প্রাক্তনকে ভুলে যেতে যা করবেন

বিচ্ছেদ শব্দটার সাথে যেন জড়িয়ে আছে, হাজারো কষ্টের মায়াজালে বোনা অনেক বিশাল একটা নোনা অশ্রুর গভীর সমুদ্র।
যেকোনো প্রিয় জিনিসের সাথেই “বিচ্ছেদ” জিনিসটা একজন মানুষের জীবনে হাহাকার বয়ে আনে। মানুষ তাই কখনো তার প্রিয় জিনিসের থেকে আলাদা হতে চায় না। সব সময় সেই প্রিয় জিনিস অথবা প্রিয় মানুষটিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায়।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, অনেক কারণেই বিচ্ছেদ শব্দটা নামক বিরাট এক কালবৈশাখীর সম্মুখীন কোন না কোন মানুষকে হতেই হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম, যা শুধুমাত্র কিছু হতভাগার কপালে ঘটে থাকে।

how to forget the past relationship

ভালোবাসার মানুষের সাথে বিচ্ছেদ হওয়া একজন মানুষের জীবনকে নানা ভাবে ভেঙে দিতে সক্ষম।
একজন মানুষের হৃদস্পন্দন যখন আরেকজন মানুষের হৃৎস্পন্দনকে গভীর ভাবে অনুভব করতে পারে, তখন-ই উভয় হৃদয় যুগলের মধ্যে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়।
যখন কোন কারনে, দুটি হৃদস্পন্দনের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে, তখন কেন যেন আর পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না।
হাজার হোক ওই ছোট্ট হৃদয়টার কারণেই তো আমরা মানুষ। যতই শক্ত সামর্থ্যবান মানুষ হই না কেন, দিন শেষে ওই চার প্রকোষ্ঠ হৃদয়ের কাছে আমরা সকলেই অসহায়।
হৃদয়ের বিচ্ছেদ হওয়াটা তাই মেনে নিতে পারি না।

বিচ্ছেদে কষ্ট হবেই। আমরা এখন যে প্রজন্মে আছি, এই প্রজন্মে সম্পর্ক গড়তেও যেমন দেরি হয় না। সম্পর্ক ভেঙে যেতেও তেমন দেরি হয় না। আর তাই সম্পর্ক সৃষ্টি করার পূর্বে আমার মনে হয় বিচ্ছেদের প্রিপারেশন নিয়ে রাখা উচিত। এটা তো আর নব্বই দশক না।

কখনো আপনার প্রিয় মানুষটির সাথে বিচ্ছেদ হয়ে গেলে আপনি তাকে কিভাবে ভুলবেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু পদক্ষেপ সম্পর্কে যা আপনাকে  সাহায্য করতে পারে দুঃসহ সময়ে।

১. প্রথমত স্মৃতিগুলো অনেক বেদনা দিতে থাকে। আপনাকে সব স্মৃতি ভুলে যাওয়া শিখতে হবে। এখন আপনি পুরনো স্মৃতি কিভাবে ভুলবেন? হয়তো সকল স্মৃতি ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু চেষ্টা করতে দোষ কি।
ধরুন আপনার প্রাক্তন আপনার সাথে এই জায়গায় যেত। আপনি সেই জায়গায় গেলে তার কথা আপনার খুব মনে পড়বে। তাহলে আপনি সেখানে আর যাবেন না। সেই জায়গাএ সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিবেন। কয়েক মাস বা কয়েক বছর ওই জায়গায় না গেলে, পরবর্তীতে সেখানে গেলে আপনার কিছু মনে পড়বে না। এভাবে তার সাথে জুড়ে থাকা প্রত্যেকটি জিনিসের সাথে ও বিচ্ছেদ আনা শুরু করবেন। এতে করে আপনি অতীতের অনেক স্মৃতি ভুলে যেতে সক্ষম হবেন।

২.বিচ্ছেদ হয়ে গেলে তার সাথে যোগাযোগ আর করবেন না। যোগাযোগ একদম বন্ধ করে দিবেন। ভুলক্রমে রাস্তায় দেখা হয়ে গেলে অচেনা হবার ভান করে সরে যাবেন। এমন ভাব করবেন যে তার সাথে আপনার কখনো দেখাই হয়নি।

