ফাস্টফুড আসক্তি এবং আমাদের ভীতিকর ভবিষ্যৎ

কয়েকটা ভীতিকর তথ্য দিয়ে আর্টিকেলটি শুরু করি। ২০১৯ সালে ম্যাকডোনাল্ডের ব্র্যান্ড ভ্যালু ছিলো ১৩০.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, স্টারবাকসের ৪৫.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, KFC এবং সাবওয়ের যথাক্রমে ১৭.২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১৭.১২ মার্কিন ডলার। এই বিলিওনারের লিস্টে আরো আছে ডমিনোস পিজা, পিজা হাট, বার্গার কিংসহ আরো বেশ কয়টি ফাস্টফুড প্রতিষ্ঠান।

ফাস্টফুড খাওয়া মানুষেরা গণিত এবং বিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড টেস্টে প্রায় ২০% খারাপ স্কোর করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দশ বছর বয়স থেকে বেশি পরিমাণে ফাস্টফুড খায়, তারা তিন বছর পরে টেস্টে আরো খারাপ স্কোর করে। অথচ দুই তৃতীয়াংশ শিশু প্রতি সপ্তাহেই ফাস্ট ফুড খায় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

Dr Kelly Purtell আমেরিকায় বয়ঃসন্ধিতে থাকা ১১৭৪০ জনের উপর একটি গবেষণা চালান। উনি বলেন,

আমরা প্রচুর পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি যে ফাস্টফুড শিশুদের স্থুলতা বাড়ায়। কিন্তু এটা এখানেই থেমে থাকেনা। বরং ক্লাসরুমের পারফরম্যান্সের উপরও এটা ইফেক্ট ফেলে। বাবা মা যেন সন্তানদের ফাস্টফুড খাওয়া একদমই বন্ধ করে দেয় তা আমরা বলছিনা, তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব উচ্চ চিনি এবং চর্বিযুক্ত খাবার অনেক কমিয়ে ফেলতে হবে, গবেষণা অন্তত তাই বলে।

  • ৫০% এর বেশি শিশু সপ্তাহে ১-৩ বার ফাস্টফুড খায় বলে রিপোর্ট করেছে।
  • ১০% দাবী করেছে তারা প্রতিদিন ফাস্টফুড খায় এবং ১০% বলেছে একদিন পরপর খায়।
  • কখনোই ফাস্টফুড খায়নি এ সংখ্যাটা ১০% এর কম।

রিসার্চাররা এ গবেষণা করার সময় আরো বেশ কিছু ফ্যাক্টর কন্সিডার করেছিলেন। যেমন: ওরা কতক্ষণ টিভি দেখে, ওদের স্কুল এবং বাসার আর্থ-জনসংখ্যাতাত্ত্বিক প্রকৃতি কিরূপ, অন্য কি খাবার খায় এসব।

কেন ফাস্টফুড খেলে স্ট্যান্ডার্ড টেস্টে কম স্কোর করে তা এই গবেষণা থেকে জানা যায়নি। তবে, আয়রনের মত আরো প্রয়োজনীয় কিছু পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিই জ্ঞানের কম বিকাশের জন্য দায়ী।

প্রচুর চিনি এবং চর্বিযুক্ত খাবার আমাদের শেখার এবং মুখস্থ করার প্রতিভাকে অনেক মন্থর করে দেয় বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

 

Sugary drinks
Sugary drinks

 

UN টার্গেট নিয়েছিলো ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুদের স্থুলতা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ডেডলাইন মিস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল এবং এই ক্রমবর্ধমান ফাস্টফুড ব্যবসার কারণে শিশুদের অসুস্থতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আয়ু কমে গিয়েছে।

২০১৩ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, মিশরের ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩৫.৫ শতাংশ শিশু স্থুলতায় ভুগছে, গ্রীসে ৩১.৪ শতাংশ, সৌদি আরবে ৩০.৫ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৯.৩ শতাংশ, মেক্সিকোতে ২৮.৯ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে ২৭.৭ শতাংশ!

বর্তমানে ৩.৫ মিলিয়ন শিশুর দুই ধরনের ডায়াবেটিস আছে, যেটা একসময় চিন্তাও করা যেত না। এটার সুদূরপ্রসারী নেগেটিভ ইফেক্ট আছে যা কিনা অন্ধত্ব পর্যন্ত গড়াতে পারে! এই সংখ্যাটা ২০২৫ এর মধ্যে ৪.১ মিলিয়নে গিয়ে পৌঁছাবে ধারণা করছে World Obesity Federation!

স্থুলতার এই মহামারী বিশ্বের প্রতিটি দেশে ছড়িয়ে গেছে। এ থেকে পরিত্রান পেতে সরকারকে আরো বদ্ধপরিকর হতে হবে। ফাস্টফুডের নামে অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে হবে অতি শীঘ্রই। বাবা-মাকেও আরো কঠোর হতে হবে এ বিষয়ে। স্কুলগুলোতেও সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালাতে হবে। শিশুদের এসব ফাস্টফুড গ্রহণে অনুৎসাহিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোকাকোলা কিংবা এ জাতীয় পানীয় কখনোই বিশুদ্ধ পানির বিকল্প হতে পারেনা। নুডলস বা এ জাতীয় খাবার কখনোই স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প হতে পারেনা।

রেফারেন্স:

https://www.google.com/amp/s/amp.theguardian.com/society/2016/oct/07/junk-food-shortening-lives-children-obesity-diabetes-data

https://journals.sagepub.com/doi/10.1177/0009922814561742

Similar Posts