চুল কেন পড়ে এবং চুল পড়া বন্ধ করবেন কীভাবে
চুল পড়া এখন একটি বড় সমস্যা।মাথা ভর্তি চুল থাকবে এমনটা সবাই চায়। কিন্তু সবার তা হয়না। বংশগত অথবা হরমোনাল কারণে অথবা শারীরিক কিছু সমস্যায় আমাদের মাথার কিছু অংশ অথবা পুরো মাথা থেকে চুল পড়তে থাকে। কিছু চুল স্বাভাবিক ভাবে ঝরে পড়বেই কিন্তু এর পরিমান যদি দৈনিক ১০০ টির বেশী হয় তাহলেই সমস্যা আর অবহেলা করা ঠিক নয়। চুল গোঁড়া থেকে উঠে আসা আর চুলে ভেঙ্গে যাওয়া কিন্তু এক নয়।
চুল পড়ার কারণ গুলো কি কি?
Androgenetic কারণে চুল পড়া ছেলে এবং মেয়ে সবার ক্ষেত্রেই দেখা যায়।অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন যেমন টেস্টোস্টেরন, অ্যান্ড্রোস্ট্রেনডিয়ন, ডিএইচটি হরমোনগুলো সাধারণত ছেলেদের মধ্যে বেশী এবং তুলনামূলক ভাবে মেয়েদের কম দেখা যায়জায়।এরা হেয়ার ফলিকলের ওপর কাজ করে ও চুল পড়া বাড়িয়ে দেয়।
চুল পড়া বংশগত হতে পারে,অনেক পরিবারের এই বংশগত চুল পড়া দেখা যায়। যদিও চুল পড়া কোন রোগ নয় তবুও থাইরয়েডের সমস্যা, অ্যানিমিয়া, মাথার তালুর রিং ওয়ার্ম, এবং অনেক দিনের মানসিক দুশ্চিন্তার জন্য চুল পড়ে যেতে পারে।
কিছু ঔষধের পার্শপ্রতিক্রিয়ায় যেমন ক্যান্সারের কেমোথেরাপি সাময়িক ভাবে চুল পড়া বাড়িয়ে দিতে পারে। মেডিসিন নেয়া বন্ধ করলে তা নিজ থেকে ঠিক হয়ে যায়।
আবার অনেক সময় খাবারে পুষ্টির অভাব ঘটলে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে।ডায়েটে প্রোটিনের অভাব হলে এবং কিছু কিছু মিনারেলস এবং ভিটামিনের ঘাটতি চুল পড়া বৃদ্ধি করে অনেক গুন। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের সন্তান জন্মদানের পর কিছু হরমোনের কারণে অথবা মেনপজের পড় চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে।
সবার একইরকম ভাবে চুল পড়ে না। কারো মাথার কিছু অংশে চুল গজায় না আবার কারো পুরো মাথার চুল কমে যেতে থাকে। এক এক জনের মধ্যে দেখা যায় এক এক রকম চুল পড়ার সমস্যা
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য কি করবেন?
