সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপায়!
আপনি যে আপনার মোবাইলের স্ক্রিনটার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন একটু খেয়াল করুন আপনার চোখের সামনে কিন্তু শুধু মোবাইলের স্ক্রিনটা নেই, সাথে আশেপাশে ঘরের মধ্যে আরো অনেক জিনিসই রয়েছে। কিন্তু আপনার ফোকাসটা লক হয়ে রয়েছে ঠিক মোবাইলের স্ক্রিনে। এই যে নিজের ফোকাসটাকে মোবাইলের স্ক্রিনে লক করে রাখা এটা কি আপনাকে সচেতন হয়ে ভেবে করতে হচ্ছে, নাকি এটা আপনা আপনিই হচ্ছে? অবশ্যই আপনা-আপনিই হচ্ছে। কেন? কারণ, আপনি মোবাইলের আর্টিকেলটা পড়তেছেন তাই। অর্থাৎ, আপনার মধ্যে আর্টিকেলটি পড়ার একটা ইচ্ছা কাজ করছে। আর সেটাই অটোমেটিক্যালি আপনার ফোকাসটাকে মোবাইলের স্ক্রিনে লক করে রাখছে। অর্থাৎ, আমাদের মধ্যে যে ইচ্ছাগুলো থাকে সেগুলোই আমাদের ফোকাসটাকে কন্ট্রোল করে।
উদাহরণস্বরূপ- ফুটপাতে যিনি হয়তো জুতো সেলাই করার জন্য বসে আছেন তার ফোকাসটা তখন সেখান থেকে যারা যাচ্ছে তাদের পায়ের জুতোর দিকে লক হয়ে থাকে। কিন্তু সেই একই জায়গায় যিনি টুপি বিক্রি করার জন্য বসে আছেন তার ফোকাসটা কিন্তু তখন সেখান থেকে যারা যাচ্ছে তাদের মাথার দিকে লক হয়ে থাকে। এবার আমরা সবাই এটা জানি যে জীবনের যেকোনো কিছুতে সফল হতে পারার জন্য আমাদের ফোকাসটাকে সঠিক জায়গায় লক করে রাখতে পারাটা সব থেকে বেশি জরুরি। আর এই মাত্র আমরা দেখলাম যে ফোকাস ইচ্ছা অনুযায়ী অটোমেটিক্যালি লক হয়। তাই ফোকাসকে অটোমেটিক্যালি কন্ট্রোল করার জন্য আমাদের আগে আমাদের ইচ্ছাগুলোকে কন্ট্রোল করতে হবে। এবার প্রশ্নটা হচ্ছে, আমাদের মধ্যে ইচ্ছেগুলো আসে কোথা থেকে?
উদাহরণস্বরূপ- আপনার মধ্যে একটা ইচ্ছা রয়েছে যে আপনিও একদিন নিজের জন্য একটা আইফোন কিনতে চান। তো এই যে আইফোন কেনার ইচ্ছাটা এটা আপনার মধ্যে এলো কোত্থেকে? সোশ্যাল মিডিয়াতে আয়নার সামনে আইফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে তোলা ছবি পোস্ট করতে পারলে সেটা অন্যদের চোখে বেশ একটা রিচ অ্যান্ড ফুল ইমেজ এনে দেয় এটা জানতে পেরে হয়তো আপনার মধ্যে আইফোন কেনার ইচ্ছাটা তৈরি হয়েছে। বা বন্ধুদের আইফোনের নাম শুনতেই হুল্লোড় করে উঠতে দেখে, আইফোন থাকা মানে বিশাল একটা ব্যাপার এটা বুঝতে পেরে হয়তো আপনার মধ্যে আইফোন কেনার ইচ্ছাটা তৈরি হয়েছে। বা অন্য যে কারণেই হোক না কেন, আলটিমেটলি আইফোন রিলেটেড ইনফরমেশন আপনার মাথার মধ্যে ঢোকার ফলেই আইফোন কেনার ইচ্ছাটা আপনার মধ্যে তৈরি হতে পেরেছে।
