মিথ্যাবাদী চেনার কৌশল
“মানুষের হাবভাব দেখলেই আমি বলে দিতে পারি, সে লোক কেমন”। আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ আছে যারা এরকম বলে থাকেন। তাঁদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কিভাবে বুঝতে পারেন। উত্তরে তাঁরা বলবেন, “কত মানুষ দেখলাম জীবনে”।
কথাটা কিন্তু একদম সত্যি। আপনি যত দেখবেন তত জানতে পারবেন। কিন্তু সমস্যাটা হলো, আমাদের বয়সের পরিসরটা খুব ছোট। তাছাড়া মানুষের বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে আধবুড়ো হয়ে গিয়ে মানুষ চেনা এক কথা। আর আগেভাগেই জেনে সাবধানে চলা আরেক কথা। তাই না?
লোক দেখামাত্র চিনে ফেলা মুশকিল। আর সেই কৌশল একদিনে শেখাও মুশকিল। তবে আর যাই হোক, একদিনে মিথ্যেবাদীদের লক্ষণ জানা যাবে। আর সে লক্ষণগুলো ভালোভাবে খেয়াল করলে, কে মিথ্যা বলছে কে বলছে না- তা আপনিও বুঝতে পারবেন। তো চলুন, চোখ বুলিয়ে আসা যাক।
প্রথম কথা:
মিথ্যাবাদীর লক্ষণ জানার আগে কয়েকটা বিষয় আপনার জেনে রাখা জরুরি। প্রথমেই যেটা বলব, তা হলো- মানুষের মনের ভাবের মাত্র তিরিশ শতাংশ মুখের কথার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। অনেকে অবাক হয়ে ভাববেন, ভাষা তাহলে কিজন্যে রইল!
কিন্তু এটাই সত্যি। বাকি সত্তর শতাংশ ভাব প্রকাশ পায় অঙ্গভঙ্গি তথা বডি ল্যাংগুয়েজ দ্বারা। আর সে কারণেই নবজাতক শিশুর ক্ষিধে পেলে মা’র বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না।
বডি ল্যাংগুয়েজের পরিবর্তন ঘটে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে বডি ল্যাংগুয়েজ অস্পষ্ট আর উন্নত হতে থাকে। যেমন- একটা বাচ্চা মেয়ে আপনার কাছে কিছু লুকালে আপনি তা সহজেই ধরতে পারবেন। কিন্তু কোনো পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি সেটা করলে আপনার বুঝতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। এর কারণই হলো, বয়স যত বাড়বে মানুষের আচরণও তত উন্নত হবে। তবে যতই উন্নত হোক না কেন, কোনো না কোনোভাবে নিজের শরীর তার মিথ্যে কথাকে স্পষ্ট করে বলে দেয়। আর সেই সাইনগুলোই আমরা এখন জানতে যাচ্ছি।
১. চোখে চোখ না রাখা:
এটা মিথ্যাবাদীদের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। মানুষ চোখে চোখ রেখে মিথ্যা বলতে পারে না। কেউ রাখলেও কিছুক্ষণ পরই চোখ নামিয়ে নেয়। ব্যাপারটা আপনি নিজের ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আপনার মা যখন জিজ্ঞেস করবেন, “কিরে রেজাল্ট দিয়েছে?” আপনি আপনার মা’র চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, না দেয়নি। এরপর যখন আবার জানতে চাওয়া হবে যে কবে রেজাল্ট দেবে, তখন আর আপনি মাথা তুলে তাকাতে পারবেন না!
২. চোখ পিটপিট করা:
চোখে চোখ না রাখার আরেক সংস্করণ হলো চোখ পিটপিট করা বা ঘন ঘন পলক ফেলা। একটু খেয়াল করলে আপনার আশেপাশের মানুষদের মধ্যে সহজেই এ লক্ষণ আবিষ্কার করে ফেলতে পারবেন। কিন্তু তাই বলে ভুল বুঝাবুঝি যেন না হয়। একথা বলছি কারণ আমার এক বন্ধু আছে যে স্বাভাবিকের চেয়েও দ্রুত পলক ফেলে। এমন অনেকেই আছে। সেজন্য তারা সব সময় মিথ্যা বলে, এমনটা কিন্তু না!
