ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতা ও প্রতিরোধের উপায়

ডেঙ্গু যে কত ভয়ানক হতে পারে তা আমরা ২০১৯ সালে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। আবার ও সময় এসেছে ডেঙ্গু জ্বরের। যদিও এবার প্রচারণা তুলনামুলক কম কিন্তু ডেঙ্গু থেমে নেই। ইতিমদ্ধ্যেই হাসপাতাল গুলোতে ডেঙ্গু রোগীর দেখা পাওয়া গেছে। তাই এখনই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে এবং জানতে হবে ডেঙ্গু সম্পর্কে ।

preventing-dengue-together-to-raise-awareness

ডেঙ্গু কিভাবে ছড়ায়?
ডেঙ্গু হল এক ধরনের ভাইরাস, আর এই ভাইরাসই ডেঙ্গু রোগ তৈরি করে। এই ভাইরাসের বাহক হল এডিস মশা। অন্য কোন মশার মাধ্যমে কিন্তু এ রোগ ছড়ায় না। তবে অন্য মশার সাথে এডিস মশার কিন্তু পার্থক্য রয়েছে। এডিস মশা বেশির ভাগ সময় দিনের বেলায় কামড়ায়। এ মশা গায়ে ডোরাকাটা ,ভাল করে দেখলে খুব সহজেই আলাদা করা যায়৷

ডেঙ্গু জ্বর কি?
আমরা সকলেই জানি যে, ডেঙ্গু ভাইরাস এর সংক্রমণে এই রোগ হয়। তবে ডেঙ্গু জ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১) সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর
২) হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর

১) সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরঃ
সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর তেমন ভয়ংকর নয় এবং এটি অন্য ভাইরাস জ্বরের মতই হয়ে থাকে। ৫-৭ দিনে ভাল হয়ে যায়।

২) হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরঃ
সাধারন ডেঙ্গু জ্বর তেমন চিন্তার বিষয় না হলেও হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে প্রাণঘাতি। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরের কারনে শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে। রক্তের প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা কমে যায়। অনেক সময় দেখা যায় রোগী শক এ চলে গেছে যাকে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম বলে। এর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমুহঃ
★ শরীরের তাপমাত্রা ১০২-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে।
★ শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা হয়। এজন্য ডেঙ্গু জ্বরকে ব্রেক বোন ফিভারও বলা হয়।
★ মাথা ও চোখের চারপাশে, মাংসপেশিতে ও পেটে ব্যথা হতে পারে।
★ ক্ষধামন্দা দেখা দেয়, মুখে স্বাদ থাকেনা, সারা শরীর দুর্বল লাগে।
★ মুখ লালচে হয়ে যায় এবং শরীরে র্যাশ দেখা যায়।
★ দাঁতের মাড়ি, নাক বা শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত পাত হতে পারে। এমনকি পায়খানা, প্রশ্রাবেও রক্ত পাওয়া যায়।
★ প্রস্রাবের পরিমাণ অনেক কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়।


এক থেকে চার নাম্বার পর্যন্ত উপসর্গ গুলো সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর সহ সকল ভাইরাস জ্বরেই দেখা যায় । তাই আতংকিত হবেন না। রক্তপাত সহ পরবর্তী উপসর্গ গুলো হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ । তাই এক থেকে চার নাম্বার পর্যন্ত লক্ষণ গুলো থাকলে চিকিৎসকের নিকট যেয়ে নিশ্চিত হোন আপনার ডেঙ্গু কিনা। তাদের পরামর্শ নিন। স্মরণ রাখবেন, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া বা পরিমান খুব কমে গেলে বুঝতে হবে রোগীর জীবন বিপন্ন ।

ডেঙ্গু জ্বরে করণীয়ঃ
১) সর্বপ্রথম আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তা হল, ডাক্তারের কাছে যেয়ে নিশ্চিত হবেন ডেঙ্গু কিনা। ডেঙ্গুভাইরাস সনাক্তকরণে আপনার রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন হবে। পরীক্ষা গুলো হল NS1, IgM, IgG

২) এছাড়া রক্তের complete blood count (CBC) করা হবে সাথে প্লেটলেট এর পরিমাণও দেখা হবে। প্লেটলেট দেড় লাখের কম আসা বিপদজনক৷ এছাড়া রক্তের হেমাটোক্রিট দেখতে হবে। প্রয়োজনে প্রতি ৬ ঘন্টায় অন্তর এটি করতে হতে পারে।

৩) রোগির অবস্থা আশংকাজনক হলে চিকিৎসক প্রয়োজনে হার্ট, লিভার , কিডনি প্রভৃতির কিছু ফাংশন টেস্ট করতে পারেন।


১। ডেঙ্গু যেহেতু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, তাই এর চিকিৎসায় এন্টিবায়োটিক এর কোন ভুমিকা নেই। এজন্য ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিতে হবে এবং প্রচুর তরল খাবার,স্যালাইন ও পানি খাওয়াতে হবে। ডেঙ্গু রোগী কে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট চিকিৎসক দিনে তিন বা চারবার খেতে দেবেন। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ মিগ্রা/প্রতি কেজি বাচ্চার ওজন অনুসারে চার বেলা দেয়া যেতে পারে। কোন ভাবেই যেন মাত্রা এর বেশি না হয়। মাত্রা এর বেশি হলে ক্ষতি হবার সম্ভবনা আছে। এসপিরিন, কিটোরোলাক, আইবুপ্রোফেন ,ডাইক্লোফেনাক প্রভৃতি NSAID. জাতীয় ওষুধ কখনোই গ্রহন করা যাবে না।এই ওষুধের জন্য সাধারণ ডেঙ্গু ,হেমোরেজিক হয়ে মারাত্মক রূপ ধারণ করে জীবন সংশয় ডেকে আনতে পারে।

২। একাধিকবার পানি দিয়ে গা মুছিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কোনক্রমেই ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা যাবে না।

৩। রক্তে যদি প্লেটলেট এর পরিমান অনেক কমে আসে তবে জরুরি ভিত্তিতে রক্ত/প্লেটলেট দিতে হতে পারে।

৪। অবস্থার অবনতি হলে বা রোগি শকে গেলে ICU সাপোর্ট লাগতে পারে। এক্ষেত্রে রোগিকে নিকটস্থ হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যেতে হবে।

রোগিকে কখন হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবেঃ
১। রোগির শারীরিক অবস্থা অবনতি হতে থাকলে।
২।প্রচন্ড পেট ব্যথা ,সাথে বমি হলে।
৩। পায়খানা প্রস্রাবে রক্ত আসলে , মুখ দিয়ে রক্ত পড়লে, পায়খানার রং কালো হয়ে গেলে।
৪। হাত, পা ঠান্ডা হয়ে আসলে এবং অনেক কম প্রস্রাব হলে বা ৪-৬ ঘন্টা একেবারেই না হলে।

প্রতিরোধ
ডেঙ্গু মশা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখাই এর প্রতিরোধের উপায়।
মশা যেন কামড়াতে না পারে এজন্য মশারি ব্যবহার করতে হবে । প্রয়োজনে কয়েল, স্প্রে প্রভৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে। ডেঙ্গু মশা দিনের বেলাও কামড়ায়। তাই দিনে বেশি সাবধান থাকুন। এডিস মশা বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পানিতে জন্মে। এজন্য টব , বাথরুম বা আশেপাশে যেখানে পানি জমে থাকে সেখানে পানি যেন জমতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে ।

আজ এই পর্যন্ত।
আসসালামু আলাইকুম।

Similar Posts