ভাবুন, কোনো একজন মানুষ যিনি প্রত্যন্ত গ্রামে থাকেন যিনি হয়তো আইফোনের কোনোদিন নামই শোনেননি তার মধ্যে কি কোনদিনও আইফোন কেনার ইচ্ছা তৈরি হওয়া সম্ভব? সম্ভব না। তো ইনফরমেশনই হলো সেই আসল কারণ, যেটা আমাদের মধ্যে ইচ্ছা তৈরি করে আর সে অনুযায়ী অটোমেটিক্যালি আমাদের লাইফের ফোকাসও লক হয়ে যায় এবং সে অনুযায়ী অটোমেটিক্যালি আমাদের চিন্তা-ভাবনা ও কাজকর্মের ধরনও বদলে যায়। তো এই যে পুরো চেঞ্জ রিঅ্যাকশনটা ঘটে ইনফর্মেশন, ডিজায়ার, ফোকাস, একশন.. এই পুরো চেঞ্জ রিঅ্যাকশনটাকে যদি আমরা গোড়া থেকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কন্ট্রোল করতে চাই তাহলে তার একটাই উপায় সারাদিনে আমাদের মাথার মধ্যে কি কি ইনফরমেশন ঢুকছে সেটা যতটা সম্ভব সচেতনভাবে সিলেক্ট করে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করা।
আপনি হয়তো ঘরে বসে পড়াশোনা করছেন, পড়ার মাঝে একটু ব্রেক নিয়ে ভাবলেন, ফেইসবুকটা একবার চেক করে নিই আর ফেইসবুকে ঢুকতেই চোখে পড়ল, আপনার বন্ধুরা মিলে কোথাও একটা ঘুরতে গিয়ে ছবি পোস্ট করেছে। কি মনে হয়? এই ইনফরমেশনটা আপনার মাথার মধ্যে ঢোকার পর আপনার মধ্যে ঘরে বসে পড়াশোনা করার ইচ্ছাটা আগেই মতোই একই থাকবে? একেবারেই থাকবে না। তাই ব্রেক নেওয়ার জন্য ফেইসবুকে যাওয়ার কোনো দরকারই নেই। কারণ অপ্রয়োজনীয় ইনফর্মেশন যত বেশি আপনি নিজের মাথার মধ্যে ঢোকাবেন তত বেশি আপনার ফোকাস আসল জায়গা থেকে সরে গিয়ে উল্টাপাল্টা দিকে চলে যাবে।
আমরা ভাবি, এখন একটু দু’ঘণ্টা মতো ফ্রি আছি একটা মুভি দেখে নিই, কি এমন হয়ে যাবে। কিন্তু ওই দুই ঘন্টার মুভিটা থেকে আমাদের মধ্যে যা যা ইনফরমেশন ঢুকে সেগুলোর এফেক্ট শুধুমাত্র ওই দুই ঘণ্টাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনা, মুভিটা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বহু ঘন্টা বা কখনো কখনো বহুদিন অবধি সেই ইনফরমেশনগুলোর এফেক্ট আমাদের মধ্যে কাজ করতে থাকে। এটা আপনি সবথেকে ভালো উপলব্ধি করতে পারবেন কোনো ভূতের সিনেমা দেখার পর। সিনেমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সেদিন রাতে উঠে বাথরুমে যেতে কেমন ভয় লাগে সেটার এক্সপেরিয়েন্সও নিশ্চয়ই আপনার আছে। অন্যদিকে হয়তো কোনোদিন ভীষণই মন খারাপ লাগছে বা ভীষণই ডি-মোটিভেটেড ফিল করছেন সেদিন কোনো একটা মোটিভেশনাল আর্টিকেল পড়ার পর আপনি হয়তো মোটিভেশন ফিরে পেলেন আর কাজে বসে পড়লেন। তাই যে ইনফরমেশনগুলো আপনাকে আপনার জীবনে লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে শুধুমাত্র সেগুলোকেই নিজের মাথার মধ্যে ঢুকানোর চেষ্টা করুন।
