কফি: মানবদেহের জন্য বিস্ময়কর এক পানীয়!

আমাদের কাছে খুব সহজলভ্য একটি পানীয়, যা প্রতিদিন এক কাপ করে পান করলে আপনি আরো সুস্থভাবে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারবেন। কি সেই পানীয়? কফি!

কফি আমাদের কাছে খুবই সহজলভ্য এবং অনেকেরই খুব প্রিয় একটি পানীয়। বর্তমান বিশ্বে কফির চাহিদা রয়েছে তুঙ্গে। নর্থ আমেরিকায় কফির ভোক্তা সবচেয়ে বেশি। অথচ কফির এই জনপ্রিয়তা পাওয়ার রাস্তাটা ছিলো খুব কঠিন। ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা শুরুতে কফিপানের তীব্র বিরোধিতা করেছিলো। তারা কফিকে ‘শয়তানের পানীয়’ আখ্যা দিয়েছিলো। এর অনেক পরে নারীবাদীরাও এই পানীয়কে ‘নোংরা গন্ধযুক্ত কাদাপানি’ বলা শুরু করেছিলো।

কফির কার্যকারিতা:

শুরু থেকেই তুমুল বিরোধিতার মুখে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠা এই পানীয়ের গুনাগুন দেখে নেই চলুন।

  • গবেষকরা বলছেন, ক্যাফেইনযুক্ত অথবা ক্যাফেইনবিহীন কফি প্রতিদিন পান করলে আপনার মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ২০% কমে যাবে!
  • যে প্রতিদিন অন্তত এক কাপ কফি পান করে, তার আয়ু বৃদ্ধি পায় এবং ডায়াবেটিস, কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা, হার্টের অসুখ, স্ট্রোক এবং ক্যান্সারে মৃত্যুর হার কমে যায়।
  • এক স্টাডিতে পাওয়া গেছে, দিনে অন্তত এক কাপ কফি পান করা ব্যাক্তিদের দ্রুত মৃত্যুর হার একদমই কফি পান না করা ব্যক্তিদের থেকে ১২% কম! উপরন্তু, যারা দুই বা তিন কাপ পান করে তাদের ক্ষেত্রে দ্রুত মৃত্যুর হার ১৮% কম!

এই গবেষণাটি করা হয়েছে Dr Veronica Setiawan এই অধীনে। উনি বলেন,

কফিপান আপনার আয়ু বাড়াবে এটা সরাসরি আমরা বলতে না পারলেও এর সাথে বেশ সম্পৃক্ততা পেয়েছি। আপনি যদি নিয়মিত কফিপান করে থাকেন তাহলে এটা ধরে রাখুন। আর যদি পান না করেন তাহলে খুব দ্রুত শুরু করে দেয়া উচিত।

এই স্টাডিতে এক লক্ষ পঁচাশি হাজারের বেশি ৪৫-৭৫ বছরের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে যুক্ত করা হয়েছে এবং তাদেরকে ১৬ বছর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

কফি-এর গুণাবলি বিশ্লেষণ করছেন Dr Veronica Setiawan
Dr Veronica Setiawan

Dr Setiwan বলেন,

এই ধরনের গবেষণা এত ব্যাপক আকারে আগে কখনো হয়নি। আমরা এই স্টাডিতে বিভিন্ন লাইফস্টাইলের মানুষ যুক্ত করেছি।

স্টাডিতে সবার ক্ষেত্রে প্রায় একই ধরনের ফলাফলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সাদা, আফ্রিকান-আমেরিকান, লাতিন কিংবা এশিয়া, সবার জন্যই কফি অত্যন্ত উপকারী।

তবে কফি মোটামুটি ঠান্ডা অবস্থায় খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন(WHO)। যেকোনো পানীয়ই অত্যদিক গরম অবস্থায় খেলে খাদ্যনালীর ক্যান্সার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।

কফি হচ্ছে ফেনোলিক কম্পাউন্ডের একটা ভালো উৎস যেটা এন্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি করে এবং এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরি।

আগের স্টাডিগুলোতেও দেখা গিয়েছে, কফিপান ক্যান্সার, দুই ধরনের ডায়াবেটিস এবং লিভার ডিজিজের ঝুঁকি কমায়।

এই স্টাডি থেকে এটা জানা যায়নি কফি কেন এত স্পেশাল কিংবা স্পেসিফিকলি কফির কোন উপাদান এটাকে এত কার্যকরি করেছে। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, কফি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারি। তাই একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে এটি আমাদের পান করা উচিত।

কতটুকু পান করা উচিত:

প্রতিদিন চার কাপ পর্যন্ত কফিপান প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত।

ক্ষতিকর দিক:

অধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে যেকোনো জিনিসই আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তেমনি কফিও যদি অধিক পরিমাণে পান করা হয় তাহলে তা আমাদের শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। কফিতে ক্যাফেইন থাকে যা অত্যধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে ইনসমনিয়া, পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, উদ্বেগ এবং অস্থিরতা বাড়িয়ে তোলে। কফি যদি ফিল্টার করা না হয় তাহলে সেটা আমাদের শরীরে LDL কোলেস্টেরল নামক এক ধরনের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া ট্রাইগ্লিসারাইড নামক রক্তের একটা ফ্যাটের লেভেলও বাড়িয়ে ফেলে।

এজন্য প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের প্রতিদিন চার কাপের বেশি কফিপান কোনোভাবেই উচিত না।

Similar Posts

2 Comments

  1. আমার দেখা কিছু মানুষ আছে যারা কফি না খেয়ে ঘুমাতে পারে না, আবার কিছু আছে কফি খেলে ঘুম আসে না। সম্ভব হলে এটা নিয়ে একটু বিস্তারিত বলা যায় কি? আর গরম যেকোনো পানীয় পানে খাদ্যনালীর ক্যান্সারের ব্যাপারটা জানা ছিলো না। সাবধান হয়ে যাবে আশা করি সবাই। ধন্যবাদ।

    1. কফি বা চা আমার ঘুমের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেনা বলে আমার মনে হয়। বেশিরভাগ সময়ই আমি চাইলেই ঘুমিয়ে যেতে পারি। অনেকেই দেখি চা কফি খেলে ঘুমাতে পারেনা। ক্যাফেইন এর জন্য মস্তিষ্কের উদ্দীপনা বাড়ে। তাই এমনটা হওয়া খুব স্বাভাবিক। তবে কফি না খেলে ঘুম ধরেনা এটা আমার চোখে পড়েনি।
      আচ্ছা আপু আমি এটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবো একটু।

Comments are closed.