সাইনাস? অনুসরণ করুন কিছু টিপস
সাইনাসের সমস্যার কথা সম্পর্কে অনেকেই জেনেছেন নিশ্চয়ই। এই সমস্যার কথা আসলে বুঝিয়ে বলা যাবে না। কেননা ব্যাথাটা আসলে কত গভীর একমাত্র যার হয় সেই বুঝে। ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কাউকেই আসলে ঠিক ব্যাথার ব্যাপারটা অনুভব করিয়ে দেওয়া সম্ভব না। আর এই সাইনাস হলো এমন এক সমস্যা যেটা একবার ধরলে সারাজীবন আপনাকে আকড়ে ধরে থাকবে। আপনাকে ছেড়ে যেতে চাইবে না।
একটু সাবধানতা অবলম্বন করলেই কিন্তু সাইনাসের সমস্যাটা আসলে হয় না। আর কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলেই সাইনাসের ভুক্তভোগীরা ব্যাথা থেকে কিছুটা আরাম পেতে পারেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই সাইনাসে আক্রান্ত। আবার অনেকে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও এর থেকে আরাম পাওয়ার ব্যাপারটা জানেন না। নিরবে ব্যাথা সহ্য করেন। ব্যাথায় ছটফট করেন। তাদের জন্য আজকের এই লেখা। আশা করি এই লেখা আপনাকে সাইনাস থেকে সাবধান করবে বা সাইনাসে আক্রান্ত হলে ব্যাথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় বলে দেবে।
সাইনাস কি?
আমাদের মুখের হাড়ের ভেতর কতগুলো ( চার জোড়া এর কাছাকাছি) ফাঁপা বায়ুপূর্ণ জায়গা আছে। সেই বায়ুপূর্ণ জায়গা গুলোই সাইনাস।
সাইনাসের কাজ কি?
সত্যি বলতে সাইনাসের কাজ কি সেটা জানা সেভাবে সম্ভব হয়নি। কিন্তু মানবদেহে সাইনাসের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তা হলো- সাইনাস নাকের মধ্যে অবস্থিত বাতাসকে হালকা রাখতে সাহায্য করে। আবার মাথার খুলিকে এই সাইনাস বিভিন্ন ভাবে রক্ষাও করে থাকে। মূল কথা এর কাজ হলো ভেন্টিলেশনে সহায়তা করা।
সাইনাসের সমস্যা সাধারণত কী এবং কেনো হয়?
সাইনাসে যখন কোনো কারণে সংক্রমন হয় তখন যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে সাইনোসাইটিস বলে। সহজ কথায়, যদি নাকের সংক্রমণ হয় তবে সেটাই সাইনোসাইটিস।
এখন নাকের সংক্রমণ বলতে কি বুঝায়? সাইনাসে মিউকাস জমে। এই মিউকাসের কারণে যখন প্রদাহর সৃষ্টি হয় তখন সাইনোসাইটিস হয়।
এছাড়াও কোনো কারণে যদি সাইনাসের মধ্যে ঘা বা প্রদাহ হয় সেটা থেকেও সাইনোসাইটিস হতে পারে।
দাঁত, চোখ, নাকের অসুখ থেকে কিংবা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা এলার্জির কারণেও সাইনোসাইটিস হয়ে থাকে।
ঠান্ডা লাগা ও নাকের টিউমার হওয়াও সাইনোসাইটিস এর কারণের মধ্যে পড়ে।
বিশেষ যে কারণের জন্য সাইনোসাইটিস হয়ে থাকে সেগুলো হলো-
*নাকের হাড় কোনো দূর্ঘটনা কিংবা জন্মগত কারণে বেঁকে যাওয়া
*নাকের পেছনের টনসিল বড় হয়ে গেলে
*নাকের হাড় ফাঁটা
*দাঁতের ইনফেকশন
*কোনো কারণে ময়লা পানি প্রবেশ করলে
*অপুষ্টিজনিত সমস্যা থেকেও এটা হতে পারে
*স্যাতস্যাতে আবহাওয়াও একটি বড় কারণ
কীভাবে বুঝবেন আপনার সাইনোসাইটিস হয়েছে?
