কাজু বাদাম এবং কাঠ বাদাম কেন খাবেন, কিভাবে ভেজে নিবেন?

কাজু বাদাম এবং কাঠ বাদাম কেন খাবেন, কিভাবে ভেজে নিবেন? তেমন কিছুইনা, জাস্ট ফ্রাইপেনে হালকা আঁচে নাড়ুন চাড়ুন।ভাজার সময় আপনারা চাইলে বিট লবন দিতে পারেন।বাদামী হলে ঠান্ডা করে কাঁচের বৈয়ামে রাখুন।

কাজু অত্যন্ত সুস্বাদু একটি বাদাম। বিশেষজ্ঞদের প্রমানে দেখা গেছে, প্রতি ১০০ গ্রাম কাজুবাদামে ৩০.১৯ গ্রাম শর্করা, ১৮.২২ গ্রাম আমিষ, ৪৩.৮৫ গ্রাম চর্বি থাকে।

কাজু এবং কাঠ বাদাম কেন খাবেন

কাজুবাদাম সাধারণত ভেজেই খাওয়া হয়।যেহেতু কাজুতে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি থাকে তাই দৈনিক ৫-১০টা কাজু বাদাম খাওয়াই যথেষ্ট। কাজু বাদামে বিভিন্ন ভিটামিন, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক খনিজ উপাদান রয়েছে। এটি দুর্বল ব্যক্তিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এছাড়া কাজু বাদামে আরও অনেক স্বাস্থ্য গুণ রয়েছে।

জেনে নিন কাজু বাদামের সেসব গুণাগুণ-

১। কাজু বাদাম ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। আমাদের শরীরে দৈনিক ৩০০-৭৫০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন। আর এটা পূরণ করে এ বাদাম। কাজু মাংসপেশী ও স্নায়ুর সঠিক কাজ ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।

২। কাজু বাদামে কোলেস্টেরল থাকে না, এবং এতে ভালো ফ্যাট আছে প্রচুর। খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা কমতে সাহায্য করে কাজুবাদাম। তাছাড়া কাজুতে অলেইক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য অনেক উপকারি।

৩। কাজু বাদাম ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে । গবেষণায় দেখা গেছে- প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ এই খাবারটি নিয়মিত খেলে রক্তে সুগারের মাত্র নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা কমে । কাজুতে সোডিয়াম কম থাকে কিন্তু পটাসিয়াম বেশি থাকে। যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কাজু এবং কাঠ বাদাম

৪। কাজু বাদামে সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ই থাকে। কাজু বাদামে থাকা জিংক ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমাদেরকে সুস্থ রাখে। কাজু বাদাম ফ্রি র‌্যাডিকেলের জারণ প্রতিরোধ করে, যার ফলে আমাদের শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

৫। কাজু বাদামে উচ্চমাত্রার কপার থাকে তাই এনজাইমের কাজে, হরমোনের উৎপাদনে এবং মস্তিস্কের কাজে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

এছাড়াও লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদনেও সাহায্য করে। এক কথায় কাজু বাদাম অ্যানেমিয়া প্রতিরোধ করে।

৬। প্রতিদিন আমাদেরকে এক মুঠো করে কাজু বাদাম গ্রহন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। আসলে এই বাদমে রয়েছে অতি উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের শরীরে নতুন ক্যান্সার সেল তৈরি হতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে এবং অবাঞ্চিত কোন টিউমার যাতে দেখা না দেয় সেদিকেও খেয়াল রাখে।

কাজু বাদামে থাকা প্রম্যান্থোসায়ানিডিন নামে একটি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৭। কাজু বাদাম চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে

কপার হল সেই খনিজ, যা চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর পাশাপাশি চুলের গোড়াকে শক্তপোক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে কাজুতে।

কিভাবে কাজু চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে ভুমিকা রাখে? কাজু বাদামে থাকা কপার শরীরের ভেতরের এমন কিছু বিশেষ এনজাইমের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যা চুলের কালো রংকে ধরে রাখতে সাহায্য করে অর্থাৎ আপনাকে রাখে চির তরুন।

৮। কাজু বাদাম খেলে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে

কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে এই বাদামটি নিয়মিত খেলে আমাদের দেহের হাড়ের ঘনত্ব বাড়তে শুরু করে। তাই বুড়ো বয়সে গিয়ে অস্টিওআর্থারাইটিসের মতো হাড়ের রোগ হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

সতর্কতা : যাদের অ্যালার্জি ও মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাদের কাজু বাদাম না খাওয়াই ভালো। হাইপারটেনশনের রোগীরা লবণাক্ত কাজু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ———————

কাঠ বাদামের উপকারিতা:

কাঠ বাদামকে আমন্ড বাদাম বলা হয়ে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠবাদামে রয়েছে –

