হতাশার মাঝে অনুপ্রেরণা পেতে নিজেকে করুন এই ৪টি প্রশ্ন

জীবনে কোন কাজ করার জন্য অনেক বড় একটা পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনাটি আপনার মন মত বাস্তবায়িত হতে পারেনি। আপনি কি সে কারণে এখন হতাশায় ভুগছেন? অবশ্য এরকম পরিস্থিতিতে আপনার হতাশ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আপনারাই বলুন, হতাশ হলে কি পরিকল্পনাটি আপনার মন মত বাস্তবায়িত হয়ে যাবে?

অবশ্যই হবে না। এজন্য আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে। জীবনের সেই পরিকল্পনায় সময় দিতে হবে। সেটা নিয়ে পুনরায় ভাবতে হবে। অতঃপর একে বাস্তবায়িত করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি প্রথমবারের চেষ্টায় হতাশ হয়ে যান তাহলে কিভাবে আপনার স্বপ্ন পূরণ করবেন বলুন তো?

একটা মানুষ যখন হতাশ হয়ে যায় তার ভেতর কোনো রকমের সুবুদ্ধি কাজ করে না। কেননা একজন হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তির মাথার উপর মনে হয় সম্পূর্ণ আকাশ ভেঙে পড়ে। সুতরাং সে নিজেকে অনেক চাওয়া সত্ত্বেও হতাশা থেকে বের করতে পারে না।

আজকের আর্টিকেলটিতে সেরকম হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে ছোট একটা আলোচনা করা হবে। আর্টিকেলটির মূল উদ্দেশ্য হতাশার মাঝে ছোট একটু অনুপ্রেরণা পাওয়া।

যেমনটা আগে বললাম হতাশ হলে ব্যক্তির সুবুদ্ধি লোপ পায় এবং সম্পূর্ন আকাশ তার ওপর চেপে বসে। এ সময় কেউ তাকে একটু সান্ত্বনা দিতে আসলেও ব্যক্তি যেন আরও দুর্বল হয়ে যায়। তার মনে হতে থাকে জীবন ব্যর্থ। এই হতাশার মাঝে অনুপ্রেরণা পেতে নিজেকে সর্বপ্রথম চারটি প্রশ্ন করতে হবে। এই চারটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি কাজ করার জন্য পুনরায় উদ্দীপ্ত হতে পারবেন।তো চলুন দেরী না করে সেই প্রশ্ন গুলো কি কি দেখে নেওয়া যাক।

পরিকল্পনাটি কেন ব্যর্থ হলো?

আপনার পরিকল্পনাটা কেন বাস্তবায়িত হলো না, কেন সেটি ব্যর্থ হলো, কোথায় ভুল ছিল, কি করলে সেটি ব্যার্থ হতো না ইত্যাদি প্রশ্নগুলো নিজেকে করুন। পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ গুলো খুজে বের করে খাতা কলমে লিপিবদ্ধ করুন। অতঃপর সে ভুলগুলোকে শুধরে নিয়ে পুনরায় পরিকল্পনাটি করুন। একজন মানুষ কিন্তু ভুল থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে। যদি মানুষ ভুল কখনোই না করতো তাহলে সে কিছুই শিখতে পারতো না। একজন সফল ব্যবসায়ীও প্রথমে ভুল করে এসেছে। তাই প্রথমেই হতাশ না হয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন পরিকল্পনাটি ঠিক কেন ব্যর্থ হয়েছিল।

বছর শেষে নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?

আপনি কোন একটা পরিকল্পনার পিছে অনেক সময় দিয়েছেন। কিন্তু দিনশেষে সেটা ব্যর্থই হলো। এখন যদি আপনি পরিকল্পনা পুনরায় না করে হতাশায় ভোগেন তাহলে লাভটা কার হচ্ছে?
কারো লাভ হচ্ছে না। এই সময়টায় তাই চিন্তা করুন বছর শেষে নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান। অবশ্যই আজকের আপনি নিজেকে বছর শেষে উন্নত আপনাকে দেখতে চান। আর এই উন্নত আপনাকে দেখতে চাইতে হলে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতেই হবে। তাই প্রথম প্রশ্নটা থেকে উত্তর খুঁজে বের করে ভাবতে থাকুন বছর শেষে নিজেকে ঠিক কোন অবস্থানে দেখতে চান। অতঃপর সেই লক্ষ্যে পুনরায় কাজ শুরু করে দিন।

নিজের সুযোগও শক্তিকে ঠিক কতটা ব্যবহার করেছিলেন?

আমাদের আশেপাশে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা কাজ করার পূর্বেই সবকিছুর ফলাফল ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেন। তাদের মতে ভাগ্যে যা আছে তাই হবে, তার বেশি কিছু হবে না। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা মানুষের কর্মের উপর ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন। অর্থাৎ মানুষের কর্মই তার ভাগ্য। এই সাধারন বিষয়টা সৃষ্টিকুল বুঝে উঠতে পারে না। এর ফলে কাজ শুরু করার পূর্বেই তার ফলাফল ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেয়। আপনিও যদি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন তবে আপনাকে বলে রাখি আপনি কখনই আপনার শক্তি ও সুযোগকে ভালোভাবে পরিকল্পনার পিছনে ব্যবহার করতে পারেননি। আর এই ব্যর্থতাই হচ্ছে আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ার মূল কারণ। সুতরাং সবকিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে না দিয়ে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে এবং সময় ও শক্তির যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। একটা কথা মনে রাখবেন, চেষ্টা করার দায়িত্ব আপনার। আর ফল প্রদান করার দায়িত্ব হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার। আপনি চেষ্টা করবেন না, সৃষ্টিকর্তাও আপনাকে ফল দেবেন না।

লক্ষ্য পূরণে আসলেই কতটা সময় দরকার হয়েছিল?

কোন ভাল কাজ কিন্তু খুব দ্রুত শেষ করা যায় না। একটা বিশাল প্রজেক্ট এর পিছনে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস কিংবা বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। সে জায়গায় আপনি যদি আপনার পরিকল্পনাটা দু-তিন দিনের ভেতরে শেষ করে ফেলার চেষ্টা করেন তাহলে কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। লক্ষ্য পূরণে ধাপে ধাপে আগাতে হয়। আর এই ধাপে ধাপে আগাতে গিয়ে বেশ অনেকটা সময় লাগে। তাই আপনার বুঝতে হবে আপনার পরিকল্পিত লক্ষ্যটি পূরণ করতে কত সময় লাগবে। উক্ত সময় ধরে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করুন। সেই সময়ের আগেও লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করবেন না, ঠিক তেমনি সেই সময়ের পরেও লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করবেন না। সবকিছু একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আবদ্ধ রাখবেন।

সুপ্রিয় পাঠক, হতাশ হওয়া কোনো সমস্যার সমাধান নয়। বরং হতাশ হয়ে পড়লে সাথে সাথে নিজেকে উক্ত চারটি প্রশ্ন করুন এবং প্রশ্ন থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়ে পুনরায় কাজে লেগে যান। কেননা হতাশা আপনাকে অন্ধকারে ঠেলে দিবে আর অনুপ্রাণিত হয়ে পুনরায় কাজে লেগে যাওয়া আপনাকে আলোর পথের সন্ধান দেবে। আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হচ্ছে, ধন্যবাদ।

Similar Posts

One Comment

Comments are closed.