অতিরিক্ত ঘামের সমস্যার সমাধান
ঘাম দেহের অভ্যন্তরীণ বর্জ্য পদার্থ লোমকূপের মাধ্যমে বের করে দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। শরীর থেকে ঐসকল বর্জ্য পদার্থ বের করতে না পারলে তা একসময় শরীরের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতো। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে ঘামের কোনো বিকল্প নেই। অনেক আগে যখন ডায়ালাইসিস পদ্ধতি ছিলো না তখন রোগীকে কম্বলের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হতো। গরমে রোগীর শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে গেলে রোগী কিছুটা হলেও আরামবোধ করতো। তাই বলা যায়, শরীর থেকে ঘাম বের হওয়া অতি প্রয়োজন। তবে মাত্রাতিরিক্ত ঘাম বের হওয়া আবার ভালো লক্ষণ নয়। অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়া যেমন বড় রোগের লক্ষণ তেমনি এর চিকিৎসা করাও দ্রুত প্রয়োজন। আজকে এই বিষয়ে সতর্কতার জন্যই মূলত এই লেখা।
জেনে নেই অতিরিক্ত ঘাম কেন হয়?
অতিরিক্ত ঘাম হওয়াকে ইংরেজিতে হাইপার হাইড্রোসিস বলে। ধারণা করা হয় হাইপার থ্যালামাস ক্রুটির কারণে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা হয়ে থাকে। এটি হলো মস্তিষ্কের সেই অংশ যেটি মানবদেহের ঘাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। এই অংশটি কোনো কারনে নষ্ট হয়ে গেলে অতিরিক্ত ঘাম নির্গত হতে থাকে। তবে এটি ধারণা মাত্র। ঠিক কি কারণে শরীরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এত পরিমাণে ঘাম হয় সেটা বের করা সম্ভব হয়নি। মোট জনসংখ্যার ১% এই অতিরিক্ত ঘামের সমস্যায় ভুগে থাকেন। সাধারণত বগলের নিচে, হাতে বা পায়ের তালুতে, কপালে, উপরের ঠোঁটে এবং ঘাড়ে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হতে দেখা যায়। যেসকল কারণে অতিরিক্ত ঘাম হয়ে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে কোনো ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, শরীরে উপস্থিত অন্য কোনো রোগের সংক্রমণ আবার অনেক সময় কোনো কারন ছাড়াই এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা
যাদের অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা আছে তাদের প্রতিনিয়ত যেসকল সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সেগুলো হলো
১.হাতের তালু ঘামার জন্য করমর্দনে অস্বস্তি। কেননা করমর্দনের পর ব্যক্তি যখন হাত মোছেন সেটা সত্যিই অপমান জনক।
২.দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ায় একজন ব্যাক্তিকে অপদস্থকর অবস্থায় ফেলে দেয়।
৩.ঘামে ভেজা কাপড় বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। বিশেষ করে মেয়েদের।
৪.কাপড়ে দাগ পড়ে যায়।
অতিরিক্ত ঘামের সমাধান
১.ডারমাটোলজিস্টের সাথে যোগাযোগ করা যায়
২.বগলের নিচে ঘামের সমস্যা হলে বোটুলিনাম টক্সিন ইঞ্জেকশন কার্যকর হতে পারে। (বোটুলিনাম বিষাক্ত পদার্থ, এটি ঘাম তৈরি করা গ্রন্থিগুলোর সাথে যুক্ত স্নায়ুগুলোর কার্যক্ষমতা থামিয়ে দেয়। ফলে ঘাম তৈরি হয় না। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে)
৩.স্থায়ী সমাধান পেতে সার্জারী করা যায় যাকে এন্ডোস্কোপিক ট্রান্সথোরাসিক সিম্যথেকটমি বলা হয়। এই সার্জারীর মাধ্যমে ঘাম তৈরি হওয়ার গ্রন্থিগুলোর সাথে সংযুক্ত স্নায়ুর সংযোগ ছিন্ন করা হয়। এতে ঘামের সমস্যার প্রায় ৯৯% সমাধান হলেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন এতে ঘাম উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে না যেহেতু তাই শরীরের অন্য কোনো স্থান দিয়ে ঘাম বের হবে। এতে ঐ অংশে সাধারণের তুলনায় বেশি পরিমানে ঘাম বের হবে। এই সার্জারীর পর ফুসফুস ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন যত কম বয়সে সার্জারী করা যায় ততো ভালো। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ গ্রহণ করা যাবে না।
বেশি ঘাম হলে কি খাবেন?
১.মৌসুমি ফলমূল, বিশেষ করে পাঁকা আম
২.পান্তা ভাত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে
৩.দইয়ের ঘোল ও ডাবের জল
৪.কাঁচা আমপোড়ার শরবত
৫.প্রতিদিন সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার লিটার জল
৬.পাতলা চা
৭.রোদে বেশি ঘোরঘোরি করতে হলে সাথে করে চিনি, লবণ,লেবু ছাতু মিশিয়ে রেখে দিতে পারেন। কিছুক্ষণ পর পর ১/২ ঢোক খেতে পারেন
৮.তেল মসলাযুক্ত খাবার পরিহার
অতিরিক্ত ঘামের কোনো রোগের লক্ষণ আছে কি?
বেশি ঘাম শরীরের জন্য খারাপ। এতে শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায় যার ফলে শরীর ডিহাইড্রেশনে ভোগে। যারা অতিরিক্ত ঘামেন তাদের শরীরে বিশেষ অবস্থার লক্ষণ প্রকাশ পায়। মারাত্মক কিছু হওয়ার আগে এর প্রতিকার করুন। ডায়বেটিস টাইপ এক এবং টাইপ বি উভয় প্রকারের ডায়বেটিসেরই লক্ষণ হতে পারে অতিরিক্ত ঘাম। যাকে বলে গ্যাস্টোশনাল ডায়বেটিস। ইনসুলিন উৎপাদন সমস্যা এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ঝামেলা হলেও এই সমস্যা দেখা যায়। অনেকের রক্তের গ্লূকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক কম থাকে। যক্ষা বা লসিকা গ্রন্থির ক্যান্সারে রাতে ঘাম হয়। তবে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ঘেমে যাওয়া অত্যান্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণও অনেক সময় অতিরিক্ত ঘাম হয়ে থাকে।
তাই বলা যায়, সময় থাকতে সচেতন হয়ে যান। অন্যথায় মারাত্মক কিছু ঘটে যেতে পারে। আজ এই পর্যন্তই। ধন্যবাদ।