপনি কোন কিছুর যোগ্য নন। সব সময় ভিতরে একটা খালি খালি ভাব কাজ করবে। যখনই আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন, তখনই আবার আপনার অহংকার নতুন করে আর একটু দূরে লক্ষ্য স্থির করে দেবে। তাই কে কি করলো, কে কি পেল সেদিকে নজর না দিয়ে, নিজে কতখানি পেয়েছেন শুধুমাত্র সেদিকেই নজর দিন। আর যখনই দেখেছেন ফেসবুকে কোন পোস্ট বা হোয়াটসঅ্যাপের কোনো স্ট্যাটাস দেখে, অন্য কারো সাথে আপনি না চাইতেও নিজেকে তুলনা করে ফেলছেন, তখনই একটা জিনিস মনে রাখবেন, যে আসলে ভিতর থেকে কি অবস্থা, সেটা কেউ অনলাইনে দেখায় না। অনলাইনে যে সবাই ভীষণ হাসিখুশিভাবে জীবন যাপন করছে সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করে, কিন্তু সেখানে আসলে সত্যিটা অন্য কিছুই।
৫। নিজের যত্ন নিন:
আপনি নিজের শরীর, মন এবং সম্পর্ক গুলোর দিকে কতটুকু খেয়াল রাখেন? নিজের শরীর, মন এবং সম্পর্কগুলোর যত্ন রাখার জন্য, প্রতিদিন এই কটা কাজ আপনার অবশ্যই করা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিজের এবং আশেপাশের লোকেদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, সুযোগ অনুযায়ী একটু খেলাধুলা করা, কুসঙ্গ ত্যাগ করা, নিজের মনের ভিতর কি চলতেছে সেদিকে নজর দেওয়া এবং মেডিটেশন করা। এর মধ্যে থেকে, কটা কাজ আপনি রোজ করেন?
যদি একটাও না করেন, তাহলে কিভাবে আপনি এটা বলতে পারেন, যে আপনি নিজেকে নিজে ভালোবাসেন? দেখুন, যদি আপনি চান, আজ থেকে আপনার জীবনে পরিবর্তন আসুক, তাহলে আজ থেকে আপনাকে সেই কাজগুলো করতে হবে, যেগুলো এর আগে আপনি কোনদিন কখনোই করেননি।
ডিফেরেন্ট ইনপুট = ডিফেরেন্ট আউটপুট।
যে সমস্ত জিনিস গুলো, আপনাকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো থেকে দূরে সরে আসুন এবং যেগুলো উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে, সেগুলোর দিকে এগিয়ে যান। নিজেকে ভালোবাসা মানে শুধুমাত্র মানসিক একটা অবস্থা না। এর মানে, প্রতিদিনের জন্য ছোট ছোট কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা, যেগুলো আপনার জীবনটাকে দিন দিন আরও উন্নত করে গড়ে তুলবে। জীবনে লোকেরা আসবে চলে যাবে, বিভিন্ন উৎসব আসবে চলে যাবে, দিন আর রাত আসবে চলে যাবে। কিন্তু নিজের প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা সারাজীবন আপনার কাছে থেকে যাবে। যদি আপনি সেটাকে ধরে রাখতে পারেন। তো নিজের প্রতি ভালোবাসার গুণটা গড়ে তোলার জন্য এই তিনটা জিনিস করা উচিত।
১. নিজের বেশিরভাগ সময়, সেই কাজগুলো করে কাটান, যেগুলো আপনার নিজের প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে তোলে।
২. নিজের বেশিরভাগ সময়, সেই চিন্তা ভাবনা করে কাটান, যেগুলো আপনার নিজের প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে তোলে।
৩. নিজের বেশিরভাগ সময়, সে সমস্ত মানুষগুলোর সাথে কাটান, যারা আপনার নিজের প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে সাহায্য করে।
সব সময় মনে রাখবেন, নিজেকে ভালোবাসা মানে স্বার্থপরতা না।
কারণ যদি আপনি নিজেকে নিজে ভালবাসতে না জানেন, তাহলে কখনোই আপনি অন্য কাউকে প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসতে পারবেন না।
যাক, নিজেকে ভালোই ভালোবাসি মনে হচ্ছে ? শুধু যত্ন নেইনা আরকি ?
ভাই, যত্ন নেওয়াটাও নিজেকে ভালোবাসার একটি অংশ।
– সো, টেক কেয়ার আফ ইয়র সেল্ফ!
ভালো ছিল। পয়েন্টগুলো একেবারে যুক্তিসম্মত। ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ!