Al Nayem / জুলাই 13, 2020

ডায়াবেটিস কি? কিভাবে হয়?

শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে

বর্তমান পৃথিবীতে যে রোগগুলোতে মানুষ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত তার মধ্যে একটি হচ্ছে ডায়াবেটিস।  সারাবিশ্বের প্রায় ৪২২ মিলিয়ন মানুষের ডায়াবেটিস রয়েছে এবং বাংলাদেশে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭ মিলিয়নের উপরে। ধারনা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানের দ্বিগুণ হবে।
একসময় ছিলো কলেরা,যক্ষ্মা মানুষের প্রধান আতঙ্ক। সে দিন শেষ হয়েছে। এখন বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, আসছে ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক ও ডায়াবেটিস হবে সার্বজনীন অসুস্থতা।  সুতরাং এই রোগগুলো সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা দরকার।
এই আর্টিকেল হবে ডায়াবেটিস কি? কিভাবে হয়? এবং কত প্রকারের ডায়াবেটিস আছে, তা নিয়ে।

ডায়াবেটিস কি?

আমাদের দেহের শক্তির মূল উৎস হলো গ্লুকোজ যাকে ব্লাড শুগার বা রক্তের শর্করা বলা হয়। এই ব্লাড শুগার দেহের বিভিন্ন কোষ,টিস্যুতে যায় এবং শক্তি সরবরাহ করে। আমাদের দেহের অগ্ন্যাশয় বা pancreas নামক একটি গ্রন্থি(১) আছে যার থেকে ইনসুলিন নামক হরমোন(২) নিঃসৃত হয়।
এই ইনসুলিন হরমোন গ্লুকোজ কে রক্ত থেকে কোষে পৌঁছাতে উদ্দীপনা দেয়। রক্তের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট মাত্রার গ্লুকোজ থাকতে পারে। যেমন- সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার(dL)-এ গ্লুকোজ সর্বোচ্চ থাকবে ১২৫ মিগ্রা অথবা প্রতি লিটারে থাকবে ৬.৯ মিলিমোল(6.9 mmol/L)।
যদি ইনসুলিন হরমোন যথাযথ পরিমানে না নিঃসৃত হয় তাহলে রক্তে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় গ্লুকোজ জমা হয়ে যায়।
অর্থাৎ রক্ত থেকে যে গ্লুকোজ গুলো কোষে চলে যাবার কথা,সেগুলো কোষে যায় না, রক্তেই জমা হয়ে থাকে। তখনকার সিচুয়েশনকেই বলা হয় ডায়াবেটিস।

তাহলে ডায়াবেটিস হবার মূল কারণ হলো ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাব, যার কাজ ছিলো রক্তের গ্লুকোজকে (blood suger) কোষে পৌঁছে দেয়া।

যখন ব্লাড শুগার বা রক্তের গ্লুকোজ কোষে যেতে পারে না তখন কি হয়?

প্রতিটা কোষেরই কাজ আছে। আর কাজ করার জন্য এদের শক্তির দরকার। এই শক্তি তারা পায় ব্লাড শুগার থেকে।
যখন কোষগুলোতে ব্লাড শুগার পৌঁছায় না তখন তারা কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলে, ফলে ডায়াবেটিসের যে সাধারণ লক্ষণ  যেমন- বারবার খাওয়ার পরও ক্ষুধা লাগা, তৃষ্ণার্ত হওয়া, শরীর দুর্বল লাগা এগুলো প্রকাশ পায়।

কি কি ধরনের ডায়াবেটিস হয়?

ডায়াবেটিস মূলত ২ ধরনের। এছাড়া আরো কিছু গৌণ প্রকার আছে।
প্রধান দুটি হলো-

১.টাইপ-০১ ডায়াবেটিসঃ

ডায়াবেটিসের প্রকারের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক এটি। এ ধরনের ডায়াবেটিস রোগীদের দেহে একেবারে ইনসুলিন উৎপাদন ই হয় না। ফলে বাইরে থেকে ইনসুলিন দিয়ে এদের বাঁচিয়ে রাখতে হয়।
তবে আশার কথা হলো,এই টাইপ-০১ ডায়াবেটিস দুর্লভ। খুব কম মানুষ ই এইটাতে আক্রান্ত হয়। যে কোনো বয়সীরাই টাইপ-০১ এ আক্রান্ত হতে পারে।

Types-of-diabetes
Types-of-diabetes

 

২.টাইপ-০২ ডায়াবেটিসঃ

অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগীদের (প্রায় ৯০%) দেহে টাইপ-০২ ডায়াবেটিস পাওয়া যায়। টাইপ-০২ ডায়াবেটিস রোগীদের দেহে আংশিক পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদন হয়। নিয়মমাফিক জীবনধারণ, পরিমিত খাবার,ব্যায়াম করলে এই টাইপ-০২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বয়স্কদের টাইপ-০২ দেখা যায়।

এছাড়াও,
Gestational Diabates(GDM) নামক একধরনের ডায়াবেটিস আছে যা প্রেগন্যান্সির সময় বা পরে হঠাৎ করেই দেখা দেয়।

ধন্যবাদ। এর পরের পর্বে কোন কোন খাবারগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে সে সম্পর্কে লিখবো।
সুস্থ থাকুন। নিরাপদে থাকুন।
ফুটনোটঃ

১-গ্রন্থিঃ দেহের বিভিন্ন স্থানের কোষগুচ্ছ যা থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়

২- হরমোনঃ রাসায়নিক দূত যা দেহের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়

(Visited 84 times, 2 visits today)


শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে

Comments are closed.