আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ৫ টি সহজ উপায়
সফলতা অর্জন করতে পরিশ্রমের পর সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা দরকার হয় সেটি হচ্ছে আত্মবিশ্বাস বা সেলফ কনফিডেন্স। কিন্তু আমরা যে ধরনের সমাজে বসবাস করি এখানকার মানুষের বেশিরভাগেরই স্বভাব হচ্ছে আমাদের আত্মবিশ্বাসটাকে নিচে নামিয়ে দেওয়া। আমরা তরুনরা নতুন করে কোন কিছু করার উদ্যোগ নিতে চাইলে সমাজের সেসব নেতিবাচক লোকেদের কারণে উদ্যোগ নেয়ার আত্মবিশ্বাসটা হারিয়ে ফেলি। আমাদের ভেতরে কাজ করে সমালোচনার ভয়। আর এই সমালোচনার ভয় হয়ে ওঠে আমাদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির মূল কারণ। কিন্তু আমরা এটাও জানি যে আত্মবিশ্বাস ছাড়া সফলতা অর্জন করা একেবারেই অসম্ভব। কেননা কোন কিছু করতে গেলে নিজের উপর যদি বিশ্বাসই না থাকে সে কাজটা সঠিক ভাবে কিভাবে হবে?
জীবনের সব ক্ষেত্রে তাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা বেশ প্রয়োজন। আর তাই আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হবে কিভাবে নিজের প্রতি বিশ্বাস মজবুত রাখা যায়। একটা কথা মাথায় রাখবেন, আত্মবিশ্বাস কিন্তু পুরোটাই অনুশীলনের ওপর নির্ভরশীল। আপনি যত এর অনুশীলন করবেন, তত আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাস বেড়ে যাবে। তো চলুন দেরী না করে আমরা জেনে নেই কোন কোন কাজ করলে নিজের প্রতি বিশ্বাস বেড়ে যাবে।
১। ব্যায়াম করা
শুনে হাসি পাচ্ছে ঠিক না? আত্মবিশ্বাসের সাথে আবার ব্যায়াম এর কি সম্পর্ক! এদের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।
কিন্তু আমাদের বোঝার সুবিধার্থে বলে দেই যে, আপনার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য প্রথমত আপনাকে মানসিকভাবে ঠিক থাকতে হবে। আপনি যদি মানসিকভাবে প্রস্তুতই না থাকেন তবে আপনার আত্মবিশ্বাস কিভাবে অর্জন করবেন? আর এই মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার প্রথম ধাপে হচ্ছে ব্যায়াম করা। কেননা ব্যায়াম করার ফলে মস্তিষ্ক থেকে কিছু বিশেষ হরমোন বের হয়। যা আমাদের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। একই সাথে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করার ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। যার ফলে আমরা হাসিখুশি থাকি। এই হাসি খুশি থাকার কারণেই নিজের প্রতি বিশ্বাসটা বেড়ে যায়। আপনি নিজে থেকেই মানসিক ভাবে তৈরি হয়ে নিন যে আপনি কাজটা করতে পারবেন। আশা করছি ব্যায়াম ও আত্মবিশ্বাস এর মাঝে যে সেতুবন্ধনটি কাজ করছে সেটি সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
২। রুচিশীল পোশাক পরিধান করুন
নিজের পরিহিত পোশাক আপনার আত্মবিশ্বাস এর সাথে সম্পর্কিত। আপনি যদি আপনার পোশাক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন তবে আপনার ভিতরে এক প্রকার আত্মবিশ্বাস নিজে থেকে এসে পড়বে। আবার যদি আপনি আপনার পোশাক নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকেন, দেখা যাবে আপনার আত্মবিশ্বাস ও আপনার ওপর থেকে চলে যাবে। সুতরাং আপনি আপনার পছন্দমত ওইসব পোশাক পরিধান করুন যা আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। একেক মানুষের একেক রকম পোষাকে আত্মবিশ্বাস ওঠা নামা করে। আপনি আপনার নিজেরটা বুঝে নিন এবং সেই হিসাবে নিজেকে সাজিয়ে তুলুন।