কিছু লক্ষণ আছে যার মাধ্যমে বোঝা যায় আপনি এ সমস্যায় আক্রান্তদের একজন।
*মাথায় কপালে ভীষণ অস্বস্তি, একই সাথে প্রচুর পরিমাণে ব্যাথা
*মাথাব্যথা সকালের দিকে কম থাকে। ধীরে ধীরে দুপুরের মধ্যে অনেকখানি বেড়ে যায়। আবার বিকালের মধ্যে ব্যাথার তীব্রতা কমে যায়
*সাধারণত হাটাহাটি করলে কিংবা মাথা নিচু করে রাখলে ব্যাথা বাড়ে।
*মাথা নাড়াচাড়া করলে ব্যাথা বাড়ে, আবার ভারী ভারীও লাগে
*জ্বর জ্বর ভাব, কিছু ভালো লাগে না
*অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
*নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া। নাক বন্ধের কারণ বের করতে গেলে দেখা যাবে পুঁজ জমে আছে
*অনেকদিন সাইনাসের অসুখে ভুগলে চিকিৎসক এক্স-রে করাতে বলেন। আর সাইনোসাইটিস হলে এক্স-রে রিপোর্ট ঘোলা আসে
*নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়ে
*নাকের মাঝে ভারী লাগা
সাইনাসের এই সমস্যার প্রতিকার আছে কি?
না সাইনাসের এই সমস্যার কোনো প্রতিকার নেই। এই সমস্যা একবার চেপে ধরলে আর কখনোই যাবে না। প্রতিনিয়ত আপনাকে এই ব্যাথা সহ্য করতে হবে।
তবে ব্যাথা থেকে কিছুটা আরামবোধ পেতে আপনি নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো ব্যাবহার করতে পারেন-
*সর্বপ্রথম যেটা বলবো সেটাই সবচেয়ে ভালো মনে করা হয়। তবে এটা একটু কষ্টদায়ক বটে। কিন্তু সঠিক ভাবে করতে পারলে অনেকটাই ব্যাথা থেকে আরাম পাওয়া যায়।
প্রথমে এক গামলা (মাঝারি আকারের) নিয়ে সেটায় গরম পানি নেবেন। তারপর এক নাকের ছিদ্র দিয়ে পানিটা টেনে নিয়ে অপর ছিদ্র দিয়ে বের করে দেবেন। একটু কষ্টদায়ক পদ্ধতি। কিন্তু করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। এতে নাকের ভেতর জমে থাকা মিউকাস বের হয়ে যাবে।
* গরম পানিতে মেনথল দিয়ে সেই ভাপটা নিতে পারেন। কিংবা লবন মিশিয়েও ভাপ নেওয়া যায়। এতে পানির ভাপে যেটা হয়, নাসিকা পথ ভেজা থাকে। আর ভেজা নাসিকা পথে শ্লেষ্মা বের হয়ে যায়। দিনে দুই বার এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে ভালো ফল আসবে।
*ভেজা তোয়ালে দিয়ে সাইনাসের জায়গা গুলো ভালোভাবে চেপে চেপে মুছুন। এতে ভালো লাগবে।
*মাথা ব্যাথা করলে ভেজা টাওয়াল পেঁচিয়ে রাখতে পারেন। তবে সাবধানতার সাথে। ঠান্ডা যেন না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
*যথেষ্ট বিশ্রাম নিন। মানসিক চাপ, যত রকমের দুশ্চিন্তা আছে সব ভুলে যান। চোখে বেশি চাপ পড়ে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
*ভালো ফল পেতে প্রতিদিন এক চামচ করে মধু খেতে পারেন। এই মধু এমন এক ভেষজ তরল যা সব রোগেরই সমাধান।
*উষ্ণ গরম পানিতে এক খন্ড লেবু থেকে রস বের করে মিশিয়ে খেতে পারেন। পরিত্যাগ করতে পারেন সাধারণ চা, খেতে পারেন গ্রীন টি।
*প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে যায়। ফলে জমে গিয়ে নাক বন্ধ হওয়ার আগেই পাতলা শ্লেষ্মা নাক দিয়ে বেরিয়ে যায়। ব্যাথা আর করে না।
*তীব্র ব্যাথা হলে পড়েই কিলার খাওয়া যায় তবে চিকিৎসকেত পরামর্শ নিয়ে। এছাড়া সাময়িক আরামের জন্য বাম (Balm) ব্যাবহার করা যেতে পারে। বামের ঠাণ্ডা অনুভব আপনাকে দিতে পারে অন্যরকম প্রশান্তি।
কিন্তু অতিরিক্ত বামের ব্যবহার স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সাবধান।
আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকবেন।