ঠোঁট ফাটা রোধে করণীয়
মানবদেহের একটি অন্যতম সুন্দর অঙ্গ হচ্ছে ঠোঁট। নারীদের সৌন্দর্যের একটি বিশেষ দিকও কিন্তু ঠোঁট। একেক জনের একেক রকম ঠোঁট তাদের চেহারায় ভিন্ন রকমের সৌন্দর্য তুলে ধরে। এই ঠোঁট যেমন সৌন্দর্যতা বাড়াতে সাহায্য করে তেমনি এর কোনো রকম সমস্যা হলে সৌন্দর্য ম্লান হওয়ার সাথে সাথে শারীরিক কষ্টও যুক্ত হয়। যেমন ঠোঁট যদি ফেটে রক্তারক্তি ভাব হয়ে যায় তখন দেখতে যতটা না খারাপ লাগে তারচেয়ে বেশি কষ্ট অনুভূত হয় জ্বালাপোড়া করলে। তাই আজকের আলোচনার বিষয় ঠোঁট ফাটা ও ঠোঁট ফাটা রোধ করতে করণীয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক-
ঠোঁট কেন ফাটে?
*ঠোঁটের ত্বকের আবরণ খুবই পাতলা তাই খুব সহজেই ঠোঁট ফেটে যায়।
*ত্বক পাতলা হওয়ায় সূর্যালোক বা সূর্যরশ্মি দ্বারা খুব সহজেই প্রভাবিত হতে পারে। ফলে চামড়া ফেটে যায়।
*বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ কমে গেলে।
*দেহের অন্যান্য অংশ লোম দ্বারা আবৃত থাকলেও ঠোঁটে কোনো লোম নেই। তাই শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় ঠোঁটের সুরক্ষা কম।
*অবস্থানগত কারণে ঠোঁট খুব সহজেই জিহবার সংস্পর্শে আসে, এটিও ঠোঁট ফাটার একটি অন্যতম কারণ।
*সাধারণত ঠোঁট ফেটে গেলে জিহবা নিজের অজান্তেই ঠোঁট ভিজিয়ে দিয়ে যায়। এতে সাময়িক ভাবে ঠোঁট ভেজা হলেও স্যালাইভা শুকিয়ে গেলে তা আগের চেয়েও বেশি শুকিয়ে যায়।
*দেহে জলের পরিমাণ কম হলে। অর্থাৎ পানি কম খেলেও ঠোঁট শুকিয়ে যায়।
*কোনো কারণে নাকের বদলে মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে বাতাস প্রবাহের কারণে ঠোঁট বেশি শুকিয়ে যায়।
ঠোঁট ফাটা থেকে মুক্তি পেতে-
ঠোঁট ফাটা সত্যি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে কিছু উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে। এগুলো হলো-
*প্রতিদিন নিয়ম করে ঠোঁটের পরিচর্যা করব।
*ঘুম থেকে উঠে যখন দাঁত ব্রাশ করবেন তখন একই ব্রাশ দিয়ে হালকা করে আপনার ঠোঁটও ব্রাশ করে নেবেন। আপত্তি থাকলে নরম তোয়ালে দিয়ে ঠোঁটে ঘষে নিবেন। এতে ঠোঁটের মরা চামড়া বা ডেড সেলস গুলো দূর হয়ে যাবে। ঠোঁট মসৃণ হয়ে উঠবে।
*রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বেও একই ভাবে ডেড সেলস তুলে ফেলুন এবং ভেসলিন বা আমন্ড ওয়েল নিয়ে ঠোঁটে ম্যাসাজ করে সারারাত রেখে দিবেন। এতে ভালো ফল পাব।
*কোনো কারণে ঠোঁটের চামড়া উঠে গেলে দাঁত দিয়ে বা আঙুল দিয়ে উঠানো উচিৎ না। বরং খোঁচা খুঁচি করারও দরকার নেই।
*অতিরিক্ত লিপস্টিক লাগানো বন্ধ করুন। লিপস্টিকের কেমিকেল ঠোঁট কালো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কৃত্রিম রং লাগাতে গিয়ে আসল রং হারিয়ে ফেলার তো দরকার নাই।
*যাদের ঠোঁট খুব শুষ্ক, তারা ম্যাট লিপস্টিক লাগাবেন না। এতে ঠোঁট আরও ড্রাই হয়ে যায় এবং দেখতেও বাজে লাগে
*ম্যাট লিপস্টিকের পরিবর্তে গ্লসি লিপস্টিক ব্যাবহার করা যেতে পারে।
*যারা ধুমপান করেন, তাদের ধূমপান জনিত কারণে ঠোঁট কালো হয়ে যায়। রঙিন ঠোঁট যেভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করে কালো ঠোঁট সেরকমই নিকৃষ্ট করে। তাই ঠোঁটের স্বাভাবিক রঙ বজায় রাখতে সিগারেট পরিহার করুন।
*পরিশেষে বেশি করে পানি খাবেন। পানি ঠোঁটের আর্দ্রতা ধরে রাখে ও ঠোঁটকে করে তোলে মসৃণ ও আকর্ষণীয়।
*ফাটা ঠোঁটের যত্নে নারিকেল তেল বা অলিভ ওয়েল ও ব্যাবহার করা যেতে পারে।
*সবসময় হাতের কাছে ছোট কৌটায় ভেসলিন রাখা উচিত। যাতে যখনি দরকার হবে সহজে ব্যবহার করা যাবে।
লিপজেল বা ভ্যাসলিন ব্যাবহারেও যদি ঠোঁট ফাটা না কমে তখন করণীয় –
*দিনে একবার স্ক্রাব করুন।
*লেবুর রস ও চিনির মিশ্রনে প্যাক বানিয়ে ঠোঁটে ব্যাবহার করুন। লেবু যেহেতু এসিটিক ধর্মের তাই ঠোঁটে লাগলে একটু জ্বালাপোড়া করতে পারে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে ঠিক হয়ে যাবে।
*শশা থেকে জুস বের করে (ব্লেন্ড করে বা বেটে) পরিষ্কার তুলা ভিজিয়ে ২/৩ বার উপরে ও নিচের ঠোঁটে ঘষুন। ৫ মিনিটের মতো রেখে ধুয়ে ফেলুন।
* আধা চা চামচ নারকেল তেল ও আধা চা চামচ মধু একত্রে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ২/৩ বার উপরে ও নিচের ঠোঁটে লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
*ঘিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
*এলোভেরার নানা গুনের কথা আমাদের সবারই জানা। ঠোঁট ফাটা রোধেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আজ এই পর্যন্তই। ধন্যবাদ।