এনার্জি ৫৭৮ কিলোক্যালরি,

কার্বোহাইড্রেট ২০ গ্রাম,

আঁশ ১২ গ্রাম,

ফ্যাট ৫১ গ্রাম,

প্রোটিন ২২ গ্রাম,

থায়ামিন ০.২৪ মিলিগ্রাম,

রাইবোফ্লেভিন ০.৮ মিলিগ্রাম,

নিয়াসিন ৪ মিলিগ্রাম,

প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড ০.৩ মিলিগ্রাম,

ভিটামিন বি৬ ০.১৩ মিলিগ্রাম,

ভিটামিন ই ২৬.২২ মিলিগ্রাম,

ক্যালসিয়াম ২৪৮ মিলিগ্রাম,

আয়রন ৪ মিলিগ্রাম,

ম্যাগনেসিয়াম ২৭৫ মিলিগ্রাম,

ফসফরাস ৪৭৪ মিলিগ্রাম,

পটাশিয়াম ৭২৮ মিলিগ্রাম

বাদাম দিয়ে বানিয়ে নিন সাবুদানার ঘন ক্ষীর

১। কাঠবাদাম পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ যা শরীরে নানান কাজে লাগে। এটা হৃদপিণ্ডের জন্য ভালো। কারণ এটা সার্বিক কোলেস্টেরলের ‘লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন’ কমাতে সাহায্য করে। যা কোলেস্টেরলের খারাপ অংশ।

২। এছাড়া কাঠ বাদাম ভালো কোলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটা ডায়াবেটিস সৃষ্টিকারী হিমোগ্লবিন ‘এ ওয়ান সি’ কমায় এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।ওজন নিয়ন্ত্রণে ও স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকায় কাঠবাদাম খুব ভালো। কারণ এটা পেট ভরপুর রাখতে সাহায্য করে।

৩। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ই, এ, বি১, বি৬ থাকার ফলে চুলও ভাল রাখে কাঠ বাদাম। ম্যাগনেশিয়ামের জন্য চুল গোড়া থেকে সুস্থ থাকে ও খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়।

৪। কাঠ বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই। ভিটামিন ই ত্বক সুন্দর রাখে আর মুখে বয়সের ছাপ বা বলি রেখা পড়ে না। যাদের ত্বকে সান বার্ন আছে, তারা কাঠ বাদাম তেল ব্যবহার করতে পারেন।

৫। কাঠ বাদাম তেল খুব তাড়াতাড়ি শরীর শুষে নিতে পারে। তাই যেকোনো মৌসুমে কাঠবাদাম তেল শরীরে লোশনের পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন।

৬। কাঠ বাদামে এমন ফাইবার আছে যেটি কোলন ক্যানসার হতে বাধা দেয়। তাছাড়া কাঠ বাদামে ভিটামিন ই, Phytochemicals এবং flavonoi আছে যেটি ব্রেস্ট ক্যানসার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

কাঠ বাদাম পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে

সম্প্রতি ইতালির একদল বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, দৈনিক মাত্র ৭টি কাঠবাদাম খেলে পুরুষদের শরীরে শুক্রাণুর পরিমাণ এবং গুণগতমান উভয়ই বাড়বে বহুগুণ।

তুরিনের এক হাসপাতালে ১০০ জন পুরুষের ওপর এ জরিপ চালানো হয়েছিল। জরিপে প্রমাণিত হয় দৈনিক মাত্র ৭টি কাঠবাদামে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা নিশ্চিতভাবে বেড়েছে।

কাজু এবং কাঠ বাদাম

খোসা-সহ নাকি ছাড়া কাঠবাদাম খেতে হবে?

কাঠবাদাম অবশ্যই খোসা-সহ খেতে হবে। কারণ এতে আছে বহুমুখী গুণাগুণ। এটা পলিফেনলের ভালো উৎস এবং প্রাকৃতিক আঁশ সমৃদ্ধ।

রেফিজারেটরে রাখলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় কি?

রেফ্রিজারেইটরে রাখলে কাঠবাদামের পুষ্টিগুণে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না বরং এটা কাঠবাদামের স্থায়ীত্ব বাড়ায় এবং পুষ্টিগুণ অক্ষত রাখে।

ভাজা কাঠবাদামও কি স্বাস্থ্যকর?

কাজু এবং কাঠ বাদাম

কাঠবাদাম ভাজা হলে তা কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। ভাজার ফলে বাদামের পানির উপস্থিতি কমে যায়। তাই কাঠবাদামের পুষ্টি উপাদান জমাট বাঁধা অবস্থায় থাকে।

 

কাঠ বাদামের সবথেকে শক্তিশালী গুণ হল, মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতেও এটি খুব কার্যকর। ভিটামিন ই এবং পটাশিয়াম থাকার ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে কাঠ বাদাম। যেভাবেই খাওয়া হোক, প্রতিদিন একমুঠ বা কয়েকটা কাঠবাদাম খাওয়া শরীরের জন্য ভালো।

কাজু এবং কাঠ বাদাম

সব শেষ কথা

কাজু বাদামে থাকা ভিটামিনের মাত্রা এতো বেশি যে একে প্রকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট নামেও ডেকে থাকেন অনেকে। তবে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে এই বাদামটি খেলে শরীরের উপকারের থেকে অপকার হয় বেশি। কারণ উপকারি উপাদান বেশি মাত্রায় শরীরে যদি প্রবেশ করে তাহলে উল্টো ফল হতে শুরু করতে পারে। তাই খুবই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে কাজু বাদাম, তাহলেই আসল সুফল পাওয়া যাবে।

 

Similar Posts