আপনি এক বছর ধরে সকাল থেকে রাত অবধি পরিশ্রম করে কাজ করে ফাইনালি হয়তো পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকা নিজের ব্যাংক একাউন্টে জমাতে পেরেছেন। সেই পুরো টাকাটা আপনি আইফোন কিনে শেষ করে ফেলবেন নাকি সেই টাকাটাকে ইনভেস্ট করার সিদ্ধান্ত নেবেন যাতে সেই টাকাটা আরো বাড়ে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আপনার মধ্যে আইফোন রিলেটেড কি ধরনের ইনফরমেশন ঢুকেছে আর ইনভেস্টমেন্ট রিলেটেড কি ধরনের ইনফরমেশন ঢুকেছে পুরোপুরি তার ওপর। যদি আপনি সারাদিন বসে ইনস্টাগ্রাম স্ক্রল করা পাবলিক হন, যে প্রতিদিন কাউকে না কাউকে আইফোন নিয়ে পোস্ট মেরে ছবি পোস্ট করতে দেখেন তবে সম্ভবত আপনি আইফোন কেনারই ডিসিশন নিবেন।
অন্যদিকে যদি আপনি ইনভেস্টমেন্টের উপর বিভিন্ন বই পড়া পাবলিক হন, যে প্রতিদিন ইনভেস্টমেন্ট রিলেটেড কিছু না কিছু নতুন শেখার বা জানার চেষ্টা করে তবে সম্ভবত আপনি জমানো টাকাটা ইনভেস্ট করারই ডিসিশন নিবেন। এই যে আপনি এই আর্টিকেলটি শুয়ে-শুয়ে পড়ছেন নাকি সোজা হয়ে বসে পড়ছেন এই ডিসিশনটা আপনিই নিয়েছেন কিন্তু অবচেতনভাবে। এরকমই প্রতিদিন আমাদের ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় পঁচাত্তর হাজারেও বেশি ডিসিশন নিতে হয়। এরমধ্যে ম্যাক্সিমামটাই আমরা অবচেতনভাবেই নিয়ে থাকি। অর্থাৎ সাত-পাঁচ অত কিছু ভেবে ডিসিশন নিই না, চট করে মাথায় যেটা চলে আসে সেটাই ডিসিশন হিসেবে মেনে নিয়ে করে নিই। আর প্রতিদিন এই পঁচাত্তর হাজার ডিসিশনের প্রতিটা ডিসিশন সচেতনভাবে নেওয়া কোনোদিনও সম্ভব না। কিন্তু প্রতি মুহূর্তে আমাদের নেওয়া প্রতিটা ডিসিশন আমাদের জীবনের গতিপথটাকে কন্টিনুওসলি নির্ধারণ করে চলেছে।
তো যদি আমরা চাই আমাদের অবচেতনভাবে নেওয়া ডিসিশনগুলোও আমাদের জীবনের লক্ষ্যের দিকে যেন আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে তাহলে তার একটাই উপায়, মাথার মধ্যে সারাদিনে কি কি ইনফর্মেশন ঢুকছে? সেগুলোকে যতটা সম্ভব চুজ করে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করা। কারণ যা যা ইনফর্মেশন আমাদের মধ্যে রয়েছে তার মাধ্যমেই অবচেতনভাবেই নেওয়া আমাদের ডিসিশনগুলো নির্ধারণ হয়। তাই সবার প্রথম কাজ তো হলো ইন্টারনেট, টিভি, খবরের কাগজ এই সমস্ত জায়গা থেকে আবর্জনামূলক ইনফরমেশনগুলো অর্থাৎ যেগুলো আপনাকে আপনার জীবনে লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যেতে কোনভাবেই সাহায্য তো করবেই না উল্টে বরং বাঁধা দেবে সেগুলোকে নিজের মাথা মধ্যে ঢোকা থেকে আটকানোর ব্যবস্থা করা এবং বই, ডকুমেন্টারি, মেনটরসদের এডভাইস এই জাতীয় জায়গাগুলো থেকে ইউজফুল ইনফর্মেশন যেগুলো আপনাকে আপনার জীবনের লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে সেগুলোকে নিজের মাথার মধ্যে ঢুকানোর ব্যবস্থা করা। কারণ মনে রাখবেন,
যা-ই ভিতরে যায়, তাই বাইরে বেরিয়ে আসে।