৩.নিজেকে ভালবাসতে শিখুন। একটা মানুষ যখন নিজেকে ভালোবাসতে শিখে যায়, তখন দুনিয়ার কোনো কিছুই তাকে নিজেকে ভালোবাসা থেকে আটকাতে পারে না। প্রাক্তনের মমতাময়ী স্মৃতিগুলোও না।
তাই নিজে যা পছন্দ করেন তাই করা শুরু করুন। নিজেকে সময় দিন। আপনি বই পড়তে পছন্দ করেন, তবে বই পড়া শুরু করেন। আপনি বার্গার খেতে পছন্দ করেন, প্রিয় রেস্টুরেন্টে গিয়ে বার্গার খেয়ে আসুন। আপনার হ্যারি পটার দেখতে ভালো লাগে, আপনি হ্যারি পটার মুভি ডাউনলোড করে দেখতে শুরু করেন। অর্থাৎ যত বেশি সম্ভব নিজেকে সময় দিন।

৪. আপনার কোনো আইডল বা পছন্দনীয় ব্যক্তির জীবন অনুসরণ করা শুরু করুন। যেমন আপনি লেখক হতে চাইলে আপনার প্রিয় লেখক এর জীবন সম্পর্কে পড়ুন। তার বায়োগ্রাফি থেকে উৎসাহ নিন। নিজেকে একজন নতুন মানুষ করে গড়ে তোলার যুদ্ধে অস্ত্র হাতে মাঠে নেমে পড়ুন।

৫.অতীত নিয়ে কখনো পড়ে থাকবেন না। এমন বন্ধুর সাথে কথা বলা বন্ধ করুন যে কথায় কথায় আপনাকে আপনার প্রাক্তন এর কথা মনে করিয়ে দেয়। সাথে এমন জিনিস এর থেকেও দূরত্ব বজায় রাখুন যে সকল জিনিস দেখলে আপনার প্রাক্তন এর কথা মনে পড়ে।

৬.জোর করে ভুলে যাবার চেষ্টা করা উচিৎ নয়। দেখা যায়, আমরা যে জিনিসটা জোর করে মুখস্ত করার চেষ্টা করি সেই জিনিসটাই আমাদের মুখস্ত হয় না। তেমনি যে জিনিসটাকে আমরা ভুলে যাবার চেষ্টা করব সে জিনিসটা কে আমরা আর ভুলতে পারবোনা। তাই নিজেকে সময় দিন। জোর করে ভুলবার চেষ্টা করবেন না। সময়ের সাথে সাথে নিজেই ভুলে যাবেন।

৭.নিজের পরিবারকে সময় দিন। আপনার পোষা প্রাণী থাকলে সেগুলোর পূর্ণদমে যত্ন নেওয়া শুরু করুন। তাদের সাথে সময় কাটান। আপনার কথা বলা পাখি থাকলে তাদের সাথে টুকটাক কথা বলুন। তাদের নতুন শব্দ গেঁথে কথা বলতে শেখান। বাড়িতে কুকুর পুষলে কুকুরকে নিয়ে হাঁটতে বের হন। পরিবার-পরিজন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে গিটার বাজিয়ে বন্ধুরা মিলে একটি আনন্দঘন পরিবেশ গড়ে তুলুন।

৮.ধর্মে-কর্মে মনোযোগী হন। এতে করে মনে অনেক শান্তি আসে। বেদনার কথাগুলো সৃষ্টিকর্তাকে বললেও মন অনেকটা হালকা লাগে।

এভাবে একসময় দেখবেন আপনি তাকে ভুলে গেছেন। তার কথা মনে হয়তো পড়বে, তাকে তো আর ভোলা সম্ভব না। কিন্তু যখন মনে পড়বে তখন আপনার আর কোন কষ্টই হবে না। আপনি ঠিক হয়ে যাবেন। আপনিও আপনার সাধারণ জীবনে ফিরে যেতে সক্ষম হবেন।

আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকবেন।

Similar Posts