রসুনের আচার-সরিষার তেল দিয়ে এবং তেল ছাড়া
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি জাতিই রসুনকে বিভিন্ন রোগ নিরায়মের জন্য প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এতে প্রাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেলের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, থিয়ামিন, রিবোফ্লোভিন, ভিটামিন সি। এছাড়া রসুনে আয়োডিন, সালফার ও ক্লোরিনও রয়েছে অল্প পরিমানে। তাই রসুনের আচার বানানো থাকলে আপনি যে কোন সময় খেতে পারবেন। কিন্তু অনেকে তেল খেতে চান না। তাই তাদের জন্য তেল ছাড়া কীভাবে রসুনের আচার করবেন তার রেসিপি ও দিলাম। আপনারা চাইলে কাঁচা আম, জলপাই, আমলকী, তেঁতুল,- এর যে কোন একটি রসুনের সাথে দিতে পারেন। আপনার স্বাদ আর রুচির উপর নির্ভর করে পরিমান বাড়িয়ে কমিয়ে নিবেন।
রসুন কাঁচা খাওয়া ভালো নাকি আচার করে খেলেও এর উপকারিতা পাওয়া যাবে?
রসুন এর জীবাণুনাশক গুন্ রসুন এর আচার খেলে পাওয়া যাবেনা। তাপে রসুনের মূল রাসায়নিক উপাদান অ্যালিসিন-এর গুণাগুণ নষ্ট হয়। শুধুমাত্র কাঁচা রসুন খেলে সে উপকার গুলো পাওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে রসুন কে কুচি করে কেটে প্রায় ১৫ মিনিট খোলা জায়গায় ছড়িয়ে রেখে তারপর খেতে হবে। রসুনের কোয়া কাটার পর যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তাতে, এর অ্যালিসিন সহজে হজম হতে সুবিধা হয়। কিন্তু রসুনের আচার করলে এর বেশির ভাগ গুন্ কিছুটা হলেও পাওয়া যাবে- যেমন রক্ত চলাচল বৃদ্ধি, হজম শক্তি বৃদ্ধি , রক্ত চাপ কমানো ইত্যাদি। হার্ট অ্যাটাক এড়াতে এর জুড়ি মেলা ভার। এমনকি সাধারণ সর্দি-কাশি, ছত্রাক সংক্রমণ ও ডায়েরিয়া সারাতেও কাজে দেয় রসুন। এছাড়া অস্টিওআর্থারাইটিস, ডায়াবিটিস এবং প্রস্টেট সম্প্রসারণ রোধ করতে রসুন কাজ করে।
রসুনের আচার বানাতে যা প্রয়োজন (সরিষার তেল দিয়ে)
রসুন– দুই কেজি
সরিষাবাটা– ২/৩ কাপ
আদা বাটা– ২ অথবা ৩ টে চামচ
আস্ত পাঁচফোড়ন– ৩ চা চামচ
হলুদ,মরিচ গুঁড়া–দুই চা চামচ করে (ভাজা শুকনা মরিচ গুঁড়া পরিমাণ মতো দিতে পারেন গুঁড়া মরিচের পরিবর্তে)
ভিনেগার– দেড় কাপ
সরিষার তেল– তিন কাপ
চিনি ও লবণ– স্বাদমতো
যেভাবে করবেনঃ
১। প্রথমে রসুনের কোষ গুলো আলাদা করে ছিলে নিন।
১। আদা ও সরিষাবাটা অল্প ভিনেগার দিয়ে গুলিয়ে রাখুন।
২। হাঁড়িতে তেল দিয়ে কুসুম গরম হলে পাঁচফোড়ন দিয়ে চুলা থেকে হাঁড়ি নামিয়ে নিন।
৩। এইবার আদা-সরিষা বাটার মিশ্রণ ও হলুদ-মরিচ গুঁড়া ভালোভাবে তেলে মিশিয়ে রসুন দিয়ে আবার চুলায় বসান।
৪। বাকি ভিনেগার মিশিয়ে ঢাকনা দিয়ে ১০-১৫ মিনিট রান্না করুন।
৫। স্বাদমতো চিনি ও লবণ মেশান।
৬। ভিনেগার শুকিয়ে তেল ছেড়ে আসলে এবং রসুন সিদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে নিন।
৭। ঠান্ডা হলে পরিষ্কার শুকনো কাচের বয়ামে সংরক্ষণ করুন
৮। খিচুড়ি, পোলাউ, ভাতের সাথে পরিবেশন করতে পারবেন।
তেল ছাড়া রসুনের আচার বানাতে যা প্রয়োজনঃ
রসুন ৫০০ গ্রাম
পানি ১/৩ এক কাপ
ভিনেগার ১/৩ কাপ
মধু ৭ থেকে ৮ টেবিল চামচ
সরিষা গোটা ১ চা চামচ
শুকনা মরিচ বড় ২ অথবা ৩ টি
লবঙ্গ ৬ অথবা ৭ টা
তেজপাতা ২ টি
গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ
লবণ পরিমাণ মতো
তেল ছাড়া রসুনের আচার বানানোর প্রনালিঃ
১। চুলায় প্যান বসান। চুলার আগুন মাঝারি রাখুন।
২। পানি এবং ভিনেগার এক সাথে প্যানে দিন।
৩। বলক আসলে তাতে গোটা সরিষা, গোল মরিচ, তেজপাতা, শুকনো মরিচ, লবঙ্গ এবং লবণ দিন।
৪। কিছু সময় নিয়ে জ্বাল করুন।
৫। যখন পানি কমে আসবে তাতে ছিলে রাখা রসুনের কোষ গুলো দিয়ে দিন। এবং চুলা বন্ধ করে দিন।
৬। এভাবে প্রায় ১০ মিনিট রাখুন।
৭। তারপর রসুন মিশ্রণটি ছেঁকে নিন। পানিটা ফেলবেন না।
৬। তেজপাতা গুলো তুলে ফেলে দিন। একটি কাঁচের বয়ামে রসুন গুলো চামচ দিয়ে দিয়ে দিন।
৮। এবার ছাকা পানি গুলো ৫ থেকে ৬ মিনিট পর অর্থাৎ একটু ঠাণ্ডা হলে বয়ামে দিয়ে দিন।
৯। এবার বয়ামের ভিতর মধু ঢেলে দিন। চামচ দিয়ে ভালো ভাবে নেড়ে দিন।
১০। জারের মুখ বন্ধ করুন। ২ থেকে ৩ দিন পর এই আচার খাওয়ার উপযুক্ত হবে।
# আপনি চাইলে শুধু সিরকায় শুকনো মরিচ, লবণ দিয়ে কাশ্মীরি আচারের মতো করে রসুন কোয়া জ্বাল দিয়ে ঠাণ্ডা করে বয়ামে ভরতে পারেন। আমি মধু দিয়ে করি কারণ রসুন এবং মধুর মিশ্রণ খুব ভালো একটি প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক। সর্দি ,কাশি, হৃদরোগ, কোলেস্টরল সহ অন্যান্য রোগে খুব দ্রুত কাজ করে এটি। যারা কেমো থেরাপি নিচ্ছেন তাদের জন্য খুব ভালো কাজ করে।
One Comment
Comments are closed.