পুস্টির অভাবে চুল পড়া শুরু হয়ে থাকলে আপনার খাদ্য তালিকার দিকে নজর দিন।প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান বেশী করে। খাবারের সাথে কিছু ভিটামিন এবং মিনারেলস গ্রহণ করুন।
পরিমিত পরিমাণে আয়রন আর জিঙ্ক চুল গজানোর জন্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মটরশুঁটি, বাদাম, কলিজা, মাংস, দুধে আপনার প্রয়োজনীয় জিংক আর আয়রন পাবেন। তাই এগুলো খাদ্য তালিকায় রাখুন। আর প্রচুর পানি পান করুন
চুলের যত্নে কিছু টিপসঃ
১। গোসলের আগে চুল আঁচড়িয়ে নিবেন।চুল সবসময় নিচ থেকে আচড়াবেন তাহলে খুব সহজে চুলে জট থাকলে খুলে যাবে,চুল নষ্ট হবে কম। আর চুলের জট খোলার জন্য সবসময় মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করবেন
২। সপ্তাহে ৩ দিন চুলে শ্যাম্পু করবেন।চুলে বেশি Shampoo করলে চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে গিয়ে চুল শুস্ক হয়ে যায়।চুলে শ্যাম্পু করার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে-
ক)চুল আগে ভিজিয়ে নিতে হবে।
খ)যতটুকু শ্যাম্পু চুলে দিবেন তা একটা বাটিতে নিবেন। তার মধ্যে একটু পানি মিক্স করে পাতলা করে নিবেন,তাহলে লাগাতে সুবিধা হবে। আর চুল যখন ধুবেন তাড়াতাড়ি পরিষ্কার হবে।
গ)চুলে শ্যাম্পু লাগানোর সময় মাথার তালুতে ভালোভাবে লাগাবেন, তারপর চুলের নিচের দিকে লাগাবেন। খুব যত্ন করে আলতো হাতে লাগাবেন।
ঘ)চুল ধোয়ার পর কন্ডিশনার লাগাবেন। কন্ডিশনার চুলের শুধুমাত্র নিচের দিকে লাগাবেন, উপরে লাগানো জরুরি নয়। ৫/১০ মিনিট চুলে রেখে চুল ভালো করে ধুয়ে নিবেন।
৩।গোসল শেষে চুল টাওয়েল বা গামছা দিয়ে শক্ত করে বেধে রাখবেন না। চুলে গামছা বা টাওয়েল দিয়ে বাড়ি দিয়ে পানি ঝরানোর চেষ্টা করবেন না।এতে চুলের আগা ফেটে যায়।
৪। ভেজা চুল আঁচড়াবেন না কারণ তখন চুলের গোঁড়া নরম থাকে।
৫। চুলে অতিরিক্ত তেল দিবেন না, চুলের গোড়ায় তেল লাগিয়ে অবশ্যই চুলে ম্যাসাজ করবেন।
৬। রাতে ঘুমানোর আগে চুল আঁচড়িয়ে হালকা করে বেনি করে ঘুমাবেন, তাহলে আর যত পাকাবেনা। আর স্যাটিনের বালিশে ঘুমালে চুল কম ঝরে।
৭।নারিকেল তেলের সাথে দারুচিনি গুড়া করে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করলেও চুল পড়া বন্ধ হয়
৮।সপ্তাহে ৩/ বার পছন্দের Hair প্যাক লাগাতে পারেন।
৯। শ্যাম্পু করার পর এক মগ পানিতে লেবু/চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুতে পারেন চুল সিল্কি হবে।
১০। গোসলের পর চুলে এক মগ এর পানিতে ৬/৭ টা পেয়ারা পাতা সিদ্ধ করে সে পানি দিয়ে চুল ধুতে পারেন, এতে চুল পড়া অনেক কমে যাবে।
১১। বেশি করে পানি খাবেন,আর সপ্তাহে ২ বার চিরনি ধুবেন।
১২। আমলকি ও জবাফুল নারকেল তেলে ফুটিয়ে কাঁচের বোতলে সংরক্ষন করুন। শ্যাম্পু করার আগে ওই তেল চুলের গোড়ায় ম্যাসেজ করেন।
১৩। চুল পরা বন্ধ করতে হলে পেয়াজ এর রস চুলের গোড়ায় গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন ।নিয়মিত ব্যবহার করলে অবশ্যি নতুন চুল গজাবে এবং চুলে খুসকি থাকলে সেটাও কমে যাবে।
১৪।।খাঁটি নারকেল তেল অথবা অলিভ ওয়েলের সাথে ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল মিশিয়ে চুলে ম্যাসাজ করলে নতুন চুল গজাতে পারে।
১৫। মধু এবং দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে চুল কমে যাওয়া জায়গায় লাগালে নতুল চুল গজায়।
১৬। খাবারের সাথে এবং তেলের সাথে চুলে কালিজিরা ব্যাবহার করুন।
আপনাদের কাছে যদি এমন আরও কিছু টিপস থাকে তাহলে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোন টিপস এ কার জবন বদলে যেতে পারে!
ভাই, ছেলেদেরও কি উপরে উল্লেখিত ভাবে কেয়ারিং করতে হবে?
প্রচুর চুল পড়ে। দেখা যাক টিপস ফলো করে গতি করতে পারি কিনা।
আমারও অনেক চুল পড়ে। ধন্যবাদ সমাধানন দেওয়ার জন্য।