নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন

আমরা মনে করি, যত বেশি আমরা আমাদের ইমপারফেকশন অর্থাৎ খুঁতগুলোকে অন্যদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পারব, ততবেশি আমরা জীবনে খুশি থাকতে পারব। কিন্তু USA-তে কয়েক হাজার লোকের উপর এই বিষয়ে রিসার্চ সনাক্ত করার পর, অথার BRENE BROWN এই ক্যালকুলেশনে আসেন, যে যারা নিজেদের খুঁতগুলোকে লুকানোর বদলে, বরং সেগুলোকে খোলামেলাভাবে আপন করে মেনে নেন, তারাই জীবনে বেশি খুশি থাকেন। তো কিভাবে নিজের ইমপারফেকশনগুলোকে গিফট হিসেবে, খোলামেলাভাবে আপন করে নিতে হয়, সেটাই আজ শেয়ার করব।

 

নিজের সত্যতা ধরে রাখতে হবে

 

 

হয়তো আপনার মাথায় পড়াশোনা জিনিস কিছুতেই ঢুকে না, হ্যাঁ তবে ডিজাইনিং এবং ফটোগ্রাফার হিসেবে আপনি ভীষণই পারদর্শী। কিন্তু আপনার মা-বাবার মতে, পড়াশোনায় যে ভালো সেই একমাত্র ভালো। ওসব ডিজাইনিং ফটোগ্রাফিং এ ভালো হওয়া কোন কাজের না।

‘আমার পড়াশোনা মাথায় ঢুকে না, আমি জোর করে চেষ্টা করলেও পড়া মুখস্ত করতে পারিনা।’

নিজের এই ইমপারফেকশনের কথা মন খুলে নিজের মা-বাবা ও এই সমাজকে বলতে পারার জন্য আপনার অনেকখানি সাহস থাকা দরকার। আর এই সাহসটা আপনার মধ্যে তখনই আসা সম্ভব, যখন আপনি এই সত্যিটা বুঝতে পারবেন, যে আপনি একা নন, যে হাজার চেষ্টা করলেও গাঁতিয়ে পড়া মুখস্ত করতে পারে না। আপনার মতো লক্ষ লক্ষ স্টুডেন্ট আছে, যারা পড়া মুখস্থ করতে ব্যর্থ। তাই খুশি থাকতে হলে, নিজের সত্যতা আপনাকে যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে।

 

পারফেকশন একটি মায়া

 

 

আপনার মতে কেউ দশ কোটি টাকার মালিক মানে, বিশাল ধনী। MUKESH AMBANI‘র কাছে কেউ মাত্র দশ কোটি টাকার মালিক মানে, ভীষণই গরিব। তাহলে  প্রকৃত ধনী কে?

আজকে যে মানুষটাকে আপনার পারফেক্ট লাইফ পার্টনার বলে মনে হচ্ছে, কালকে সেই মানুষটার সাথে হয়তো ঝামেলা হলে, ইমপারফেক্ট বলে মনে হতে শুরু করবে। তাহলে কোনটা ঠিক?

আজকে আপনার কাছে পারফেক্ট লাইফ বলতে যে ছবিটা ভেসে ওঠে, কাল যদি সেই পারফেক্ট লাইফটাই আপনি পেয়ে যান তবে পরশু থেকে হয়তো সেই পারফেক্ট লাইফটাও কোনো কারনে ইমপারফেক্ট বলে মনে হতে শুরু করবে। তো যখন এটা পরিস্কার দেখা যাচ্ছে যে পারফেকশন জিনিসটা পুরোটাই একটা মায়া বা একটা মায়ার জাল, তাহলে সারা জীবন সবকিছু পারফেক্ট করে তোলার এই রেইসে পাগলের মতো নিরন্তর ছুটে চলার কি মানে? তাহলে কি সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে নিজেকে পারফেক্ট করে তোলার চেষ্টা করাই বন্ধ করে দেওয়া উচিত? কখনোই না।

যেটা দরকার, সেটা হলো শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গিটাকে বদলানোর। আমাদের এখন দৃষ্টিভঙ্গি হলো, আমার ইমপারফেক্ট লাইফটাকে কিভাবে আমি পারফেক্ট করে তুলবো। এটা বদলে করতে হবে, আমার গুড লাইফটাকে কিভাবে আমি বেটার লাইফ করে তুলবো। অর্থাৎ এই মুহূর্তে যেটা আছে, যেটুকু আছে, সেটা যথেষ্ট! গুড এনাফ। তাই সেটুকুতেই আমি খুশি। আর সেই খুশিটাকেই আমি তুলনা করছি, আরো বেটার হয়ে ওঠার চেষ্টা করার মধ্যে দিয়ে। এটা নয় যে, এখন যেটুকু আছে তাতে আমি দুঃখী, আর তাই খুশি হতে পারার জন্য পারফেক্ট হয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। কারণ, সেটা করলে, সেই পারফেক্ট হওয়ার রেইসে গিয়েই ফেঁসে যেতে হবে।

 

ভাল সিদ্ধান্ত নিতে হলে আপনার অন্তর্দৃষ্টির উপর আস্থা রাখতে হবে

 

 

আপনার সাথে এরকম কতবার হয়েছে, আপনার মন যেটা বলছে, সেটার পিছনে কোন কারণ নেই ভেবে, আপনি আপনার মনের কথা অগ্রাহ্য করে, তার ঠিক উল্টো কাজটা করেছেন। কিন্তু পরে দেখা গেছে, যে আপনার মনই সঠিক ছিল। তো এরকম কেন হয়?

