স্ট্রোক – যেন এক অভিশাপ

মস্তিষ্কের কোন কারনে রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটার কারণে যদি স্নায়ুতন্ত্রের কাজের ব্যাঘাত ঘটে তাহলে তাকে বলা হয় স্ট্রোক।
অনেকে মনে করেন যে, স্ট্রোক হয় হৃদপিণ্ড তে। কিন্তু মূলত স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কে। স্ট্রোক হতে পারে ২ কারণে।একটি কারণ হচ্ছে রক্তনালীর ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধে এবং অপরটি হচ্ছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ । তবে অধিকাংশ সময় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণেই এ রোগ দেখা যায় এবং এটিই সবচেয়ে বেশি মারাত্মক।

স্ট্রোকের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। একজন মানুষ যখন রক্তনালীর ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তখন সচরাচর তার ভেতরে হঠাৎ করেই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।

এই লক্ষণগুলো হলো :

*প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয়
*কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগী সংজ্ঞা হারায়
* ঘাড় শক্ত হয়ে আসে
*মাংসপেশি শিথিল হয়ে আসে
*নাড়ির স্পন্দন কমে যায়
*মুখ লাল বর্ণ ধারণ করে

যদি এই সকল লক্ষন গুলো কোন ব্যক্তির মধ্যে সুস্পষ্টভাবে জেগে ওঠে তাহলে তৎক্ষণাৎ দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে তাকে প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে । যদি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগ হয় তাহলে সচরাচর একজন রোগীর সুস্থ হতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগতে পারে এবং কোনো কারণে যদি রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধে তাহলে সেই ক্ষেত্রে ২ / ১ দিনের মাথায় রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।

তবে যদি কোনো কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় এবং অবস্থা ভয়াবহতার দিকে অগ্রসর হতে থাকে তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। যদিও বা রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে তাহলে বাক নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথবা হাত-পা কিংবা দেহের যেকোনো একটি অংশ অবশ হয়ে আসে । সেই অংশকে বলা হয় পক্ষাঘাত প্রাপ্ত অংশ।

পক্ষাঘাত প্রাপ্ত অংশ বিশেষ কিছু নিয়মে নাড়িয়ে চাড়িয়ে অর্থাৎ ব্যায়াম করে রোগীকে স্ট্রোক থেকে নিরাময় করা সম্ভব। তবে মস্তিষ্কের যে সকল স্নায়ু সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেগুলো কর্ম ক্ষমতা চিরতরে বিনষ্ট হয়ে যায় । অর্থাৎ সেই সকল স্নায়ুতন্ত দিয়ে যে সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চলনা হত সে সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় ।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে যদি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকে কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হয় তাহলে তার মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সে একদম তার সংজ্ঞা হারায়, অনেক ক্ষেত্রে পাগলের মত আচরণ করতে থাকে আবার অনেক সময় ছোট বাচ্চাদের মত আচরণ করে৷

তবে যদি দীর্ঘ সময় রোগী ব্যায়াম হাঁটাচলায় ইত্যাদি থেকে বিরত থাকে তাহলে এক পর্যায়ে রোগের পক্ষাঘাত প্রাপ্ত অংশ একদম বিকল হয়ে যায়। সাধারণত এই বিকলঙ্গ পুনরায় আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না৷

তবে ডাক্তাররা সাধারণত ছয় মাসের একটি সময়সূচী দিয়ে দেন, সেই ছয় মাসের মধ্যে রোগীকে সুস্থ করতে না পারলে রোগীর সেই পক্ষাঘাত প্রাপ্ত অংশ সম্পূর্ণরূপে বিকল হয়ে যায়।

রক্ত জমাট বেঁধেছে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই স্ট্রোকের চিকিৎসা করতে হবে ।

যদি কোন ব্যক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তাহলে অবশ্যই এই বিষয়গুলো মনে রাখবেন :

১.প্রথমত রোগীকে মানসিকভাবে কোন চাপ দেওয়া যাবে না

২.রোগী যদি উচ্চ রক্তচাপে ভোগে তাহলে সেই ক্ষেত্রে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে ।

৩.সর্বদা দুশ্চিন্তামুক্ত সুন্দর এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে হবে ।

৪.মলমূত্র ত্যাগের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫.সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ।

৬.রোগী কে সম্পূর্ণভাবে ধূমপান পরিহার করতে হবে।

ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অথবা ফিজিওথেরাপিস্ট এর পরামর্শ মোতাবেক নির্দিষ্ট নিয়মে নাড়াচাড়া করানোর মাধ্যমে পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।

আর ভবিষ্যতে যেন আমরা কেউ এই প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত না হয় এটি আমাদের সকলের কাম্য। কারণ একজন ব্যক্তি সুন্দর জীবন প্রত্যাশা করার অধিকার রাখেন।

Similar Posts