উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ ।। পর্ব – ৩
বাছাইপর্ব শেষে ৩২টি দলের সমন্বয়ে গ্রুপ পর্বের খেলা দিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের মূল আসর শুরু হয়।
গ্রুপ পর্ব: ৫টি ধাপ অতিক্রম করে গ্রুপ পর্বে নাম লেখায় ৬টি দল। এখানে উয়েফা দেশ গুনাঙ্কের উপর ভিত্তি করে ২৬টি দল আগে থেকেই উপস্থিত থাকে। ১ থেকে ১১ নং এসোসিয়েট দেশের ১১টি বিজয়ী দল, ১ থেকে ৬ নং এসোসিয়েট দেশের ৬টি রানারআপ দল, ১ থেকে ৫ নং এসোসিয়েট দেশের ৫টি ৩য় হওয়া দল এবং ১ থেকে ৪ নং এসোসিয়েট দেশের ৪টি ৪র্থ হওয়া দল সরাসরি গ্রুপ পর্বে অংশগ্রহণ করে। এদের মাঝে ড্র অনুষ্ঠিত হয় এবং গ্রুপ নির্ধারিত হয়। একটি গ্রুপে ৪টি দল থাকে এবং সবমিলিয়ে ৮টি গ্রুপ হয়। পরে দ্বৈত রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে হোম & এওয়ে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। গ্রুপ পর্ব শেষে ১৬টি দল নক-আউট পর্বে নাম লেখায়। প্রতিটি গ্রুপের বিজয়ী ও রানারআপ দল পরবর্তী নক-আউট পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
নক-আউট পর্ব: নক-আউট পর্বকে ৪টি উপপর্বে বিভক্ত করা হয়। ১৬দলের পর্ব, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং শেষে ফাইনাল।
১৬দলের পর্বে হোম & এওয়ে ভিত্তিতে একে অপরের মুখোমুখি হয় দলগুলো। এখানে দুটি করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় প্রতিটি দলের। ড্র – অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় কোন দল, কোন দলের মুখোমুখি হবে। এরপর ৮টি দল কোয়ার্টার ফাইনালে অংশ নেয়৷ এ পর্বে আর কোনো ড্র অনুষ্ঠিত হয় না। কোয়ার্টার ফাইনালেও দলগুলো হোম & এওয়ে – পদ্ধতিতে একে অপরের মুখোমুখি হয়। এ পর্বে একই দলের বিপক্ষে দুটি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় প্রতিটি ক্লাব। এরপর ৪টি দল সেমিফাইনালে উন্নিত হয়। সেমিফাইনালেও হোম & এওয়ে পদ্ধতিতে দলগুলো মুখোমুখি হয়। সব শেষে ২টি দল ফাইনালে মুখোমুখি হয়। একটি নির্দিষ্ট দিনে ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় এবং ফাইনালে কোনো হোম & এওয়ে পদ্ধতি থাকে না। একটিই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
এভাবেই মূলত উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগে অংশগ্রহণ করা দলের তালিকা তৈরী এবং বিন্যাস করা হয়।
উল্লেখ্য দল বিন্যাস ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়নস লীগ এবং ইউরোপা লীগের শিরোপা জয়ী দলের অনুকূলে একটি ফ্রি প্রবেশাধীকার থাকে। কিন্তু দলটি যদি ঘরোয়া লীগের মাধ্যমে প্রবেশ করে, তাহলে দল বিন্যাসে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়।
জৌলুশ : পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবল প্রতিযোগিতা এই উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ। টেলিভিশন সম্প্রচার স্বত্ব, মাঠে দর্শক আগমন, অনলাইন প্রচার, ভিজুয়াল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রুপ পর্ব থেকেই মোটামুটি আলোচনার শীর্ষে থাকে চ্যাম্পিয়নস লীগ। কোন কোন ক্ষেত্রে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার চেয়েও মারাত্মক প্রতিদ্বন্দিতা এই ম্যাচ গুলোতে দেখতে পাওয়া যায়।