৩. মুখে হাত দেয়া:
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এই আচরণ ব্যক্তিবিশেষে পরিবর্তিত হয়। পরিবর্তনগুলো সাধারণত এরকম- হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরা, ঠোঁটের কাছাকাছি জায়গায় হাত বুলানো, মুখ না ছুঁয়ে নাক-চিবুক কিংবা চোখের নিচে স্পর্শ করা।
ধারণা করা হয়, মুখের বলা মিথ্যাকে আটকানোর জন্যে মস্তিষ্ক সহজাতগত ভাবে হাতকে নির্দেশ দেয় যাতে হাত মুখকে বাঁধা দেয়। কেননা মিথ্যা একটি গর্হিত কাজ তা মস্তিষ্ক জানে। একটা শিশু যখন মিথ্যা বলে, তখন তাকে মুখ চেপে ধরতে দেখা যায়। এই মুখ চেপে ধরার আচরণই উন্নত হয়ে অন্যান্য আচরণের রুপ পেয়েছে।
৪. গলার স্বরের পরিবর্তন:
আপনার চেনা মানুষরা যাদেরকে আপনি কাছ থেকে চেনেন, তাদের ক্ষেত্রে এ লক্ষণটা খুব কার্যকরী। গলার স্বরে ভিন্নতা, কণ্ঠ কেঁপে কেঁপে ওঠা, কথা বেশী দ্রুত কিংবা ধীরে বলা- এসব পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
তবে আপনার অচেনা মানুষদের ক্ষেত্রে এ লক্ষণ কার্যকরী নয়। যাদের কণ্ঠ শুনে আপনি অভ্যস্ত নন, তাদের কণ্ঠের পরিবর্তন বুঝবেন কিভাবে!
৫. হাতের তালু লুকানো:
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আচরণ এটা। যে আপনার সাথে কথা বলছে, তার হাতের তালু যদি আপনি দেখতে পান, তবে সে সত্যি কথা বলছে। কোনো বিজ্ঞাপন উপস্থাপনায় কিংবা বক্তৃতায় পটু কোনো ব্যক্তিকে খেয়াল করে দেখবেন। তারা সবসময় হাতের তালু মেলে রেখে কথা বলে যাতে আপনি তাকে বিশ্বাস করেন। মিথ্যা কথা বলার সময় সাধারণত মানুষ এ কাজটা করতে পারে না। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে, হাত উপুর করে, কিছু ধরে রেখ, এক হাত অন্য হাত দিয়ে ঢেকে রেখে মানুষ মিথ্যা বলে। তবে যারা অভ্যস্ত যেমন- বক্তৃতায় পটু লোক, উপস্থাপক, এদের ক্ষেত্রে এ লক্ষণ কাজ করবে না।
কৌশল শিখে কুশলী:
আপনি হয়তো ভাবছেন, যাক- মিথ্যাবাদীর লক্ষণ জেনে ফেললাম, মিথ্যা বলার সময় ভুলেও এসব করব না। ব্যাপারটা কিন্তু অতটা সহজ না। মানুষের সহজাত অভ্যাস পরিবর্তন করা কষ্টকর। নাহয় ধরলাম আপনি শেষের সবকটা আচরণ আপনার আয়ত্ত্বে এনে ফেললেন। কিন্তু চোখ, এটা কিন্তু সহজে বাগে আনা যায় না!
শেষকথাটা বলছি। উপরের লক্ষণগুলো যদি কারো নিত্ত নৈমত্তিক অভ্যাস হয়ে থাকে, তাহলে কিন্তু ভুল বুঝাবুঝি হয়ে যাবে। ঠোঁটের কাছাকাছি হাত বুলানো, চোখের নিচে ঘষা…এসব আবার অনেকের মুদ্রাদোষও হতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে,বাকি লক্ষণগুলো অনুসরণ করুন। আপনি নিজে যখন মিথ্যা বলেন, তখন আপনি কী কী করেন- সেগুলো খেয়াল করুন। দেখবেন আপনি সহজেই মিথ্যাবাদী ধরতে পারছেন। তো, চেষ্টা চালিয়ে যান। আপনার প্রচেষ্টা সফল হোক, তা-ই কামনা করছি।