স্মার্টফোন আসক্তি ছাড়তে অনুসরণ করুন কয়েকটি টিপস
বিংশ শতাব্দীতে এসে দেখা যাচ্ছে ড্রাগ অ্যাডিকশন বা মাদকাসক্ত মানুষের চাইতে মোবাইল ফোন আসক্ত মানুষের সংখ্যা বেশি। সেটাই স্বাভাবিক। স্মার্টফোন এখন অতি সহজলভ্য। পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকার স্মার্টফোনও বাজারে পাওয়া যায়। ফলে যে যার সুবিধামতো স্মার্ট ফোন কিনে নিতে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন। দামের ব্যাপারটা একপাশে রাখি। দাম যাই হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে স্মার্ট ফোন তো স্মার্ট ফোন-ই।
স্মার্ট ফোনের সাধারণ কিছু ফিচারস সব স্মার্টফোনেই থাকে। ফলে স্মার্টফোনটি হয়ে ওঠে ব্যবহার যোগ্য।আজ প্রতিটি ঘরে ঘরে রয়েছে স্মার্টফোন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের হাতেই পৌঁছে গেছে এই আধুনিক প্রযুক্তিটি। কর্মবিরতি কিংবা কাজ থেকে অবসর পেলেই তাদেরকে দেখা যাবে কোন এক জায়গায় হেলে পরে থেকে মাথা নিচু করে ফোনটা ঘাটাঘাটি করছে।
আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন, অর্ধেকের বেশি সময় আপনি স্মার্ট ফোন চালান। বাজে একটি নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। আপনি এটা যেমন বুঝতে পারছেন তেমনই এর থেকে বের হতে চেয়েও বের হতে পারছেন না। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, স্মার্টফোন মানুষকে করে তুলেছে আগের তুলনায় আরো বেশি অলস ও কর্মবিমুখ।
স্মার্টফোন আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে নিম্নোক্ত টিপস প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। আশা করি টিপসগুলো অনুসরণ করলে স্মার্টফোন আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে। তবে যেটা মুখ্য ভূমিকা পালন করবে সেটা হচ্ছে আপনার ইচ্ছাশক্তি। নেশাকে তাড়ানোর ইচ্ছা শক্তি যদি আপনার থেকে না থাকে তবে ক্ষমা করবেন, আপনার ভবিষ্যৎ একেবারেই অন্ধকার। আমার লেখা, আপনার ভবিষ্যৎ আলোয় ভরে দিতে পারবে না। শুধু আলোকিত করার পথটুকু খুলে দিতে পারবে।
যদিও স্মার্টফোন আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া অত সহজ নয়। তবুও বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘেঁটেঘুঁটে অল্প কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছি। দেখা যাক এই তথ্যগুলো আপনার কতটা কাজে লাগতে পারে।
নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখাঃ
স্মার্টফোন আসক্তির প্রথম এবং অন্যতম কারণ হচ্ছে নোটিফিকেশন অন করে রাখা। আপনি কোন একটা কাজে ব্যস্ত থাকলে তখন যদি আপনার ফোনের নোটিফিকেশনটা টিং করে বেজে ওঠে, সঙ্গে সঙ্গে আপনার মন উড়ু উড়ু হয়ে যাবে। এবং আপনি ব্যাস্ত হয়ে পড়বেন নোটিফিকেশনটা কিসের ছিল জানার জন্য। তখন আপনি সাথে সাথে নোটিফিকেশন চেক করে, এই যে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢুকবেন আপনার আর বের হওয়ার কোন খবরই থাকবে না। যত সমস্যার মূল এই নোটিফিকেশন। তাই স্মার্টফোন আসক্তি থেকে রক্ষা পেতে সবার প্রথমে নোটিফিকেশন বন্ধ করে ফেলা উচিত।
নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখাঃ
নিজেকে কোন একটা কাজে ব্যস্ত রাখবেন। যে সময়টায় আপনি ফোন চালাবেন, সেই সময়টাকে অন্য কাজে ব্যবহার করে আপনি নতুন কিছু শিখতে পারেন। নতুন কোনো গল্প উপন্যাস লিখতে পারেন, নতুন কোন আর্টিকেল লিখতে পারেন, আপনি ছবি আঁকতে পারেন, পরিবারকে সময় দিতে পারেন, নতুন পদের একটা রান্না শিখতে পারেন। বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, যাতে আপনার স্মার্ট ফোন চেক করার সময়টাও না পাওয়া যায়।
একটি গন্তব্য ঠিক করুনঃ
যদি একান্তই মোবাইল ফোন চেক করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়, তবে একটি নির্দিষ্ট গোল সেট করুন। আপনি এই কাজটা করার জন্য মোবাইলটা হাতে নিচ্ছেন এবং এই কাজটা করা শেষ হলে আপনি আর মোবাইল ধরবেন না। সেটি হতে পারে কোন দরকারি মেসেজ চেক করা, কিংবা কাউকে কোন দরকারি মেসেজ পাঠানো। ইম্পর্টেন্ট ছবি দেখা ইত্যাদি। মূলকথা আপনি যেই কাজটার জন্য মোবাইল হাতে নিয়েছেন সে কাজটা শেষ করে মোবাইলটি বন্ধ করে অন্য কোথাও ফেলে রাখবেন। যেটা আপনার হাতের কাছে থাকবে না।
অ্যাপস ডিলিট করে দিনঃ
নেশা জাগানো অ্যাপস গুলো আনইন্সটল করে দিন। আপনি যদি ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম হোয়াটসঅ্যাপে এইসব সোশাল মিডিয়া গুলোতে আসক্ত, তবে আপনার জন্য ভালো হবে, আপনি এই সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাপগুলো মোবাইল থেকে সরিয়ে ফেলেন। যদি মোবাইলে অ্যাপ গুলো না থাকে, তবে আর কিসের আসক্তি, কিসের নোটিফিকেশন, কিসের ফোন চেক করা। তবে দরকারের মেসেজগুলো আপনি চেক করতে পারেন। এক্ষেত্রে একটা সময় নির্ধারণ করেন, সেই সময় আপনি সোশ্যাল মিডিয়া গুলো ব্যবহার করবেন। বাকি সময় গুলোতে করবেন না। এভাবে কিছুদিন অনুশীলন করার মাধ্যমে আপনার ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম হোয়াটসঅ্যাপ এর সব কিছু থেকে আসক্তি কমে যাবে।
গেমারের আসক্তিঃ
আপনি যদি গেমার হয়ে থাকেন এবং পাবজি, ফ্রী ফায়ার, লুডু স্টার এর মতন প্রভৃতি গেমে আসক্ত হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার জন্য এই নেশা ছাড়ানো একটু কঠিন হবে। তবে আমি আগেই বলেছি আপনার ইচ্ছা শক্তিটা আপনার স্মার্টফোন আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সুতরাং গেমিং অ্যাপস আনইন্সটল করে দিলে আপনার আর গেমের প্রতি আসক্তি থাকবে না। তাই নিজের ভালো নিজে বুঝে গেম এর অ্যাপ গুলোকে আনইন্সটল করে দিবেন।
ছেড়ে দিন স্মার্টফোন ব্যবহারঃ
কোন ভাবেই যদি আপনার পক্ষে স্মার্টফোন আসক্তি ছাড়ানো সম্ভব না হয়, তবে আমি আপনাকে সাজেস্ট করবো আপনি স্মার্ট ফোন ছেড়ে দিয়ে বাটন ফোন চালানো শুরু করেন। এতে স্মার্টফোনের কোন ফিচার নেই। কোন কিছুই নেই। স্মার্টফোনের নেশা আপনার খুব দ্রুত চলে যাবে।
আজ এ পর্যন্তই। ধন্যবাদ।