পিটারসেন – ইংলিশ ক্রিকেটের বড় আক্ষেপের নাম!
ডানহাতি ব্যাটসম্যান হুট করে লাফ দিয়ে ১৮০° ঘুরে বাহাতি ব্যাটসম্যানের মতো স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে হাকিয়ে দিলেন বিশাল ছক্কা! দৃশ্যটি পরিচিত মনে হচ্ছে? শট’টির নাম মনে করতে পারবেন? আর এই শট খেলা ব্যাটসম্যানের নাম?
হ্যা পাঠক, আপনি ঠিকই ধরেছেন! শটটির নাম সুইচ হিট বা পাল্টি হিট, আর এই শটটির জনক কেভিন পিটারসেন। ক্রিকেট খেলা পছন্দ করেন কিংবা খেলা দেখেন এমন যে কারো কাছেই কেভিন পিটারসেন নামটা খুবই পরিচিত। সুইচ হিটের জনক এই ব্যাটসম্যান ক্রিকেটের সাথে যতোদিন ছিলেন অসাধারণ ও দুর্দান্ত ব্যাটিং শৈলীতে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন প্রতিটি ম্যাচেই।
ক্রিকেট ক্যারিয়ারের মতো জীবনটাও যেন তেমনভাবেই বৈচিত্র্যময় পিটারসেনের। দক্ষিন আফ্রিকায় জন্ম নিলেও ক্রিকেট খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। দক্ষিন আফ্রিকায় খেলতে জাতিগত কোটা পদ্ধতি মেনে চলতে অপরাগতা প্রকাশ করে মায়ের দেশ ইংল্যান্ডে চলে আসেন পিটারসেন। সেখানে কাউন্টিতে খেলে নিজেকে ইংল্যান্ডের হয়ে জাতীয় দলে খেলার জন্য প্রস্তুত করেন তিনি, ডাকও পড়ে খুব দ্রুতই। ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে পিটারসনের। পরের বছরেই ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজে টেস্ট অভিষেক হয় তার। ৫২.৫৫ গড়ে ৪৭৩ রান করে সিরিজসেরা হওয়ার পথে ইংলিশদের ২-১ এ অ্যাশেজ জিতিয়ে প্রথম সিরিজেই বাজিমাত করেন নান্দনিক এই ক্রিকেটার।
শুরু থেকেই ইংলিশদের ব্যাটিং লাইনআপের অন্যতম ভরসার প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে দারুন পারফর্ম করে দলকেও সাফল্য এনে দিচ্ছিলেন নিয়মিতই। সাফল্যের স্বীকৃতি দিতে ভুল করেনি ইসিবিও। ২০০৮ সালের আগস্টে দলের ওয়ানডে ও টেস্টের অধিনায়কত্ব পান তিনি। কিন্তু ক্যাপ্টেন হিসেবে পথচলাটা মোটেও সুখকর ছিলনা তার। মাত্র ৩টি টেস্ট ও ৯টি একদিনের ম্যাচে দায়িত্ব পালনের পরে তৎকালীন কোচ পিটার মুরেসের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে অধিনায়কত্ব হারান কেপি। সেই থেকে বোর্ডের সাথে তার সম্পর্ক খারাপ হওয়া শুরু হয়, যা চরমে পৌছে ২০১২ তে অবসর নেওয়ার মাধ্যমে। সে বছরই অবশ্য আবার ফিরে আসেন ক্রিকেটে।
অভিমান ভেঙ্গে ক্রিকেটে ফিরে আসলেও ক্রিকেট কিন্তু তাকে আর সেভাবে বরণ করে নেয় নি। বোর্ডের সাথে সম্পর্কটাও আর কখনো ভালো হয়নি তার। ফলশ্রুতিতে পরের বছরই নিউজিল্যান্ডের সাথে শেষ টি-টুয়েন্টি এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে ওয়ানডেতে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেন তিনি। আর ২০১৪ তে অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলেন ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। বোর্ডের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে মাত্র দশ বছরেই শেষ হয়ে যায় ইংল্যান্ডের অন্যতম স্টাইলিস্ট ও প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার। তবে এই অল্প সময়েই ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ টেস্ট রান সংগ্রাহকদের একজন বনে যান পিটারসেন। ব্রিটিশদের পক্ষে ১০৪ টেস্ট ম্যাচে ২৩ সেঞ্চুরি ও ৩৫ ফিফটিতে ৮১৮১ রান করেছেন তিনি, যা কিনা এখনো পর্যন্ত ইংলিশদের টেস্ট ইতিহাসের ৫ম সর্বোচ্চ রান। টেস্টে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও ওডিয়াইতেও সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। নামের পাশে মাত্র ১৩৬ ওয়ানডে হলেও এতেই ৯ সেঞ্চুরি ও ২৫ ফিফটিতে ৪৪৪০ রান উপহার দিয়েছেন ইংলিশদের। এছাড়াও ৩৭ টি-টোয়েন্টিতে ৭ ফিফটিতে ১১৭৬ রানও আছে তার।
যখন অবসর নিয়েছিলেন বয়স যে খুব একটা বেশি হয়েছিল মোটেও এমন নয়। চাইলেও আরও বেশ কয়েকবছর অনায়েসেই চালিয়ে যেতে পারতেন ক্রিকেট। কিন্তু বোর্ডের সাথে দ্বন্দ্বে ইংলিশ ক্রিকেটকে অনেক কিছু দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর হলো কই? ঠিকভাবে খেলা চালিয়ে যেতে পারলে ইংলিশ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটসম্যান হওয়াটা তো ছিল সময়েরই ব্যাপার মাত্র। পারতেন ইংল্যান্ডের সদ্য বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য হতে কিংবা হয়তো তার হাত ধরে এর আগেই ইংলিশরা পেয়ে যেতে পারতো বিশ্বসেরার মুকুট। এতোশত সম্ভাবনা থাকলেও দিনশেষে ইংলিশ ক্রিকেটেই হোক আর ক্রিকেট প্রেমী দর্শকদের কাছেই হোক কেভিন পিটারসেন যেন ক্রিকেটরই এক আক্ষেপের নাম!কেভিন পিটারসেন – ইংলিশ ক্রিকেটের বড় আক্ষেপের নাম!
শেষ তিন লাইন মন ভরে যাওয়ার মতো ছিলো। আসলেই এই হৃদয় প্রকম্পকারী নামটা ইংলিশ ক্রিকেটের জন্য বড় আক্ষেপের।