কারো কথা মনযোগ দিয়ে শুনবেন যেভাবে
কোনো নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সময় বা যেকোনো কনভারসেশনের সময় আমরা বেশিরভাগ সময়ই নিজের কথাগুলো বলতে থাকি। আরেকজনের কথা না শুনেই নিজের মতামত জাহির করতে থাকি। অনেককে কথা বলতেও দেই না ঠিকমতো।
এর প্রভাব কেমন হতে পারে একটা গল্প দিয়ে বলি,
অফিসের দুইজন কর্মকর্তা ও তাদের বস একটা চেরাগ খুঁজে পেল। তারা তো মহাখুশি হয়ে চেরাগ ঘষে দিলো। দৈত্য ৩ জনকে দেখে বললো, সবার একটা একটা করে আশা পূরণ করবে। খুশিতে গদগদ হয়ে প্রথম কর্মকর্তা বললো, সে ইন্দোনেশিয়ার বালি-তে বেড়াতে যেতে চায়। দৈত্য তাকে পাঠিয়ে দিলো।
এরপর দ্বিতীয় কর্মকর্তা বললো, সে প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামে যেতে চায়। দৈত্য তার আশাও পূরণ করে দিলো।
এখন তাদের বস বললো- ঐ দুইজন কর্মকর্তাকে এই মুহূর্তে অফিসের ডেস্কে চায়৷ দৈত্য চুপচাপ তাদেরকে ডেস্কে বসিয়ে দিলো।এই গল্পটা থেকে কি বুঝলাম?
যদি কর্মকর্তা দুজন প্রথমে বসের ইচ্ছা শুনতো তাহলে কিন্তু এরকম হতো না।
সবসময় উর্ধ্বতনদের বা বসদের কথা বলার সুযোগ দিতে হয়, তাদের কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনতে হয়।
এতো গেলো কর্পোরেট ক্ষেত্রে।
ভালো বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হলেও বন্ধুর কথাগুলো শুনতে হয়। এতে করে বন্ধুর বিশ্বাস আসে।অর্থাৎ, শুধু কথা বলে যাওয়াই না, মনযোগ দিয়ে শোনাও একটা বড় গুণ। এই আর্টিকেলে মনযোগ দিয়ে কারো কথা শোনার কিছু টিপস দিবো।
১. বক্তার প্রতি মনযোগী হোন
কার্যকরী ভাবে শোনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মনযোগী হওয়া। যার কথা শুনছেন সে কি বলছে তা মনযোগ দিয়ে শোনা। মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি, ঐ সময়ের মধ্যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। অন্য কোনো চিন্তা মাথায় না আনা।
কথা শোনার সময় অন্য কোনো বিঘ্নসৃষ্টিকারী আওয়াজ বা চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। নিজের সবকিছুকে সীমাবদ্ধ করে শুধু ঐ সময়টাতে থাকুন।
২. মুখোমুখি বসুন ও আই কনটাক্ট করুন
যার সাথে কথা বলছেন তার মুখোমুখি বসবেন এবং কথা বলার সময় আই কনটাক্ট করবেন। এটি যে কথা বলছে তার কনফিডেন্সকে বাড়িয়ে দেয় এবং কথা বলতে সে কমফোর্টেবল ফিল করে।
আই কনটাক্ট করা মানে এমন না যে, নিষ্পলক ভাবে আপনি তার দিকে তাকিয়ে থাকবেন। স্বাভাবিকভাবে আপনি তার দিকে তাকালেন, কথার সিচুয়েশন অনুযায়ী মুচকি হাসি দিলেন এই জিনিসগুলো ছোট মনে হলেও ইফেক্টিভ কমিউনিকেশনে গুরুত্বপূর্ণ।
৩.কথার মাঝে কথা বলবেন না
ভালো শ্রোতা হবার প্রধান হ্যাকস এটি। যখন কেউ কথা বলে, তখন কথা বলার একটা স্বাভাবিক গতি থাকে। কারো কথার মাঝখানে অপ্রাসঙ্গিক কথা বললে কথার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে যায়, ফলে যে কথা বলে তার কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে যায়।
এজন্য, ভালো শ্রোতা হতে হলে একজন যখন কথা বলার মধ্যে থাকে, তাকে তার গতির মধ্যে রাখা উচিত। একটু বিরতি পেলে নিজের মতামত গুলো প্রকাশ করা উচিত।
৪. যে কথা বলছে সে কি ভাবছে ?
কেউ কথা বললে তার মুখের অঙ্গভঙ্গিতে তার ভাব প্রকাশ পায়। যদি আপনি তার অঙ্গভঙ্গি দেখে মনের ভাবটা বুঝতে পারেন তাহলে আপনার জন্য কমিউনিকেশন করাটা ইজি হয়ে যাবে।
সিচুয়েশন বুঝে আপনি আপনার মতামত দিতে পারবেন,কখন কথা বলতে হবে- কখন শুনতে হবে তা বুঝতে পারবেন।
৫. মাঝেমধ্যে প্রশ্ন করুন
শুধু কথা মনযোগ দিয়ে শুনলেই হবে না, মাঝেমধ্যে প্রশ্নও করবেন। এতে করে যে কথা বলছে সে ভাববে আপনি তার কথা মনযোগ দিয়ে শুনছেন। সে আরো কনফিডেন্টলি আপনার সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।
তবে হ্যা, অব্যশই সিচুয়েশন বুঝে প্রশ্ন করবেন। হুটহাট প্রশ্ন করে বসবেন না।
সুন্দর করে কথা বলা যেমন একটা গুণ তেমনি কারো কথা মনযোগ দিয়ে শোনাও একটা গুণ। আমরা যখন সুখে থাকি বা কষ্টে থাকি তখন আমরা আমাদের অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে চাই। যার সাথে শেয়ার করবো সে ভালো শ্রোতা হলে আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।
ভালো শ্রোতা হোন। আপনার ভালো ভালো রিলেশনশিপ গড়ার ক্ষেত্রে এটি কাজে লাগবে।