আমরা মনে করি, মন যেটা চায়, সেটার পিছনে অনেক সময় কোনো লজিক থাকে না। কিন্তু আসল সত্যিটা হলো, মন যেটা চায়, অর্থাৎ সাবকনশাস মাইন্ড যেটা বলে, সেটার পিছনে এতটাই জটিল লজিক থাকে, যে সেটা সেই মুহূর্তে আমাদের কনসাস মাইন্ডের দ্বারা উপলব্ধি করতে পারাটা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই সেটাকে ইল্লজিক্যাল বলে, আমরা অনেক সময় ইগনোর করার ভুলটা করে বসি। আসলে যখন আপনি কোনো ডিসিশন নেন, তখন আপনার ব্রেইন আপনার মেমোরিতে সেই রিলেটেড যা যা ইনফর্মেশন অলরেডি সংরক্ষণ আছে, সেগুলোকে কম্পাইল করে একটা রেজাল্ট বের করে। আর আমাদের সাবকনশাস মাইন্ড এতটাই পাওয়ারফুল, যে চোখের নিমিষেই পুরো প্রসেসটাকে কমপ্লিট করে রেজাল্ট বের করে ফেলে। কাজটা এত দ্রুত হওয়াই, আমরা সহজে তার পেছনে লজিকটা সেই মুহূর্তে বুঝে উঠতে পারিনা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেটাই সঠিক হয়।

যেমন ধরুন, একজন ফুটবলার যখন ফ্রি-কিক নিচ্ছে, তখন ঠিক কতটা অ্যাঙ্গেলে, কতটা পাওয়ারে তার বলটিকে হিট করা উচিত, সেটা যদি সে লজিক দিয়ে, কনসাস মাইন্ডের দ্বারা, ম্যাথ আর ফিজিক্স খাটিয়ে বের করে তারপর ফ্রি-কিক নিতে যায়.. তাহলে ততক্ষণে রেফারির বাঁশি বেজে, খেলা শেষও হয়ে যাবে। আর এই একই ক্যালকুলেশনটা সাবকনসাস মাইন্ড, কয়েক মুহূর্তের মধ্যে করে রেজাল্ট বের করে দেয়। আর সেই মতো ফ্রি-কিক করে ফুটবলার গোলও করে ফেলেন।

তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আপনার মন কি বলছে, সেটাকে একেবারে ইল্লজিক্যাল বলে উড়িয়ে না দিয়ে, সেটাকে বরং বেশি গুরুত্ব দিয়ে, আপনার বিবেচনা করা উচিত।

 

অন্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করা বন্ধ করুন

 

 

আপনি কি বিল গেটসের সঙ্গে নিজেকে কখনো তুলনা করেন? করেন না। তাহলে কার সাথে করেন? আপনার পাশের বাড়ির বন্ধু সাকিবের সাথে হয়তো সব কিছুতে নিজেকে তুলনা করেন। কেন? কারণ সাকিব আর আপনি অনেকখানি সিমিলার। তো তুলনা করা জিনিসটা তখনই অর্থপূর্ণ হয়, যখন দুজন সিমিলার কারোর মধ্যে তুলনা করা হয়। মানে যে দুজনকে তুলনা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে যত বেশি সিমিলারিটি থাকবে, সেই তুলনা করা ততবেশি অর্থপূর্ণ হবে। এবার একটু ভেবে দেখলেই এটা আপনি পরিষ্কার বুঝতে পারবেন, যে সাকিবের সাথে আপনার যে কটা দিকে সিমিলারিটি আছে, তার থেকে অনেক বেশি দিকে পার্থক্যও আছে। তাই বিল গেটসের সঙ্গে আপনার তুলনাটা যেমন অর্থহীন, একইভাবে সাকিবের সাথেও আপনার তুলনা করা একটু কম অর্থহীন হলেও, আলটিমেটলি কিন্তু সেই অর্থহীন’ই বলা চলে। কারণ, আপনার আর আপনার পাশের বাড়ির সাকিবের মধ্যে সিমিলারিটি থেকে ডিফারেন্স অনেক অনেক বেশি। এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষ ইউনিক। আর এটাই এই পৃথিবীর সৌন্দর্য। তাই নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা, সম্পূর্ণ অর্থহীন একটা কাজ। যদি তুলনা না করলে আপনার পেটের ভাত হজম না হয়, তাহলে সবথেকে বেস্ট অপশন, গতকালের নিজের সঙ্গে আজকের নিজেকে তুলনা করুন। কারণ, এই দুজন মানুষের মধ্যেই একমাত্র সিমিলারিটি সবথেকে বেশি। তাই এই দুজন মানুষের মধ্যে তুলনা করাটাই, একমাত্র সবথেকে কম অর্থহীন বা অন্যভাবে বললে সবথেকে বেশি অর্থপূর্ণ বলা চলে।

 

BRENE BROWN বলেছেন,

THE DARK DOES NOT DESTROY THE LIGHT IT DEFINES IT. IT’S OUR FEAR OF THE DARK THAT CASTS OUR JOY INTO THE SHADOWS.

অর্থাৎ, অন্ধকার আলোকে ধ্বংস করে না। বরং সেটার অস্তিত্বকে বুঝতে সাহায্য করে। এটা আমাদের অন্ধকারের প্রতি ভয়, যা আমাদের আনন্দকে ছায়ার সঙ্গে সীমাবদ্ধ করে তোলে।

Similar Posts