গেম খেলার প্রতি আমাদের তীব্র আকর্ষণের কারণ
অবসর সময় কাটানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় একটা মাধ্যম হচ্ছে গেম খেলা। নব্বইয়ের দশকে জন্ম নিয়েছে অথচ নোকিয়ার ফিচার ফোনে Snake Xenzia গেমসটি খেলে অগণিত সময় কাটিয়ে দেয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াটা দুষ্করই বোধহয়। এছাড়াও ফিফা, PES, পাবজি, ফ্রিফায়ার, কল অফ ডিউটিসহ আরো অনেক গেমে আসক্ত বর্তমান যুগের অসংখ্য ছেলেমেয়ে। গাঢ় কোনো এক নেশাদ্রব্যের মত দুর্নিবার আকর্ষণ করেই যাচ্ছে। অবসর সময় কাটানোর মাধ্যমের চেয়েও অনেক বেশি কিছু হয়ে উঠেছে এই গেম খেলাটা।
কিন্তু কেন? কিসের এত আকর্ষণ? কিসের টানে অসংখ্য ছেলেমেয়ে পড়াশোনা উচ্ছনে দিয়ে গেমে আসক্ত হয়ে থাকে সারাদিন? এসব নিয়েই আলোচনা করবো আজ।
গেমের ক্ষতিকারক দিকগুলো নিয়ে প্রচুর পরিমাণে রিসার্চ হলেও এর পজিটিভ দিক, এর প্রতি এত কেন আকর্ষণ, এসব তুলনামূলক কমই হাইলাইটেড হয়ে থাকে। তারপরও বেশ কিছু গবেষক চেষ্টা করেছেন গেম খেলার পেছনের কি-ফ্যাক্টরগুলো খুঁজে বের করতে।
Nick Yee নামক একজন গবেষক প্রথম এ সম্পর্কিত গবেষণার দ্বার উন্মোচন করেন। তার মতে গেম খেলার পেছনে তিনটি উপাদান প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে।
- এচিভমেন্ট
- সামাজিক উপাদান
- আত্মনিমগ্নতা
এচিভমেন্ট:
প্রায় প্রতিটা গেমেই বিভিন্ন লেভেল থাকে। গেমাররা একটা লেভেল শেষ করে আরেকটাতে যায়। অথবা ক্যারেক্টার আনলক করে, নতুন কস্টিউম আনলক করে, রেসিং গেমে আরো পাওয়ারফুল কার বা বাইক আনলক করে। এভাবে পর্যায়ক্রমিক সাফল্যের মধ্য দিয়ে সে যায়। এই এচিভমেন্টই মূলতঃ তাকে বারবার গেম খেলার প্রতি আকর্ষণ করতে থাকে। সে চায় গেমের আরো সামনে যেতে। এভাবে এক আসক্তির মধ্যে পড়ে যায় সে।
সামাজিক উপাদান:
গেমার গেম খেলার সময় বা আগেপরে বাকি গেমারদের সাথে একটা যোগাযোগ গড়ে তুলতে চায়, চ্যাটিং করে এবং এভাবে একটা কমিউনিটি গড়ে উঠার মাধ্যমে গ্রুপ এফোর্টের দিকে চলে যায় গেমার, যা তাকে গেমে আরো সম্পৃক্ত করে ফেলে এবং আরো অধিক সময় সে গেমের পেছনে ব্যয় করে।
আত্মনিমগ্নতা:
গেমের মধ্যে ভার্চুয়াল ক্যারেক্টর সৃষ্টি করা, একে নিজের মত সাজানো, কস্টিউম কালেকশন, সবমিলিয়ে বাস্তব জগত থেকে আলাদা এক জগতে গেমাররা বিচরণ করতে থাকে যা অনেক গেমারকে বাস্তবতা থেকে পালাতে সাহায্য করে। এটাও অনেক গেমারকে গেমে তীব্রভাবে আসক্ত করে ফেলার জন্য দায়ী।
Richard Ryan এবং Edward Deci এর স্ব-নির্ধারণ তত্ত্ব কে ব্যবহার চালানো এক গবেষণা অনুসারে আরো কিছু মোটিভেশনাল ফ্যাক্টর কাজ করে গেম খেলার পেছনে।
তত্ত্বটি হচ্ছে,
মানুষের আচরণ যোগ্যতা, স্বায়ত্তশাসন এবং আত্মীয়তার প্রয়োজনীয়তা দ্বারা পরিচালিত হয়।
এই তিনটা যখন একসাথে কোনো কাজের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় তখন মানুষ কাজটাকে বেশি উপভোগ করে। গেমের ক্ষেত্রেও তাই হয়। বারবার খেলার মাধ্যমে গেমার যোগ্যতা অর্জন করে। বারবার খেলার ইচ্ছাটা আবার আসে গেমের চ্যালেঞ্জগুলার উপর ভিত্তি করে। যদি চ্যালেঞ্জ খুব কঠিন কিংবা খুব সহজ হয় তাহলে গেমার বিরক্ত হয়ে যাবে এবং আর খেলবেনা গেমটা। কিন্তু একটা মডারেট পর্যায়ে থাকলে গেমার বারবার গেমটা খেলে যোগ্যতা অর্জন করতে থাকে। এবং যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে যখন গেমের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে আসে তখন স্বায়ত্তশাসনের দিকটা পূর্ণতা পায়। সর্বপরি, গেমের অন্য প্লেয়ারদের সাথে যোগাযোগ করে একটা ভার্চুয়াল কমিউনিটি সৃষ্টির মাধ্যমে আত্মীয়তার প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ হয়। তখন ওই গেমটা খেলা খুব প্রিয় একটা কাজ হয়ে দাঁড়ায়।
গেম খেলার উপকারিতা:
গবেষণায় দেখা গেছে, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে গেমাররা খুব এগিয়ে আছে। তাছাড়া স্থানিক উপস্থাপনা, আইকনিক দক্ষতা এবং ভিজ্যুয়াল এটেনশনে বেশ পারদর্শী হয়ে থাকে গেমাররা। গেমাররা এখন গেমটাকে শুধু রিলাক্সিংয়ে বেঁধে না রেখে এর বাইরে নিয়ে এসেছে। গেমিংয়ের মাধ্যমে ফান্ডরাইজ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আরো অন্যান্য খাতেও সাহায্যে আসছে গেমাররা। সর্বপরি, আমাদের বাবা-মা রা যাই বলুক না কেন, এত সময় ব্যয় করে আমাদের এত গেম খেলা একেবারেই বৃথা গেছে তা বলা একদমই উচিত হবেনা।