রিকেটস রোগ সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

অন্ত্রে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ এবং দাঁতের গঠন , হাড় এবং দাঁত মজবুত করণের জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। ভিটামিন ডি অত্যন্ত সহজলভ্য একটি উপাদান এবং এটি চর্বিতে দ্রবণীয়। দেহে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিলে রিকেটস রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি কোন ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ নয়। বরং অন্ত্রে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের ঘাটতি দেখা দিলে যে কেউ রিকেটস রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

রিকেটস রোগ কেন হয়?

প্রথমেই বলা হয়েছে যে দেহে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিলে রিকেটস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের দেহের গঠন হচ্ছে হাড়। হাড় গঠনের মূল উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম। সুতরাং হাড়কে গঠনগত ভাবে শক্তিশালী এবং মজবুত করতে প্রয়োজন ক্যালসিয়াম এবং এই ক্যালসিয়াম শোষিত হয় ভিটামিন ডি এর মাধ্যমে। আর সে কারণে যদি দেহে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দেয় তাহলে দেহে ক্যালসিয়াম শোষণের হার কমে যায় এবং এভাবেই রিকেটস রোগের উৎপত্তি ঘটে।

শিশুদের ক্ষেত্রে রিকেটস রোগের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। প্রাপ্ত বয়স্কদের রিকেটস রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম সেটি বলা ঠিক নয়। কারণ দেহে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিলে যে কেউ রিকেটস রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কর্মব্যস্ততার যুগে খোলা আকাশের নিচে কিছু সময় কাটানোর মত কোন সুযোগ নেই। যার ফলে শরীর সূর্যের আলোর সংস্পর্শে খুবই কম আসে এবং ভিটামিন ডি উৎপন্ন হবার হার হ্রাস পায়।

সূর্যের আলো ভিটামিন ডি এর একটি অফুরন্ত উৎস, সেই সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই অবগত। তবে সূর্যের আলো থেকে সরাসরি আমাদের দেহে ভিটামিন ডি এসে পৌঁছায় না। একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সূর্যের আলো ভিটামিনটি উৎপন্ন সক্ষম হয়।

সূর্যের আলো নয় বরং আমাদের দেহ ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস। আমাদের দেহের ত্বকের নিচে অবস্থিত কোলেস্টেরল গলাতে সাহায্য করে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং এই কোলেস্টেরল থেকেই ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়।

রিকেটস রোগের লক্ষণ সমূহ:

১.ভিটামিন ডি এর অভাবে দেহে ক্যালসিয়াম শোষিত হতে না পারায় হাড়ের গঠন দিনকে দিন দুর্বল হয়ে যায়

২.গিট ফুলে পায়ের হাড় বাঁকা হয়ে যায়।

৩. বক্ষদেশ সরু হয়ে যায়।

৪.হাড়গুলো ভঙুর হয়ে যায়। অনেক সময় দেহের কাঠামো ঠিক থাকেনা।

৫. প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হয়।

৬.পায়ের হাড় এবং হাতের আঙ্গুলের হাড় বাঁকা হয়ে যায়, ইত্যাদি।

রিকেটস রোগ থেকে রক্ষা পাবার  উপায়:

যেহেতু শিশুদের রিকেটস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি সুতরাং দিন কে দিন বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রিকেটস রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। পারিবারিক অসচ্ছলতা কর্মব্যস্ততা খোলা আকাশের অভাব ইত্যাদি এর মূল কারণ।

১.বলার অপেক্ষা রাখেনা শিশুদের রিকেটস রোগের হাত থেকে বাঁচতে হলে শুরু থেকেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। যেমন : ডিম, কলিজা বা যকৃৎ দুগ্ধজাত দ্রব্য, মাছের তেল, ভোজ্যতেল, দুধ, ইত্যাদি।

২.দিনের কিছু সময় প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশু উভয়ের সূর্যের আলোতে থাকা ভালো।

৩.কিন্তু শিশুদের অবশ্যই জননাঙ্গ এবং চোখ ঢেকে রেখে কিছুক্ষণ রোদে রাখা ভাল।

৪.ভিটামিন ডি এর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

৫.খোলা আকাশের অধিকার সবার এই সম্প র্কে গণ সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

রিকেটস রোগে আক্রান্ত শিশুদের কেবলমাত্র ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে। আবার শরীরের বিশেষ কোন অংশের গঠনের বিকৃতি ঘটলে শিশু সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে নাও হতে পারে। সুতরাং শিশুর জন্মের শুরু থেকেই রিকেটস রোগ রোধ করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

মনে রাখবেন রিকেটস রোগ এক ধরনের অভিশাপ। সুতরাং এটিকে অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই।

Similar Posts