৩। প্রতিদিন নতুন কারো সাথে কথা বলুন
আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য আপনি নতুন নতুন মানুষের সাথে কথা বলা শুরু করতে পারেন। বাসে কোথাও যাওয়ার সময় কিংবা ক্লাসে বসে থেকে অথবা রিকশায় উঠে রিক্শা মামার সাথে কথা বলা শুরু করুন। তাদের জীবনযাপন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। একটা সুন্দর কনভারসেশন সকলের সাথে চালান। এই যে মানুষের সাথে কথা বলাটা, মানুষের সম্পর্কে জানার আগ্রহটা আপনাকে নিজের প্রতি বিশ্বাস অর্জন করতে সহায়তা করবে। বিশ্বাস না হলে একবার চেষ্টা করেই দেখুন না।
৪। আপনার ভয়গুলোর মুখোমুখি হন
আত্মবিশ্বাস তখনই কমে যায় যখন আমরা কোনো কিছুকে ভয় পাওয়া শুরু করি। মানুষজন বিভিন্ন জিনিস ভয় পেতে পারে। ভয় পাওয়া কিন্তু মানবিক অনুভূতির অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এই পৃথিবীতে একেবারে সাহসি কেউ হয় না আবার একেবারে ভীতু কেউ হয় না। আপনি কাগজ-কলম নিয়ে বসে চিন্তা করুন, আপনার ভয় কিসে কিসে। আপনি সমালোচনার ভয় পান, না আপনি কাউকে হারানোর ভয় পান, না কি আপনি কোন নির্দিষ্ট পোকামাকড় ভয় পান ইত্যাদি। মোট কথা আপনি ঠিক কি কি ভয় পান সেগুলো লিপিবদ্ধ করুন। অতঃপর সেইসব জিনিসের মুখোমুখি হন। আপনি যদি মাকড়সা ভয় পান, আপনার করণীয় হবে একটা জ্যান্ত মাকড়শাকে আপনার সামনে ছেড়ে দিয়ে সেটার হাঁটাহাঁটি লক্ষ্য করা। তার দিকে আপনি তাকিয়ে দেখুন। একদম ভয় পাবেন না। সে তো আপনাকে আর খেয়ে ফেলবে না। এভাবে করে নিজের ভয়গুলোর মুখোমুখি হোন। একসময় দেখবেন আপনার কোন কিছুতে ভয় লাগবে না। নিজের ভেতর থেকে ভয় জিনিসটাকে তাড়িয়ে দিলে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে। যেহেতু আপনার ভেতর ভয় জিনিসটা আর নেই।
৫। প্রতিনিয়ত কাউকে সাহায্য করুন
মানুষকে সাহায্য করার সাথে আত্মবিশ্বাসের কোনো যোগসূত্র নেই, এটা হয়তো আপনার মনে হতে পারে। কিন্তু ওই যে প্রথম পয়েন্টে বললাম, আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য সর্বপ্রথম নিজের ভালো থাকা জরুরী। নিজের মানসিকভাবে প্রস্তুতিটা জরুরী। নিজে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা সম্ভব হবে যখন আপনি নিজে নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেন। তাই প্রতিনিয়ত কাউকে না কাউকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন। একবার একজন বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিকে সাহায্য করে দেখুন না, আপনার ভেতরে কি অনুভূতিটা হয়। এই অনুভূতিটাই পরবর্তীতে আপনাকে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে।
সুপ্রিয় পাঠক, এই ছিল আজকের আলোচনা। উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাস আনতে পারবেন। তবুও সম্পূর্ণ জিনিসটাই আপনার নিজের ওপর নির্ভর করছে। আপনি নিজেকে যত আত্মবিশ্বাসী দেখতে চান ততই আপনাকে আত্মবিশ্বাসের অনুশীলন করতে হবে। আজ তাহলে এখানেই ইতি টানছি, ধন্যবাদ।