র্যাপ মিউজিকের ইতিকথা
ক তুই কই যাবি গাড়ি তোর আমার চাবি
মিটাইয়া মনের দাবি পরে কইস হাবিজাবি।
মমতাজের লোকাল বাস গানের মাঝে র্যাপার শাফায়াতের এই র্যাপ হয়তো আমাদের অনেকেরই জানা। বিশ্বায়নের এই যুগে এমিনেম, উইজ খালিফা, স্নুপ ডগ, টাইগা, ডক্টর ড্রে কেউই আমাদের অচেনা নয়। যেকোনো জেনারের গানে অথবা পুরোনো কোনো গানের মাঝে র্যাপ দিয়ে ফিউশন করা হাল আমলের মিউজিকের একটি ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্ত র্যাপ কি?কোথা থেকে কিভাবে এলো? কেনই বা এতো জনপ্রিয়? এসব প্রশ্নের উত্তর হয়তো আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আসুন র্যাপ নিয়ে নতুন কিছু জানার ও জানাবার চেষ্টা করি।
“র্যাপ” অর্থ কি?
র্যাপ একটি পুরোনো শব্দ। টাইম মেশিনে চড়তে পারলে আপনি এই শব্দের ব্যবহার ১৫ কিংবা ১৬শতকের ব্রিটেনেও খুঁজে পাবেন। এর নিরেট আভিধানিক অর্থ আঘাত করা। কিন্তু কয়েক শতক পর আমেরিকায় এর অর্থ সামান্য পরিবর্তিত হয় তখনকার লোকজন এর দ্বারা কথা বলা বোঝাতো। আর ৬০এর দশকে আমেরিকার কালো সম্প্রদায়ের লোকেরা এই শব্দকে একপ্রকার গালি হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে।
কিভাবে র্যাপের জন্ম হলো?
গল্প বলা কিংবা শোনা আফ্রিকার চিরাচরিত ঐতিহ্যের মাঝে অন্যতম এর ইতিহাস সম্ভবত সহস্রাধিক বছর পুরোনো। তো একটা সময় গল্পকাররা শ্রোতার কাছে তাঁদের গল্প আরো আকর্ষনীয় করে তুলতে গল্প বলার সাথে সাথে হাতে তৈরী বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার শুরু করে। ধারনা করা হয় গল্পকারদের সেই গল্প ও সুরের মিশ্রণের পরিপক্ব রূপ আজকের র্যাপ সংস্কৃতি। ঔপনিবেশিক শাসনামলে ইউরোপীয়রা নিরিহ গোবেচারা আফ্রিকানদের ধরে নিয়ে বিভিন্ন দেশে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিতো। আমেরিকাতেও অনেক দাস রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছিলো তারা। লিঙ্কন সাহেব দাস প্রথা বিলুপ্ত করার আগ পর্যন্ত দাসরা তাঁদের মনুষ্য প্রভুর সম্পত্তি হিসেবেই গণ্য হতো, সে নিয়ে অন্য সময় কথা বলা যাবে। যাই হোক মানুষ যেখানেই যাক সে তো আর একা যায় না। সাথে করে বয়ে নিয়ে চলে তার বিশ্বাস, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, আরো অনেক কিছু। তখন কে জানতো কয়েক শতক পর সমাজে উপেক্ষিত এই দাসদের সংস্কৃতিই একটা সময় আমেরিকার সংস্কৃতিকেই পাল্টে দিবে, অত্যাচারিতদের সঙ্গীতের ধারাই বিশ্বব্যাপী হবে তুমুল জনপ্রিয় যার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকবে বিশ্বব্যাপী শত কোটি মানুষ। র্যাপ ছিলো অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সর্বহারাদের প্রতিবাদের মাধ্যম, র্যাপ ছিলো নিজের ভাবাবেগ ছন্দে ছন্দে প্রকাশের পন্থা। আজকের বিশ্বব্যাপী সফল র্যাপ ইন্ডাস্ট্রির পেছনে আছে গল্পকারের গল্প ও বাদ্যযন্ত্রের মিশ্রণ, লক্ষ দাসের কান্না-ঘাম-শ্রম, অত্যাচারিতের রক্ত, নানা যুগের বিবর্তন সর্বোপরি বিশ্বায়নের প্রভাব যার ফলাফল র্যাপের বাণিজ্যিক সফলতা।
৭৫ থেকে ৮৫ এর দশক
র্যাপ মিউজিকের গোড়াপত্তন মুলত এ দশকেই হয়। ডিজে কুল হের্ক, গ্র্যান্ডমাস্টার ফ্ল্যাশ এবং দি ফিউরিয়াস ফাইভকেই এই নতুন জেনারের আবিস্কারক মনে করা হয়।
৮৫ থেকে ৯৫ এর দশক ‘ওল্ড স্কুল’ র্যাপ
এ দশকে এসে র্যাপ পূর্ণতা ও বাণিজ্যিক সফলতা লাভ করতে শুরু করে। এরিক বি, রাকিম, টু-পাক শাকুর, নটোরিয়াস বিগ ই দের মত প্রতিভাবান শিল্পীদের দ্বারা ইন্ডাস্ট্রির সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন ও র্যাপের ভিত গড়ে ওঠে।
৯৫ থেকে ২০১০ আধুনিক র্যাপের সুচনা
এ সময় এসে র্যাপ মিউজিক নামি-দামি বিভিন্ন মিউজিক কোম্পানির সাহায্যে বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়। এছাড়া মূলধারার সঙ্গীতের সাথে মিশে যেতেও সমর্থ্য হয় এ সময়টায়। এ সময়ের সেরা র্যাপারদের মধ্যে আছেন এমিনেম, 50 সেন্ট, ন্যাশ, কেনি ওয়েস্ট প্রমুখ।