উয়েফা নিজে পুরো স্বয়ং সম্পূর্ণ একটি সংগঠন। এদের নিজস্ব সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এক-একটি ম্যাচ শুরু হয়। প্রতিটি ম্যাচের পরিবেশনা হয় অনন্য মাত্রায়। ভিজুয়াল গ্রাফিক্স, ক্যামেরা এংগেল, উচ্চ মানের ক্যামেরা, নিখুঁত প্রযুক্তি ও নিরপেক্ষ ভাবে ম্যাচ পরিচালনার জন্য উয়েফার অনেক সুখ্যাতি আছে। এছাড়া দর্শক সমাজেও এজন্য প্রচুর জনপ্রিয় এ প্রতিযোগিতা। পুরো বিশ্বব্যাপি এই একটি প্রতিযোগিতাকে ঘিরে প্রচুর ব্যাবসা হয়ে থাকে। এছাড়া অনেকের জীবন চালনার করার একমাত্র উপায়ও এই উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ।
এবছর ২০২০ সালে তো করোনা ভয়াবহতার জন্য রুদ্ধদ্বার স্টেডিয়ামে ফাইনাল ও নক-আউট পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। তাই এই কয়েকটা মাত্র ম্যাচ দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগের জনপ্রিয়তা বিচার করলে চলবে না।
ফিরে যাই ২০১৮-১৯ আসরে। লিভারপুল চ্যাম্পিয়ন, টটেনহ্যাম হটস্পার রানার্সআপ। ৬৩,২৭২ জন দর্শক স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলো, স্টেডিয়ামে ঢোকার অনুমতি না পেয়ে বাইরে অপেক্ষায় ছিলো প্রায় ০.১মিলিয়ন দর্শক। টিভি ও নানা অনলাইন প্লাটফর্মে ম্যাচটি উপভোগ করেছেন ১.৫১ মিলিয়ন দর্শক। ফাইনাল ম্যাচ চলাকালীন সময়ে মোট ৮.৪মিলিয়ন টুইট হয়েছে। পৃথিবীর ২০০-এর ও বেশি দেশে ২০১৮-১৯ এর পুরো আসর ৩৮০মিলিয়ন দর্শক উপভোগ করেছে।
লিভারপুল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর লিভারপুল শহরের প্রায় ০.২ মিলিয়ন মানুষ রাস্তায় উৎসব পালন করে। বিশ্ব ব্যাপী লিভারপুল ক্লাবের প্রায় ১০০ মিলিয়ন সাপোর্টার আছে, তারা সবাই আনন্দ উদযাপন করে লিভারপুলের জয়ে। এত এত দর্শকের উন্মাদনা থেকেই আন্দাজ করা যায় চ্যাম্পিয়নস লীগের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে।
এবার ফিরে আসা যাক ২০১৯-২০ আসরে। করোনা মহামারীর জন্য স্টেডিয়ামে দর্শক প্রবেশাধিকারে তো নিষেধাজ্ঞা ছিলোই, সাথে খোলা পরিবেশে আনন্দ উদযাপনেও যথেষ্ট কড়াকড়ি আরোপ ছিলো প্রশাসনের। তাই এবার নক-আউটের পুরো পর্বটিই ছিলো অনলাইন ভিত্তিক। এবার রেজিষ্ট্রেশন ভিত্তিক অনলাইন প্লাটফর্মে ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করেছে ২.০৫ মিলিয়ন দর্শক। টিভির সামনে থেকে বিশ্ব ব্যাপি আরোও ১৩০ মিলিয়ন দর্শক উপভোগ করে ফাইনাল ম্যাচ। বর্তমান সময় বিবেচনা করে বায়ার্ন মিউনিখের শিরোপা উৎযাপনেও করাকরি আরোপিত ছিলো জার্মানির মিউনিখ শহরে। তাই অন্যান্য বারের মত চিরাচরিত ভাবে ট্রফি নিয়ে ক্লাব কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়দের ছাদ খোলা গাড়ি নিয়ে শো-ডাউন করতে দেখা যায় নি। লোকাল ক্লাব শিরোপা জিতলে এই শো-ডাউন অন্যতম একটি আকর্ষন শহরবাসীর জন্য। আর আলোকচ্ছটা তো থাকছেই।
পুরষ্কার : বর্তমান এ শিরোপাটি নকশা করা হয় ১৯৬৬ সালে। শিরোপা কাপটি রূপার তৈরি, যা ৭৪ সেমি (২৯ ইঞ্চি) লম্বা ও ওজনে প্রায় ১১ কেজি (২৪ পাউন্ড)। সুইজারল্যান্ডের বের্নের একজন জুয়েলার্স, ইয়র্গ স্টাডেলমান এটি নকশা করেন। কাপটি বাজার মূল্য তখন ছিলো প্রায় ১০হাজার সুইস ফ্রাংক।